ছবি: প্রতীকী।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে বন্ধুর কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ এক পরিযায়ী শ্রমিকের। মধ্যপ্রদেশ থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন এই যুবক। গন্তব্য ছিল উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু পথেই শেষ হয়ে গেল তাঁর বাড়ি ফেরার স্বপ্ন।
পকেটে কানাকড়ি নেই। শেষ সম্বলটুকু যা ছিল সবই লকডাউনের দুমাসে শেষ হয়ে গেছে। তবে ভিন রাজ্যে কাজ ও অর্থের লোভে পড়ে থাকা এখন অর্থহীন। তাই বাড়ি ফিরতেই হবে। এই জেদকে সম্বল করে মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী (Shibpuri) থেকে হাঁটতে শুরু করেন বছর ২৪-এর এই যুবক, নাম অমৃত। চড়া রোদে বাড়ি ফেরার অদম্য ইচ্ছা থাকলে শরীর সঙ্গ ছেড়ে দেয়। প্রখর রোদে ক্রমেই ক্ষীণ হতে থাকে তাঁর শরীর। একসময় ক্লান্ত হয়ে তপ্ত রাস্তায় অমৃত শুয়ে পড়লেন এক বন্ধুর কোলে মাথা দিয়ে। আর সেখানেই নীভে গেল তাঁর সমস্ত আশা-আকাঙ্খা। পরে পুলিশের সহায়তায় এই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। জানা যায় গুজরাটের সুরাটে কাজ করতেন এই যুবক। সেখানের বাকি পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্য রওনা দেন তিনি। ৪ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ট্রাকে চেপে ফিরছিলেন অমৃত। মাঝপথে হঠাৎ অসুস্থবোধ করেন। তাই মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীর কাছে তাঁকে ট্রাক থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। অমৃতকে ট্রাক থেকে নেমে যেতে দেখে সঙ্গ ছাড়েননি বন্ধু ইয়াকুব। তিনিও নেমে পড়েন ট্রাক থেকে। এরপর শুরু হয় দুই বন্ধুর পথচলা। সেখান থেকেই হাঁটতে শুরু করলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন অমৃত। তখন বন্ধু ইয়াকুবের কোলেই মাথা রেখে রাস্তায় শুয়ে পড়েন অমৃত। বন্ধুকে ক্রমশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন ইয়াকুব। কিন্তু কেউ গাড়ি থামায় না। রাস্তায় চলার পথে এক স্থানীয় সেই ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করায় তৎখনাত তা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর খবর পেয়ে শিবপুরী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ জানান, “আমরা গিয়ে জানতে পারি অমৃতের জ্বর হয়েছে। ও রাস্তায় বমি করতে শুরু করে। আমাদের মনে হয় ও প্রচন্ড রোদে হেঁটে আসার ফলেই হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে ওঁর করোনা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার পরেই জানা যাবে।”
পুলিশের সহায়তায় অমৃতকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তবে ইয়াকুবকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তার করোনা পরীক্ষা করা হবে জানায় শিবপুরী থানার পুলিশ। এভাবেই করোনার জেরে সমাপ্তি হয় ইয়াকুব ও অমৃতের বন্ধুত্বের। অমৃতের মত বাড়ি ফিরতে গিয়ে নিত্যদিন প্রাণ হারাচ্ছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিকরা। কেউই হয়তো জানেন না যে কবে শেষ হবে তাদের পথচলা। কী হবে তাদের ভবিষ্যত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.