ছবি: প্রতীকী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্গাপুজো। এককথায় হিন্দু ধর্মের অনুষ্ঠান। আক্ষরিক অর্থ যাই হোক না কেন, এ বাংলা জানে এর মাহাত্ম। জানে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কীভাবে এ উৎসবে গা ভাসাতে হয়। তবে শুধু বাংলা বললেও ভুল হবে। মায়ের প্রতি ভালবাসা তো গোটা দেশের। আর সেই ভালবাসায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না কোনও ধর্মীয় রং। তাই তো হরিদেবপুরের এক মণ্ডপের শিল্পকর্মের কাঁচামাল তৈরি করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা। তাই তো মাকে সৃষ্টি করতে হাতে রং তুলি তুলে নেন অসমের মুসলিম শিল্পী। আর এখানেই সর্বাত্মকভাবে সার্থক দুর্গাপুজো। অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করতেই তো দেবীর অকালবোধন হয়েছিল। আর বাস্তবের মাটিতে সাম্প্রদায়িকতার দ্বন্দ্ব, মনের মলিনতা মুছিয়ে পরিবেশকে শুভ অনুভূতিতে মুড়ে দিতে এভাবেই সফল মা।
বছরের পর বছর মা দুর্গার মূর্তি বানিয়ে অসমের দরং এবং উদালগুড়ি জেলায় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এক মুসলিম মৃৎশিল্পী। দরংয়ের দলগাঁওয়ের বাসিন্দা হাসেম আলি। ছোটবেলায় অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু শিল্পের প্রতি টানটা চিরকালই ছিল। যদিও প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়নি কখনওই। তবে নিজের প্রতিভাকে মানুষের সামনে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখেছিলেন ছোট থেকেই। কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগে যা আজ সম্ভব হয়েছে। এখন তিনি অসমের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের অন্যতম। দু’বছর আগে রাস উৎসবে রাবণের মূর্তি বানিয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। এখন প্রতিমার পাশাপাশি তাঁর ভাবনায় সেজে উঠছে পুজোর মণ্ডপও। ৪৫ বছরের শিল্পী বলছেন, “স্থানীয় শিল্পী কালুমণি দে-র পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর কাজ দেখতাম। সেখান থেকেই আগ্রহ জন্মায়। তারপর নিজেও এ শিল্পে হাত লাগাই। যেদিন কালুমণিদা আমার কাজের প্রশংসা করলেন, সেদিন দারুণ আনন্দ হয়েছিল। ঈশ্বর প্রদত্ব এই প্রতিভা পেয়ে আমি ধন্য।”
নিয়ম করে নমাজও পড়েন আবার মায়ের মূর্তিও তৈরি করেন। এমন দৃষ্টান্ত অনুপ্রেরণা দেয় বাকি শিল্পীদেরও। সম্প্রীতির মুখ হতে পারার বিষয়টি ভালই উপভোগ করেন হাসেম আলি। বলছেন, “অনেকেই বলেন আমি সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এর চেয়ে বড় সম্মান আর কিছু হতে পারে না। আমার মতে সব ধর্মই এক। শুধু মানুষের নামগুলোই পালটে যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.