সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় বায়ুসেনার নিখোঁজ এএন-৩২ বিমানে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকার্যের জন্য যে বিপদ-সংকেতজ্ঞাপক যন্ত্র লাগানো ছিল তা গত ১৪ বছর ধরে ব্যবহারই হয়নি। সেখান থেকে কোনও সংকেত এখনও পাননি উদ্ধারকারীরা। তাই সেটির কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সংকেত না মেলায় এখনও ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমানটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিখোঁজ এএন-৩২ যুদ্ধবিমানে আট জন বিমানকর্মী এবং পাঁচ জন যাত্রী ছিলেন। সোমবার দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিটে অসমের যোরহাট থেকে অরুণাচল প্রদেশের মেছুকা বিমান অবতরণ ক্ষেত্রের উদ্দেশে উড়ে যায়। ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায় সেটি। একটার পরে আর তার সঙ্গে কোনওভাবে যোগাযোগ করা যায়নি।
নিখোঁজ বিমানটিতে ‘এসএআরবিই এইট’ নামে একটি সিঙ্গল এমারজেন্সি লোকেটর ট্রান্সমিটার লাগানো ছিল। যন্ত্রটির নির্মাতা ব্রিটিশ ফার্ম সিগনেচার ইন্ডাস্ট্রিজ। সোভিয়েত ইউনিয়ন নির্মিত বিমানটির কার্গো কক্ষে ওই যন্ত্র রাখা ছিল। ওই ট্রান্সমিটারটির কাজ ছিল ২০জি বা অভিকর্ষের ২০ গুণ বলের সম্মুখীন হলেই বিপদ সংকেত পাঠানো। ওই সংকেত ধরা পড়ার কথা কসপাস-সারসাট নামের এক উপগ্রহ-নির্ভর অনুসন্ধান ও উদ্ধারকার্যের জন্য নির্মিত ব্যবস্থাপনায়। এছাড়া বিপদ সংকেত ধরা পড়ার উপায় রয়েছে ২৪২ মেগাহার্ৎজের বিমান অনুসন্ধানী সংকেত পাঠিয়েও। আন্তর্জাতিক বিমান বিপদ সংকেত হিসাবে সেটিকেই ধরা হয়।
২০০৪ সালের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ‘এসএআরবিই ফাইভ, সিক্স, সেভেন এবং এইট-এর মডেলের বরাত ২০০৫-এর জানুয়ারি পর্যন্ত নেওয়া হবে। ডেলিভারি নিতে হবে সেই বছরের মধ্যেই। তবে ব্যাটারি, যন্ত্রাংশ, পরিষেবা তারপরেও পাওয়া যাবে।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘যে সংস্থাগুলি এই ধরনের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করবে তাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, ব্যক্তিগত আলোক-সংকেতজ্ঞাপক যন্ত্রের ক্ষেত্রে উপগ্রহ নজরদারি ব্যবস্থা ২০০৯-এর পর কার্যত সমস্যায় পড়ে যাবে।’ তাই এসএআরবিই এইট এমারজেন্সি লোকেটর ট্রান্সমিটারকে সরিয়ে এসএআরবিই জিটুআর-ইএলটি লাগানো হয়। যেটির বিক্রেতা ২০০৬ সালে স্থাপিত মার্কিন-ফরাসি সংস্থা ওরিলা।
ভারতীয় বায়ুসেনা আন্তোনভ বিমানটির ‘লঞ্চ কাস্টমার’ বা প্রারম্ভিক ক্রেতা ছিল। ১৯৮৬ সাল থেকেই তারা ওই ধরনের বিমান কিনতে শুরু করে। এই মুহূর্তে ভারতীয় বায়ুসেনা ১০৫টি এই ধরনের বিমান কেনার কথা ভাবছে, যাতে চিন সীমান্তের মতো উচ্চ এলাকায় জওয়ান ও সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে পারে। ২০০৯ সালে ভারত চুক্তি করে ইউক্রেনের সঙ্গে। এএন-৩২ বিমানগুলির কার্যক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে তাদের সাহায্য চাওয়া হয়। ৪৬টি উন্নত এএন-৩২ বিমানে দু’টি সমসাময়িক এমারজেন্সি লোকেটর ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছে। যেগুলি অরুণাচলের উদ্দেশে যাত্রা করা বিমানের ট্রান্সমিটারটির থেকে উন্নত। নিখোঁজ এএন-৩২টির যন্ত্রাংশের উন্নতিসাধন করা হয়নি।
সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কে প্রাথমিক রিপোর্ট সত্ত্বেও বিমানটির কোনও চিহ্ন এখনও মেলেনি। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর ভারতীয় বায়ুসেনা, নৌবাহিনী, পদাতিক বাহিনী, ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ নানাভাবে বিমানটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। ভারতীয় নৌবাহিনী পি-এইট উপকূল পরিদর্শনকারী বিমান নিয়ে সন্ধান চালাচ্ছে। ওই বিমানে শক্তিশালী রেডার, ইনফ্রা রেড এবং ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল সেন্সর রয়েছে। যার সাহায্যে পাহাড়ি এলাকা বা ঘন জঙ্গলের আড়ালে থাকলেও ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করা সম্ভব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.