সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চলমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার নিরিখে সম্প্রীতির বার্তা। দত্তক নেওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী সন্তানকে বিয়ে দিয়ে সম্প্রীতির নজির গড়ল মুসলিম পরিবার। শুধু বিয়ে দেওয়াই নয়। তাকে সন্তান বাৎসল্যেই লালনপালন করেছেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী বাবা মা। হিন্দু রীতি মেনেই সম্পন্ন হল বিয়ের আচার অনুষ্ঠান। ঘটনাটি হিমাচল প্রদেশের দেরাদুনের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত যখন ধর্মীয় হিংসায় জর্জরিত, তখন দেরাদুনের মুসলিম পরিবারটি যেন মরুভূমিতে একখণ্ড মরুদ্যান রচনা করল। মানবিক ভূমিকা পালন করে সম্প্রীতির নজির গড়লেন মইনউদ্দিন।
দেরাদুনের এই বাসিন্দা ১২ বছর আগে রাকেশ রাস্তোগীকে দত্তক নেন। রাকেশের বাবা-মা কেউই ছিলেন না। দত্তক নেওয়ার পর একদিনের জন্যেও রাকেশের যত্নের কোনও ত্রুটি হতে দেননি ওই মুসলিম দম্পতি। বাড়ির আর পাঁচটি ছেলেমেয়ের সঙ্গেই পড়াশোনা শিখেছে রাকেশ। একই সঙ্গে রীতি মেনে তার জন্য দোল উৎসব, দিওয়ালির আয়োজন করেছেন মইনুদ্দিন ও কাউসর জাহান। কখনওই সাম্প্রদায়িকতার আঁচ লাগতে দেননি রাকেশের গায়ে। পড়াশোনা শেষে উপার্জনের জন্য কাজেরও বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। নাবালক রাকেশ আজ পূর্ণবয়স্ক যুবা। তাই বিয়ের আয়োজনেও কোনওরকম গড়িমসি করেনি মুসলিম পরিবারটি। হিন্দু রীতি মেনেই চলতি মাসের ন’তারিখে ছেলের বিয়ে দিলেন মইনউদ্দিন ও কাউসর জাহান। ঘরে এসেছে নতুন বউমা সোনি।
নিষ্ঠাভরে ছেলের বিয়ে দিতে পেরে খুশি মা কাউসর জাহান। নিজের মুখেই শোনালেন সেকথা, ‘রাকেশ আমার ছেলে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ও নিজেও আমায় ছাড়া থাকে না। ছেলের বিয়ে দিতে পেরে নিশ্চিন্ত হলাম।’
লাজুক মুখে খুশির কথা শোনালেন রাকেশও। ‘আমি গর্বিত ও ভাগ্যবান। ওঁরা আমার বাবা মা। নিজের বাবা মা থাকলেও আমরা জন্য এতটা নিশ্চই করত না। আমি তো অনাথ ছিলাম। সারাদিন কেঁদে কেঁদে ফিরতাম। ওঁরা আমাকে রাস্তা থেকে তুলে বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছেন। সন্তান স্নেহে লালন পালন করেছেন। পড়াশোনা শিখিয়ে কাজের বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। আমাকে বাড়ি দিয়েছেন। ভাইবোন দিয়েছেন। এবার বিয়েও দিয়ে দিলেন।’
এবাড়িতে আসার পর কখনওই একা লাগেনি রাকেশের। ভাইবোনদের সঙ্গেই আনন্দে যেমন ইদ পালন করেছেন। তেমনই দিওয়ালি, হোলি সবই কেটেছে আনন্দে। আর বিয়েও হল সাড়ম্বরে। পাত পেড়ে খেল নিমন্ত্রিতরা। মুসলিম বাবা মায়ের হিন্দু ছেলের বিয়ে সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ল দেশে। এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.