সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সেনার প্যারা কমান্ডোদের গুলিতে নিরীহ গ্রামবাসীদের মৃত্যুতে উত্তপ্ত নাগাল্যান্ড। রাজ্যজুড়ে চলছে প্রতিবাদী মিছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী ও কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয়রা। বাতিল করা হয়েছে হর্নবিল উৎসব। এহেন পরিস্থিতিতে মন জেলার ওটিং গ্রামের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে নাগা শান্তি আলোচনা। এমনটাই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মহলের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, “এটা নাগাল্যান্ড পুলিশের অভিযান ছিল না। ঘটনার দায় স্থানীয় পুলিশ বা রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়ে ক্ষোভ প্রশমন করা যাবে না। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে মারাত্মক ভুলের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। ফলে আবারও নাগা জনগোষ্ঠী বনাম ভারত রাষ্ট্রের সংঘাতের তত্ত্ব জোরাল হবে। এর ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলির হাত সাময়িকভাবে হলেও শক্ত হবে। তবে কেন্দ্র যদি দ্রুত শক্ত হাতে ঘটনার মোকাবিলা করে তবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।”
নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, অসম ও মায়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে নাগা স্বাধীনভূমি বা ‘গ্রেটার নাগালিম’ গড়ার ডাক বহুদিনের। এই দাবিতে অনেক দিন ধরেই জঙ্গি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন (NSCN)৷ সংগঠনটি বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর মুইভা গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে কেন্দ্র। ২০১৫ সালে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটির সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে মোদি সরকার। কিন্তু সমস্ত আলোচনা থমকে আছে সংগঠনটির দু’টি দাবির উপর। সেগুলি হচ্ছে নাগাল্যান্ডের জন্য পৃথক পতাকা এবং পৃথক সংবিধান। যা কিছুতেই মানতে নারাজ দিল্লি।
কয়েকদিন আগেই ডিমাপুরে নাগা জঙ্গিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও নেইফু রিও। ওই বৈঠক সম্পর্কে বলতে গিয়ে অসমের (Assam) মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁকে উলফার (পরেশপন্থী) মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গেও আলোচনায় বসার সবুজ সংকেত দিয়েছেন। এনএসসিএন (আইএম)-এর প্রধান থুইংগালেং মুইভার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন হিমন্ত ও রিও। যদিও বৈঠকে ঠিক কী কথা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
বিগত কয়েকবছরে এনএসসিএন-এর বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে আলোচনার টেবিলে আনতে সক্ষম হয়েছে মোদি সরকার। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, খাঙ্গও কন্যাক ও নিকি সুমি গোষ্ঠী। এরা দু’জনেই একসময় আলোচনা বিরোধী গোষ্ঠী এনএসসিএন (খাপলাং)-এর সদস্য ছিল। খাপলাংয়ের মিলিটারি কমান্ডার থাকায় মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে নিকি সুমির যথেষ্ট দাপট রয়েছে। বলে রাখা ভাল, নাগাল্যান্ডে শান্তি ফেরাতে মুইভা গোষ্ঠী ছাড়াও NSCN (NK), NSCN(R), NSCN (K-Khango) and NSCN (Niki Sumi) গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু ওটিংয়ের ঘটনায় জনরোষের কথা মাথায় রেখে তারাও কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াবে। ফলে শান্তি আলোচনা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
সূত্রের খবর, মন জেলায় হওয়া ঘটনার জেরে নাগাল্যান্ডের ভারতপন্থী গোষ্ঠীগুলি চাপের মুখে পড়েছে। যেমন এনএসসিএন (খাপলাং)-এর আলোচনপন্থী ও কিতভি গোষ্ঠী বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে বাধ্য হবে। ফলে ফের স্বাধীন নাগাল্যান্ডের দাবি জোরাল হবে। যার প্রভাব পড়বে শান্তি আলোচনায়। ইতিমধ্যেই এক বিবৃতি জারি করে ওটিংয়ের ঘটনাকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এনএসসিএন (আইএম)। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতীয় সেনাবাহিনী এই ঘটনার দাগ কোনওদিন মুছতে পারবে না। প্রায় দুই দশক ধরে ইন্দো-নাগা শান্তি আলোচনা চললেও নাগাদের বিরুদ্ধে হিংসা থামছে না।”
বিবৃতি জারি করেছে ‘নাগা ন্যাশনাল পলিটিক্যাল গ্রুপ’। আলোচনাপন্থী নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চটির বক্তব্য, “ওটিংয়ে সেনাবাহিনীর কার্যকলাপ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর দেওয়া প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী। ইন্দো-নাগা শান্তি আলোচনা শেষ।” সব মিলিয়ে, নাগাভূমে শান্তির পথে আবারও তৈরি হয়েছে বিরাট বাধা। সেই বাধা কাটিয়ে কীভাবে ফিরবে শান্তি, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামিদিনে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.