বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: জিতলে মোদি ম্যাজিক। হারলে দায় স্থানীয় নেতৃত্বের। এটাই রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল গেরুয়া শিবিরে। তাই জয় পেয়েও মোদি-শাহর ইচ্ছায় মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার অধরা হয় মধ্য প্রদেশে শিবরাজ সিং চৌহান, রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াদের। এবার পরাজয়ের দায় নিয়ে যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়তে হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। যোগীর উপর বুলডোজার চালানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে মোদি-শাহ জুটি। দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে যোগীকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করছে দলের একাংশ। এছাড়াও কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে জল্পনা। এর মধ্যে বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও আছেন বলে পদ্ম শিবির সূত্রে খবর।
নরেন্দ্র মোদি বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরলে শুধু অবিজেপি নয়, বিজেপিশাসিত বহু মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেবেন বলে প্রচারে বারে বারে বলেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। অর্ন্তবর্তী জামিনে মুক্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সবচেয়ে আগে গদি হারাবেন যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশে লোকসভা ভোটে বিজেপির লজ্জাজনক হারের পর এখন জেলবন্দি কেজরিওয়ালের কথাই পদ্ম শিবিরের অন্দরে মূল আলোচ্য। দু-বছর আগের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পর যোগীর নতুন ডাকনাম হয়েছে ‘বুলডোজার বাবা’। ছোটখাটো অন্যায়েও তাঁর প্রশাসন বুলডোজার পাঠিয়ে অভিযুক্তের ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা গড়ালেও যোগীকে টলানো যায়নি। এবার লোকসভা ভোটের মধ্যেও অব্যাহত ছিল যোগী প্রশাসনের বুলডোজার শাসন।
বিজেপির অন্দরের খবর, কেজরিওয়ালের কথা সত্য প্রমাণ করে যোগীর মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইতি পড়তে পারে খোদ মোদির বুলডোজারের ধাক্কায়। উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের সব ক’টিই এবার জয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল বিজেপি। প্রতি দফা ভোটের শেষেই রাজ্য বিজেপি এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী দলকে আশ্বস্ত করেন, দলের পরিকল্পনা মতোই সব এগিয়েছে। কিন্তু ফল হয়েছে উলটো। গতবার আশিটির মধ্য বিজেপি পেয়েছিল ৬২টি আসন। এবার তা কমে হয়েছে ৩৩। অন্যদিকে, প্রধান প্রতিপক্ষ সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৭টি আসন। যোগীর বিরুদ্ধে দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় অংশের অভিযোগ তিনি এসপি নেতা অখিলেশের নয়া জাত সমীকরণকে উপেক্ষা করেছেন। অখিলেশ পিডিএ অর্থাৎ পি-তে পিছড়া বা ওবিসি, ডি-তে দলিত বা তফসিলি জাতি এবং এ-তে অল্পসংখ্যক বা মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের যে নয়া সমীকরণ তৈরি করেন, তার মোকাবিলায় যোগী প্রশাসনিকভাব কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে দলে অভিযোগ উঠেছে। দলিত বা তফসিলি ভোটের সিংহভাগ সমাজবাদী পার্টির ঝুলিতে গিয়েছে। যার মধ্যে মায়াবতীর বিএসপি এবং বিজেপি, উভয় দলের ভোটই আছে। অখিলেশের পিডিএ এবারের ভোটে এতটাই সফল যে অযোধ্যা যে লোকসভার অন্তর্গত সেই ফৈজাবাদে বিজেপি হেরে গিয়েছে। যেখানে বিজেপির রাম রাজনীতির বিপরীতে অখিলেশের জাতের সমীকরণ বেশি প্রভাব ফেলেছে। উত্তরপ্রদেশে দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী যোগী ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দলীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা প্রমুখ দায়িত্বে ছিলেন। তবে মূল দায়িত্ব ছিল যোগীর। বিশেষ করে তীব্র গরমের কারণে প্রথম দুই দফায় কম ভোট পড়া সত্ত্বেও তাঁর প্রশাসন বুথে পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং মানুষকে বুথমুখী করতে বিশেষ তৎপরতা দেখাননি। রাজ্যের প্রায় এক কোটি পরিযায়ী শ্রমিককেও ভোটের সময় এলাকায় ফেরাতে তৎপর হয়নি যোগী প্রশাসন।
আবার বাংলায় সুকান্ত মজুমদার বা দিলীপ ঘোষরা প্রার্থী হওয়ায় নিজের কেন্দ্র নিয়ে অনেকটা সময় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। নিজেদের কেন্দ্রে ভোট মিটতেই অন্য কেন্দ্রে ঝাপিয়েছেন। তবে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যকেই বেশি গুরুত্ব দেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁর পছন্দের প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়। যেমন শুভেন্দুর আপত্তিতেই মেদিনীপুর থেকে বর্ধমানে চলে যেতে হয় দিলীপ ঘোষকে। মেদিনীপুরে মনোনয়ন দেওয়া হয় বিরোধী দলনেতার অত্যন্ত পছন্দের অগ্নিমিত্রা পলকে প্রার্থী করে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই সব ঘটনায় শুভেন্দুর ওপর অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা ও বি এল সন্তোষরা চটেছেন বলে জানা গিয়েছে। তাই তাঁর ওপরেও কোপ পড়তে পারে বলে সূত্রের খবর।
সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই খারাপ ফলের জন্য আঙুল উঠছে বেশি। বিজেপির অন্দরের খবর, নতুন সরকার শপথ নেওয়ার পর দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে উত্তরপ্রদেশ-সহ আরও কয়েকটি রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সরিয়ে দিতে পারেন মোদি-শাহ-নাড্ডা জুটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.