সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পেটের দায় বড় জ্বালা। তার জন্য কত ঝক্কিই না সইতে হয়। কত অসাধ্যই না সাধন করার প্রয়োজন হয়। আপনজনদের ছেড়ে দিনের পর দিন বাইরে পড়ে থাকতে হয় অর্থ উপার্জনের জন্য। এসব যন্ত্রণা মুখ বুজেই এতকাল সহ্য করে এসেছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। কিন্তু একটা অদৃশ্য ভাইরাস তাঁদের জীবনকে একেবারে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। তনছন করে দিয়েছে বেঁচে থাকার ইচ্ছা। করুণ পরিস্থিতির শিকার হাজারো পরিযায়ী শ্রমিক। কেউ হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন, তো কেউ অভাবের টানে বেছে নিচ্ছেন আত্মহননের পথ। ঠিক যেমনটা করলেন গুরুগ্রামের এক পরিযায়ী শ্রমিক। বাড়ি ভাড়া না মেটাতে পারায় আত্মঘাতী হন তিনি।
রবিবার সকালে গুরুগ্রামের সেক্টর ১১-র এক ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সঙ্গে মেলে একটি সুইসাইড নোটও। শিবাজি নগর থানার পুলিশ জানায়, রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ ওই শ্রমিকের এক প্রতিবেশী তাঁকে ডাকতে যান। তখনই দেখেন মেঝেয় পড়ে রয়েছে শ্রমিকের দেহ। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন তিনি। ওই ঘর থেকে সুইসাইড নোটের পাশাপাশি উদ্ধার হয় একটি বিষের খালি প্যাকেটও। সুইসাইড নোটে মৃত শ্রমিক তাঁর বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ জানিয়েছেন। ভাড়া চেয়ে প্রায়ই নানা কটূ কথা শোনানো হত তাঁকে। সহ্যে বাঁধ ভাঙে রবিবার। আত্মহননের মতো মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নেন বছর পয়তাল্লিশের পরিযায়ী শ্রমিক। মৃতের অভিযোগ আরও দৃঢ় করেছে প্রতিবেশীর বয়ান। তিনি জানান, ভাড়া দেওয়ার জন্য প্রায়ই ওই শ্রমিককে চাপ দেওয়া হত।
পুলিশ সূত্রে খবর, ৩০ বছর আগেই পরিবার থেকে দূরে গুরুগ্রামে এসে থাকতে শুরু করেছিলেন ওই ব্যক্তি। বছর দশেক আগে একবার বাড়ি গিয়েছিলেন। ৬ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিতেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে মালিকের ৩০ হাজার টাকা বকেয়া মেটাতে পারেননি তিনি। লকডাউনের জেরে কাজও বন্ধ ছিল। বাড়িও ফেরা হয়নি। দিশেহারার পরিস্থিতিতে পড়েন। তারপরই হয়তো এই সিদ্ধান্ত নেন।
এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু আরও মর্মান্তিক হল, এমন পরিস্থিতিতে মৃতদেহ বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ারও অর্থ বা উপায় নেই পরিবারের কাছে। ওড়িশায় থাকা মৃতের পরিবার জানায়, তারা আপাতত কনটেনমেন্ট জোনের আওতায় রয়েছে। তাছাড়া গুরুগ্রাম গিয়ে মৃতদেহ আনার সামর্থ্যও নেই বাড়ির সদস্যদের। তাই আপাতত মর্গেই রয়েছে শ্রমিকের দেহ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.