দেবশ্রী সিনহা, নয়াদিল্লি: দলিতদের পাশেই আছি। নির্বাচনী মরশুমে কার্যত এই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করল নরেন্দ্র মোদি সরকার।
হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা। গুজরাটের উনা থেকে শুরু করে দেশের অন্যত্র গো-রক্ষার নামে দলিতদের উপর তাণ্ডব। একের পর এক ঘটনায় নরেন্দ্র মোদি সরকারের গায়ে ‘দলিত-বিরোধী’ তকমা সেঁটে গিয়েছে। বিরোধীরা তো বটেই, মোদি জমানায় দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়ে গিয়েছে বলে সরব বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও। তাই সামাজিকভাবে বলিষ্ঠ পদক্ষেপের মাধ্যমে অসবর্ণ বিয়েতে উৎসাহ দেওয়ার আড়ালে নিজেদের ভাবমূর্তি ফেরাতে উদ্যোগ নিল মোদি সরকার। কেন্দ্র নির্দেশিকা জারি করেছে, দলিত পরিবারে বিয়ে করলেই এককালীন আড়াই লক্ষ টাকা অনুদান মিলবে। অনেকের মত, ইউপিএ আমলে শুরু হওয়া এই প্রকল্প নতুন মোড়কে পেশ করে তাক লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দল। লড়াইয়ে পিছনে ফেলতে চাইছে কংগ্রেসকে। কেড়ে নিতে চাইছে কংগ্রেসের ‘দলিত’ হাতিয়ারকে। ইদানীং গুজরাট নির্বাচনে দলিতরা তাদের সঙ্গে রয়েছে বলে দাবি করছে কংগ্রেস। এমনকী, দলিত নেতা জিগনেশ মেভানিও জানিয়েছেন তিনি বিজেপি বিরোধী, তাই কংগ্রেসের সঙ্গে।
অসবর্ণ বিয়েতে উৎসাহ দিতে ‘ডঃ আম্বেদকর স্কিম ফর সোশ্যাল ইন্টিগ্রেশন থ্রু ইন্টার-কাস্ট ম্যারেজ’ চালু করেছিলেন মনমোহন সিং। কিন্তু তাতে নবদম্পতির আয়ের ঊর্ধ্বসীমা ছিল বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ এর চেয়ে বেশি আয় করা ব্যক্তিরা অসবর্ণ দলিত বিয়ে করলেও এককালীন অনুদান পেতেন না। প্রকল্পের জনপ্রিয়তা বাড়াতে মোদি সরকার আয়ের সেই ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এবার থেকে আয় যা-ই হোক না কেন, দলিত বিয়ে করলেই নগদ টাকা পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের আরও অনেক শর্ত কেন্দ্র শিথিল করেছে। যেমন এতদিন শর্ত ছিল যে, বিয়েটা দম্পতির প্রথম বিবাহ হতে হবে। পাশাপাশি, হিন্দু বিবাহ আইনে তার নথিভুক্তি করাতে হবে। প্রস্তাব ছিল, বিয়ের এক বছরের মধ্যে যেন নথিভুক্তি সম্পূর্ণ করা হয়। সেই শর্তগুলি আপাতত শিথিল করা হয়েছে। তবে দু’টি নতুন নিয়ম চালু করছে সরকার। প্রথমত, নবদম্পতির আধার নম্বর জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়ত, তাঁদের আধার-যুক্ত যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত বিবরণ জমা দিতে হবে। না হলে প্রকল্পের সুবিধা মিলবে না।
সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, চালু হওয়ার পর থেকে তৃণমূলস্তরে এই প্রকল্প নিয়ে খুব একটা আগ্রহ তৈরি হয়নি। রিপোর্টে প্রকাশ, ২০১৪-১৫ বর্ষে ৫০০ জনকে এই সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে এককালীন অনুদান পেয়েছিলেন মাত্র পাঁচজন নবদম্পতি। শর্ত শিথিল করায় প্রকল্প নিয়ে উৎসাহ বাড়বে বলেই মন্ত্রক মনে করছে। কিন্তু গুজরাট নির্বাচনের আগে মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। দেশীয় রাজনীতিতে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী দলিত আন্দোলনের প্রধান মুখ। কিন্তু ভেমুলার আত্মহত্যার পর থেকেই দলিত ইস্যুতে অত্যন্ত সক্রিয় কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী। গুজরাট-রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে দলিতদের উপর অত্যাচার নিয়ে তিনি সরব হয়েছেন।
গুজরাটের আসন্ন নির্বাচনে দলিতদের একাংশের নেতৃত্ব কংগ্রেসের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাই শেষ মুহূর্তে ‘দলিত-বন্ধু’ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে বিজেপি এই চাল দিয়েছে বলে ধারণা। যাতে শুধু গুজরাট নয়, অন্য নির্বাচনেও কংগ্রেস দলিতদের ক্ষোভকে হাতিয়ার করতে না পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.