ছবি: প্রতীকী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গণতন্ত্রের এই বিশাল উৎসবে অংশ নেওয়া থেকে কোনও একজনও বাদ যাক, চায় না নির্বাচন কমিশন৷ তাই বিশেষভাবে সক্ষম ভোটারদের জন্য আলাদা করে ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছে এবার৷ বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের জন্য তৈরি হয়েছে পৃথক বুথ৷ এই তালিকা থেকে এবার বাদ গেলেন না মানসিক হাসপাতালের রোগীরাও৷ চেন্নাইতে অন্তত ১৫০ জন মানসিক রোগী প্রয়োগ করলেন তাঁদের ভোটাধিকার৷ সম্ভবত দেশের মধ্যে এমন ঘটনা এই প্রথম৷
চেন্নাইয়ের কিলপকে ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল ভোটগ্রহণ কেন্দ্র৷ লাইনে দাঁড়িয়ে সেখানে এবার একে একে ভোট দিলেন ১৫৬ জন রোগী, যার মধ্যে ৫৬ জন মহিলা ভোটার৷ এটি সেন্ট্রাল চেন্নাই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত৷ এখানে মূলত ত্রিমুখী লড়াই৷ ডিএমকে-র হেভিওয়েট প্রার্থী দয়ানিধি মারান, এডিএমকে-বিজেপির জোট প্রার্থী স্যাম পল এবং কমল হাসানের দল মাক্কাল-নিধি-মাইয়ামের প্রার্থী কামিলা নাসের৷ বৃহস্পতিবার আঙুলে কালি লাগানোর পর আইএমএইচ-এর রোগীদের মুখে এক অন্য হাসি৷
৩৮ বছরের এক যুবক, যিনি স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৭ বছর ধরে এখানে ভরতি, তিনি বলছেন, ‘ভোট দিতে গিয়ে আমার ২০০১ সালের কথা মনে পড়ে গেল৷ সেবারই আমি শেষ ভোট দিয়েছিলাম৷ ১৮ বছর পর আবার নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করছি৷ আজ নিজেকে একেবারে যোগ্য নাগরিক মনে হচ্ছে৷ খুব খুশি৷’ তাঁদের কথা ভেবে যে আলাদা করে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে ইনস্টিটিউটের মধ্যেই, তার জন্য কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওই যুবক৷ আরেকজনের কথায়, ‘বেশিরভাগ সময়টাই তো আমরা নিজেদের ওয়ার্ডে থাকি৷ এবার বেরিয়ে একটা কাজের মতো কাজ করলাম৷ সরকারের উচিত আমাদের মতো মানুষজনকেও এভাবে ভোটদানের সুযোগ করে দেওয়া৷ আমি আশা করি ২০২১-এ বিধানসভা ভোটও দিতে পারব৷’
ইনস্টিটিউট এফ মেন্টাল হেলথের ডিরেক্টর পি পূর্ণচন্দ্রিকা বলছেন, ‘দেশে এই প্রথম মানসিক রোগীদের জন্য আলাদা করে বুথ তৈরি করে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হল এবং তা আমাদের ইনস্টিটিউটের মধ্যেই৷’ তবে এর প্রস্তুতি হিসেবে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷ পূর্ণচন্দ্রিকা জানাচ্ছেন, ‘আমরা এই ভোটারদের ভোট দেওয়ার পদ্ধতি শিখিয়েছি অনেকদিন ধরে৷ তারও আগে ভাষা সংক্রান্ত সমস্যা কাটানো এবং কীভাবে ভেবেচিন্তে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে, তাও বুঝিয়েছি৷ তারপর পরীক্ষা করে দেখেছি, এঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না৷ তাতে ১৫৬ জনই পাশ করে গিয়েছেন৷ এমন সাফল্য আমরা নিজেরাও ভাবতে পারি না৷ এরপরই কমিশনকে বলি, এঁরা সকলে ভোট দেওয়ার যোগ্য৷ ওঁদের জন্য যেন আলাদা ব্যবস্থা করা হয়৷ বেঙ্গালুরু এবং কলকাতার মেন্টাল হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারগুলিতেও মানসিকভাবে অসুস্থ ভোটারদের জন্য আলাদা ভোটকেন্দ্র হওয়ার কথা৷ যাদের চিন্তাভাবনায় অসামঞ্জস্য দেখে নাগরিক সমাজ থেকে দূরে, মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাঁরাও যে একইরকমভাবে দেশের সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝে নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.