সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সন্তানকে কোলে নিয়ে ভিড় ট্রেনে দাঁড়িয়ে মা। স্ত্রীর অসুবিধা হচ্ছে দেখে আসনে বসে থাকা মহিলাদের খানিকটা সরে বসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন স্বামী। যাতে দু’বছরের মেয়েকে নিয়ে একটু বসতে পারেন স্ত্রী। কিন্তু সেই অনুরোধের যে এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে, তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি কল্যাণের বাসিন্দা সাগর মারকণ্ড। যাত্রীদের পিটুনিতে প্রাণ হারালেন তিনি। চূড়ান্ত অমানবিকতার সাক্ষী রইল এই মুম্বই।
কলকাতা থেকে মুম্বই- লোকাল ট্রেনে ভিড় সর্বত্রই। সেই ভিড় ঠেলেই প্রতিদিন সফর করেন হাজার হাজার মানুষ। একইভাবে ভিড় ট্রেনে চেপেই এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে পৌঁছতে সপরিবারে রওনা দিয়েছিলেন সাগর। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছনো হল না তাঁর। গণপিটুনিতেই মারা গেলেন ২৬ বছরের যুবক। ঘটনার নৃশংসতায় চমকে উঠছে গোটা দেশ।
বুধবার রাতে কল্যাণ থেকে মুম্বই-লাতুর-বিদর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন সাগর। স্ত্রী জ্যোতির কোলেই ছিল দু’বছরের দুধের শিশু। জেনারেল কামরায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। কোনওক্রমে এক কোণে দাঁড়িয়েছিলেন তিনজন। স্ত্রী যাতে সন্তানকে নিয়ে বসতে পারেন, তার জন্য সামনের আসনে থাকা মহিলাদের তিনি খানিকটা সরে বসতে বলেন। অনুরোধের সুরেই একটু অ্যাডজাস্ট করে বসতে বলেছিলেন। কিন্তু যাত্রীরা সে কথা কানে তোলেননি। উলটে সাগরকে কটূক্তি করতে থাকেন মহিলারা। তারপরই শুরু হয় বচসা। রেলওয়ের এসপি দীপক সাতোরি জানান, প্রথমে কথা কাটাকাটি আর তারপরই হাতাহাতি শুরু হয়। ১২ জন যাত্রী রীতিমতো চণ্ডাল মূর্তি ধারণ করেন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন ছ’জন মহিলা। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে সাগরকে মাটিতে ফেলে কিল-চড়-ঘুষি-লাথি মারতে থাকেন যাত্রীরা। উত্তেজিত যাত্রীদের কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চান জ্যোতি। একহাতে মেয়েকে সামলান আর অন্যহাতে মার থেকে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। অপ্রীতিকর অবস্থা দেখে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন জ্যোতি। কিন্তু নিষ্ঠুরতার চরম নিদর্শন তৈরি করে শেষমেশ সাগরকে মরার জন্য ছেড়ে দেন সকলে।
প্রায় এক ঘণ্টা এমনটা চলার পর দাউন্দ স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে ছুটে আসে রেল পুলিশ। সাগরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানেই বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনায় ছয় মহিলা ও তিন পুরুষ যাত্রীকে আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করার আগে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এমন অমানবিক ঘটনা শিরোনামে আসতেই শিউরে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.