বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: ‘প্রিমিয়াম সুপার সভাপতি’। গেরুয়া শিবিরের অন্দরে অলিখিতভাবে সৃষ্টি হলো দু’টি নতুন পদ। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে যোগ দিতে আসা প্রতিনিধিরা আড়ালে আবডালে যাকে বলছেন ‘প্রিমিয়াম সুপার সভাপতি’। তাঁদের ব্যাখ্যা, প্রিমিয়াম সভাপতি হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। সুপার সভাপতি হলেন অমিত শাহ, আর সভাপতি হলেন জে পি নাড্ডা (JP Nadda)। খাতায়-কলমে নাড্ডা সভাপতি হলেও বকলমে দলের সংগঠনের রাশ হাতে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অতীতে অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সভাপতি মনোনয়নে এভাবে প্রভাব খাটাননি। এমনকী তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলকে আডবাণী (LK Advani) মতামত দিলেও প্রভাব খাটাতেন না। তাই নাড্ডার মাথায় বসে থাকা মোদি ও শাহকে আড়ালে প্রিমিয়াম ও সুপার সভাপতি বলছেন অনেকেই। আগামী লোকসভা ভোটে কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় গেরুয়া শিবিরের শীর্ষনেতৃত্ব। তাই নাড্ডার চেয়ার অক্ষত রেখে বকলমে ক্ষমতা নিজেদের হাতেই রাখলেন মোদি ও শাহ।
৯৯ সালে এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন অটলবিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee)। পাঁচবছরে তাঁর মেয়াদকালে চারজন সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। এঁরা হলেন, কুশাভাউ ঠাকরে, বঙ্গারু লক্ষ্মণ, জনা কৃষ্ণমূর্তি ও বেঙ্কাইয়া নায়ডু। সকলেই একবার মেয়াদ শেষে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। আর সেই পাঁচবছরে আটবার কর্মসমিতির বৈঠক হয়। প্রতি বৈঠকেই মঞ্চে আলো করে বসে থাকতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তখনও প্রস্তাবিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খসড়া দলিলের ওপর প্রতিনিধিদের আলোচনা শুনতেন বাজপেয়ী ও আডবানীরা। নিজেদের বক্তৃতার সময় মতামতও দিতেন। কিন্তু এখন যেভাবে সংগঠনের ওপর প্রভাব খাটানোর রেওয়াজ চলছে, তখন তা ছিল না বলে জানান প্রবীণ এক প্রতিনিধি। প্রতিনিধিদের একাংশের মতে, তখন বাজপেয়ী, আডবাণী, বেঙ্কাইয়া নায়ডু বা মুরলি মনোহর যোশীরা চিরকাল ক্ষমতায় থাকার বাসনা নিয়ে সরকার বা দল চালাতেন না। সরকার ও সংগঠন আলাদা করে দেখতেন। ফলে তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা স্বাধীনভাবে সংগঠন পরিচালনা করতেন। এখন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। সংগঠনে গালভরা পদ থাকলেও মোদি ও শাহদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। ফলে সরকারের পাশাপাশি সংগঠন পরিচালনাতেও একনায়কতন্ত্রের বিকাশ হচ্ছে।
দলে যে মোদি ও শাহই ছড়ি ঘোরাচ্ছেন জাতীয় কর্মসমিতি বৈঠকস্থল ঘুরলেই তা সহজেই বোঝা যায়। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সর্বভারতীয় সভাপতির প্রাসাদপোম অসংখ্য কাটআউট লাগান হলেও সেখানে ব্রাত্য দলের প্রবীণ নেতারা। বাজপেয়ী ও আডবানীদের ছবি খুঁজতে দূরবীনের প্রয়োজন হবে। আর অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজদের গোটা রাজধানী ঘুরেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.