গৌতম ব্রহ্ম, পাটনা: গ্লাসটা একই আছে, বদলেছে শুধু পানীয়র স্বাদ। মদ ছেড়ে এখন দুধে মজেছে বিহারবাসী!
অন্যবার ভোট এগিয়ে এলেই লালু-নীতীশের রাজ্যে দেদার বিক্রি বাড়ত মদের। এবার চিত্র পালটেছে। নির্বাচন শুরু হতে বাকি আর পাঁচদিন। অথচ মদের দেখা নাই। উলটে হু হু করে বাড়ছে পুষ্টি, গুণে ভরপুর দুধের বিক্রি। মদের বোতল ‘ঘুষ’ দিয়ে ভোট কেনার রাজনীতির জন্য অতি পরিচিত বিহার। নির্বাচন কমিশনের নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গরিব ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে দেদার মদ বিলি করার জন্য বহু অভিযোগ উঠত বিহারের রাজনীতিবিদদের দিকে। কিন্তু ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার রাজ্যে ‘শরাব বন্দি’ আইন কার্যকর করার পরেই বদলে গিয়েছে বিহারের চালচিত্র। তার জেরেই এই লোকসভায় মদ ঘুষ দিয়ে বিহারে ভোট কেনাবেচার ‘সংস্কৃতি’ বন্ধ হয়ে গেল।
আর মদ বিক্রি বন্ধ হতেই এক ধাক্কায় দুধ বিক্রি বেড়ে গিয়েছে ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে পথ দুর্ঘটনা কমেছে ৯২ শতাংশ। সব মিলিয়ে বিহারীদের জীবনযাত্রার মান ঊর্ধ্বমুখী। আর এই পরিবর্তনকেই ভোট প্রচারে হাতিয়ার করেছেন শাসকদল জেডিইউ। যদিও ‘মদমুক্ত বিহার’ ট্যাগলাইনকে নিছক ‘আই ওয়াশ’ বলে দাবি করছে বিরোধীরা। কংগ্রেস থেকে লালুপ্রসাদ-তেজস্বী যাদবের আরজেডি সব দলেরই দাবি, রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও দিব্যি বিক্রি হচ্ছে।
জেডিইউয়ের মুখপাত্র অজয় অলোক অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ কিছুটা সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “কালোবাজারি রাতারাতি বন্ধ হয়নি। ৬০০ টাকার বোতল ১২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই সব মদ কেনার প্রবণতা বড়লোকের মধ্যেই রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল গরিব ও মধ্যবিত্তের মদ্যপানের নেশা কমানো। তাতে নীতীশ সরকার প্রচুর সফল হয়েছে।” মদ বিক্রি কমায় হঠাৎ দুধের বিক্রি বাড়ল কেন? গয়ার এক মহিলা বললেন, “নিম্নবিত্ত পরিবারে মদের জন্য অপচয় কমতেই প্রধান সদস্যরা বাড়ির শিশুদের পুষ্টি, পড়াশোনার জন্য খরচ করতে পারছেন। তাঁরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানো, পোশাক কেনা, স্কুলে পড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছেন। মদ না খাওয়ায় সকলের স্বাস্থ্য়ের উন্নতিও হচ্ছে। কমছে মদ খেয়ে মারধর, পারিবারিক হিংসার ঘটনাও।” মদ্যপান ও বিক্রির অপরাধে ১ লক্ষ ১৮ হাজার মামলা হয়েছে। ৭২ হাজার জন গ্রেপ্তার হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, মদ খেয়ে প্রথমবার ধরা পড়লে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে সোজা জেলে। পুলিশের ধরপাকড় এড়াতে কেউ কেউ অবশ্য বেআইনিভাবে হোম ডেলিভারি করে বাড়িতে মদ আনিয়ে খান। এতে রাস্তায় মাতালদের ঘুরতে যেমন দেখা যাচ্ছে না, তেমনই মেয়েরাও সুরক্ষিত থাকছেন। প্রভাবশালীরাও মদ নিষিদ্ধ আইন থেকে রেয়াত পাচ্ছেন না। ছাপড়া বিধানসভার আরজেডি বিধায়ক মনোরমা দেবী তাঁর ছেলের জন্য নিজের বাড়িতে প্রচুর মদ রাখায় গ্রেপ্তার হন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.