ফাইল ছবি
বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হতেই হিন্দুত্ব নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা সংঘপ্রধান মোহন ভাগবতের। নাম না করে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই কিছু নেতা নিজেদের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বলে প্রচার করছেন। এঁদের থেকে সকলকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন তিনি। শুক্রবার পুণেতে সংঘের এক অনুষ্ঠানে রামমন্দিরের পরেই গেরুয়া শিবির যেভাবে মসজিদের নিচে মন্দির খোঁজার কাজ শুরু করেছে তাতে যে তিনি বিরক্ত, এদিন তাও গোপন করেননি ভাগবত।
সংসদ অধিবেশনে ভীমরাও আম্বেদকরকে বিজেপি কতটা সম্মান করে তা প্রমাণে মরিয়া ছিল বিজেপি। আর হিন্দুত্ব তো আছেই। বিজেপি নেতাদের এহেন মনোভাবের যে বিরোধী তিনি, এদিন নাম না করেও স্পষ্ট করেন ভাগবত। বলেন, “অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার পর দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ দেশজুড়ে মসজিদের নিচে মন্দির খোঁজা শুরু করেছেন। এই কাজ অত্যন্ত গর্হিত এবং সম্প্রীতি বিরোধী।” দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার ডাক দিয়ে ভাগবত বলেন, মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব যেমন ধর্মীয় সম্প্রীতির অনেক ক্ষতি করেছেন, আবার বাহাদুর শাহ জাফর ১৮৫৭ সালে গোহত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা মামলার রায়ে সেখানকার বিতর্কিত জমি রামমন্দির নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করার পর মোহন ভাগবত ঘোষণা করেছিলেন আরএসএস আর মন্দির-মসজিদ বিবাদে থাকবে না। বিশেষ কারণে রামমন্দির আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল সংঘ। দেখা যাচ্ছে তারপরও দেশের একাধিক জায়গায় হিন্দুত্ববাদীরা কোনও কোনও মসজিদকে অতীতের হিন্দুমন্দির দাবি করে সেগুলি সরিয়ে নেওয়ার দাবি তুলেছে। মামলার প্রেক্ষিতে একাধিক আদালত মসজিদ জরিপের আদেশ দিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে বারাণসী জ্ঞানবাপি, মথুরার শাহি ইদগা, সম্ভলের শাহি মসজিদ এবং রাজস্থানের আজমেঢ় শরিফের দরগা।
একের পর এক মসজিদ ঘিরে বিবাদ এবং আদালতের জরিপের নির্দেশ ঘিরে অশান্তির মুখে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করেছে সম্প্রতি। গত ১২ ডিসেম্বর শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, আদালত আপাতত এই ধরনের কোনও মামলা গ্রহণ করতে পারবে না। বর্তমান মামলায় রায়দানও স্থগিত রাখতে হবে। পুণের অনুষ্ঠানে সংঘপ্রধানের বক্তব্য তাতে নয়া মাত্রা যোগ করল। যদিও অনেকেই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ভাগবত এতদিন মুখ খোলেননি কেন। আরএসএস সূত্রে বলা হচ্ছে, সংঘপ্রধান আগেই মসজিদের নিচে মন্দির খোঁজার অভিযানের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তবে আরএসএস তাদের অনুমোদিত সংগঠনগুলির কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করে না। সংগঠনের অবস্থান তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় মাত্র। মসজিদকে মন্দির বলে দাবি করার অভিযান নিয়ে আরএসএস প্রধান বলেছেন, দেশের সংবিধানের শাসন আছে। কেউ ইচ্ছামতো যা কিছু দাবি করতে পারে না। তাঁর আরও বক্তব্য, ভারতকে বিশ্বগুরু হতে হলে সম্প্রীতি, সহাবস্থানের নজিরও তৈরি করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.