সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেছে বেছে সংখ্যালঘু উন্নয়নে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা NGO গুলিরই কি বিদেশি অনুদান পাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার (BJP Government) ? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। উল্লেখ্য, যে-সব বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদেশি অনুদান পায়, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে তাদের বিদেশি অনুদান পাওয়ার ছাড়পত্র ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে গতকাল। কিন্তু সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মাদার টেরিজার মিশনারিজ অব চ্যারিটা-সহ ১২ হাজারের বেশি সংস্থা। যার একটা বড় অংশ সংখ্যালঘু উন্নয়নে কাজ করা এনজিও।
বাদ পড়াদের তালিকায় মিশনারিজ অব চ্যারিটি ছাড়াও রয়েছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, ইন্ডিয়া ইসলামিক কালচারাল সেন্টর, ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশানাল সেন্টার ফর আর্টস প্রভৃতি। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১-এ ছিল এফসিআরএ (Foreign Contribution Regulation Act 1976) ছাড়পত্র নবীকরণের শেষ দিন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার সংস্থার আর্জি খতিয়ে দেখে হয়েছে। ছাড়পত্রের মেয়াদ ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে সেই তালিকায় পড়েনি মিশনারিজ অব চ্যারিটি। ফলে চ্যারিটি তাদের বিদেশি অনুদানের জন্য নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর কোনও অর্থ নিতে পারবে না। সেই অর্থ খরচও করতে পারবে না। চ্যারিটি সূত্রে খবর, বর্তমান পরিস্থিতিতে সংস্থার বিদেশি অনুদানের অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ নিয়ে অবশেষে মুখ খুলল মিশনারিজ অফ চ্যারিটি, কী জানাল তারা?]
উল্লেখ্য চ্যারিটির ছাড়পত্র বাতিল হওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, কিছু বিরূপ তথ্য পাওয়ার পরেই অনুদানের ছাড়পত্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। কী সেই বিরূপ তথ্য, তা অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি। তবে গত সপ্তাহেই গুজরাতে মিশনারিজ অব চ্যারিটির একটি শিশু-কিশোরদের হোমের পরিচালকের বিরুদ্ধে জোর করে ধর্মান্তকরণের অভিযোগ এনেছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। অনেকেই মনে করছেন, ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জাননো হয়েছে, মিশনারিজ অফ চ্যারিটি বিদেশি অনুদানের ছাড়পত্রের পুনর্বিবেচনার আবেদন করেনি। অন্যদিকে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ছাড়পত্র পুনর্নবীকরণের আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে মিশনারিজ অব চ্যারিটির মতোই বিদেশি অনুদান পাওয়া যোগ্যতা হারিয়েছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, ইন্ডিয়া ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশানাল সেন্টার ফর আর্টসের মতো সংস্থাগুলি। অধিকাংশ সংস্থাই পিছিয়ে পড়া তথা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে থাকে। এখানেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, বেছে বেছে সংখ্যালঘু উন্নয়নের কাজ করা সংস্থাগুলিকে টার্গেট করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: মাদার টেরিজার মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘বন্ধ’ করল কেন্দ্র, গর্জে উঠলেন মমতা]
তবে টিউবারকিউলোসিস অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, লেপ্রসি মিশনের মতো সংস্থার বিদেশি অনুদানের ছাড়পত্রও বাতিল হয়েছে। এদের অনেকেরই অবশ্য মোদি সরকারের সঙ্গে তেমন বনিবনা নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতের ২২, ৭৬২টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদেশি অনুদান পেয়ে থাকে। সংস্থাগুলিকে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে ছাড়পত্র নিতে হয় নির্দিষ্ট সময় অন্তর। ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পুনর্নবীকরণের আবেদন না করায় ও আরও ৬ হাজারের বেশি সংস্থার বিদেশি অনুদানের আবেদন বাতিল হওয়ায়, সব মিলিয়ে ১২ হাজার সংস্থা বিদেশি অনুদানের যোগ্যতা হারাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.