সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নতুন বছরের শুরুতেই অসমে বিতর্ক। ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি) অর্থাৎ নাগরিকপঞ্জির প্রথম খসড়া প্রকাশ করল অসম।
৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে খসড়া প্রকাশের পরই তালিকায় নিজের নাম না থাকায় অসমের কাছাড় জেলার ময়নাপুরে আত্মহত্যা করলেন হানিফ খান নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। দীর্ঘ পঁচিশ বছর অসমের বাসিন্দা হানিফ ও তাঁর পরিবার। কিন্তু তালিকায় হানিফ-সহ পরিবারের কারও নাম নেই। এরপরেই আত্মহত্যা করেন তিনি। হানিফের মতোই নাগরিকপঞ্জিতে নাম নেই অসংখ্য বাঙালির। জানা গিয়েছে, প্রকাশিত খসড়া তালিকার প্রথম দফায় নাম নেই প্রায় দেড় কোটি অসমবাসীর। দীর্ঘ ৪০ বছর অসমে বাস করেও নাম বাদ পড়েছে বেশ কিছু বাঙালি পরিবারের। উল্লেখযোগ্যভাবে অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)-র উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যের পরিবারের কারও নাম নেই নয়া তালিকায়। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ শরণার্থী অনুপ্রবেশ রুখতে আসুর হয়ে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু নাগরিকপঞ্জিতে নাম ওঠেনি তাঁর পরিবারের কোনও সদস্যের।
[মহিলাদের হজযাত্রা প্রসঙ্গে মোদিকে তীব্র আক্রমণ মুসলিম ল বোর্ডের]
এদিকে বহু বছর ধরে ফেরার আলফা জঙ্গি পরেশ বড়ুয়ার নাম রয়েছে নয়া নাগরিকপঞ্জির প্রথম দিকেই। তালিকাগুলি সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ও সেবা কেন্দ্রে দেখা যাবে। ১ জানুয়ারি সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এনসিআর কেন্দ্রে রাজ্যবাসীকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশ ও মায়ানমারের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের রুখতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। খসড়ার প্রথম তালিকায় ৩.২৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্যে ১.৯ কোটি নাগরিক জায়গা পেয়েছেন। নাগরিক তালিকায় জায়গা পাননি ১.৩৯ কোটি। এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শিলচর-সহ অসমের বিভিন্ন অংশ।
ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল শৈলেশ প্রকাশিত সোমবার জানান, নাগরিকপঞ্জির প্রথম খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যাঁদের নাম তালিকায় নেই, তাঁদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, সব নাগরিকের ক্ষেত্রে যাচাইকরণ পদ্ধতি এখনও চলছে। বংশপঞ্জিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই বলে জানান তিনি। সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের সময়সীমা জানা যায়নি, তবে কয়েক মাসের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হবে। এনআরসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানি চলতি বছরের এপ্রিলেই।
দেশের শীর্ষ আদালত এই কাজটির উপর নজর রাখছে বলেও উল্লেখ করেন সমুজ্জ্বল। ১৯৫১ সালের পর প্রথমবার নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছিল। অসমের প্রধান সমস্যা লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী, বহু বছর ধরে যারা বেআইনিভাবে রাজ্যে প্রবেশ করেছে, অথচ তাদের চিহ্নিত করা কঠিন। অবৈধ শরণার্থীদের চিহ্নিত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যেই দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে নাগরিকপঞ্জি তৈরি করছে অসম।
৬০ বছর পর প্রথম প্রকাশ্যে এসেছে এই তালিকাটি। রাজ্যের সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে (বিশেষ করে সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে) জারি করা হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। নাগরিকপঞ্জির আরও বিভিন্ন খসড়া প্রকাশ করবে অসম সরকার। সেই তালিকায় প্রথম তালিকায় নাম না ওঠা নাগরিকদের নাম থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন সরকারি আধিকারিকরা। অসমের ৪২০০ একর এলাকাজুড়ে প্রথম এই খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। মধ্য অসমের নগাঁও জেলার কাকির এক কৃষিজীবী নুরুল আলি জানান, পরিবারের সাত সদস্যের নাম ওঠায় তিনি খুশি। তবে তাঁর প্রতিবেশীদের কারও ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের উপর তাঁদের আস্থা রয়েছে। এটি সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া।
[গুলির লড়াই শেষে উদ্ধার তিন জঙ্গির মৃতদেহ, বদলার হুঁশিয়ারি রাজনাথের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.