দিল্লিতে বিজেপির রাষ্ট্রীয় অধিবেশন। ছবি সোশাল মিডিয়া।
নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অযোধ্যা না গেলেও বিজেপির সর্বভারতীয় সম্মেলনে বহাল তবিয়তেই হাজির ছিলেন বিজেপির মার্গদর্শক মন্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলী মনোহর জোশী। তবে, দেখা যায়নি লালকৃষ্ণ আডবানীকে। নবতিপর জোশীকে এদিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পাশে বসে মনযোগ দিয়ে নাড্ডার ভাষণ শুনতেও দেখা গিয়েছে।
তবে, এদিন অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে এদিন তাঁর জায়গা হয়নি। বয়সজনিত কারণে আডবানী এবং জোশীকে রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে বারণ করেছিলেন ট্রাষ্টের প্রধান চম্পত রাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইচ্ছেতেই রাই সেই মন্তব্য করেছিলেন। কারণ প্রচারের সব আলো তাঁর দিকেই থাকুক, সেই হিসেব থেকেই রামমন্দির আন্দোলনের দুই পুরোধা অযোধ্যা গিয়ে প্রচারের আলো টেনে নিক, তা মোদি চাননি। এমনটাই রাজনৈতিক মহলে অভিযোগ উঠেছিল। এদিন অবশ্য নাড্ডা তাঁর ভাষণে আডবানীকে ভারতরত্ন দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তবে নাম নেননি জোশীর। মজার কথা হল, সন্দেশখালিতে গিয়ে দিন তিনেক আগে প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়া সুকান্ত মজুমদার এদিন সকালেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আর ছাড়া পেয়েই তিনি সোজা চলে গিয়েছেন দিল্লি। এত অসুস্থ সুকান্ত কোন জাদুবলে দিল্লি যাওয়ার ধকল সহ্য করে ফেললেন, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।
এদিন লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মকর্তাদের কার্যত মোদি-মন্ত্রই দিয়েছে বিজেপি। দু-দিনব্যাপী সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রথম দিনে উদ্বোধনী ভাষণে দলের সর্বভাররতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা আগামী লোকসভা নির্বাচনে কীভাবে চলতে হবে সেই বার্তায় প্রায় এক ঘণ্টার ভাষণে যা যা তুলে ধরেছেন, তার সারবত্তা ‘মোদি–মোদি–মোদি’। মোদি কী কী করেছেন তা মানুষের সামনে তুলে ধরুন। রামমন্দিরে সাফল্য মোদির, সেকথা মানুষকে জানান।
প্রায় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর লোকসভা নির্বাচনের মাসখানেক আগে বিজেপির তরফ থেকে সর্বভারতীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এদিন ওই সম্মেলনে দুটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়। একটি রাজনৈতিক প্রস্তাব এবং আরেকটি অন্য প্রস্তাব। এমনকী এই প্রথমবার বিজেপি এই সম্মেলনে যে প্রস্তাব পেশ করেছে তা ব্যক্তিবিশেষের (মোদির) নামে করা হয়েছে। এদিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যে রাজনৈতিক প্রস্তাবটি পেশ করেছেন তার শীর্ষক, ‘বিকশিত ভারত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গ্যারান্টি।’ সচরাচর ক্যাডার ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলিতে সংগঠন মজবুত হয়। কিন্তু ক্যাডারভিত্তির দল হওয়া সত্ত্বেও যেভাবে ব্যক্তিপুজো হচ্ছে, তাতে বিজেপি নিজের চরিত্র হারিয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, বর্তমানে বিজেপিতে এমন একটা সময় চলছে যেখানে সংগঠনের থেকে সরকারই বেশি শক্তিশালী। সরকার যা বলে দিচ্ছে সেই ধারাতেই চলছে সংগঠন। তাই সংগঠনের অন্দরে কোনও বিরোধিতার সুর নেই বিজেপিতে। এমনকী দলের অন্দরে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তাতেও আপত্তি জানানো তো দূর অস্ত, সকলকে কি একসুরে বলতে হবে তাও ঠিক করে দেয় সরকারই। আবার সরকারের অন্দরেও যা যা কাজ চলছে তার অধিকাংশই করা হচ্ছে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.