ফাইল ছবি।
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: দুর্নীতি ও বেকারত্বের মতো দু’টি জ্বলন্ত ইসুকে সামনে রেখে মেঘালয়ে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ৬০ আসনের মধ্যে দলের ৫২ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটের দিনক্ষণ সেখানে এখনও ঘোষণা হয়নি। সে অর্থে ভিনরাজ্যে ভোট ঘোষণার আগেই দলের প্রার্থী ঘোষণা এক কথায় নজিরবিহীন। ভোটের মুখে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মেঘালয় সফরে যেতে পারেন বলে সূত্রের খবর। যাবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
ত্রিপুরা ছাড়াও উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের বিধানসভা ভোটেও তারা লড়বে বলে জানিয়েছিল। নিয়মমতো মার্চের মধ্যেই সে রাজ্যে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। শুক্রবার তাকে সামনে রেখেই মেঘালয়ে (Meghalaya) প্রথম দফায় প্রার্থিতালিকা ঘোষণা বঙ্গের শাসকদলের। বাকি ৮টি আসনেও প্রার্থী দ্রুত ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা মুকুল সাংমা ও রাজ্য সভাপতি চার্লস পিংরোপ।
প্রথম দফার তালিকায় প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান ৮ বিধায়ক ও ৭ জন এমডিসিকে তেইশের বিধানসভা ভোটে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। বাকিগুলিতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে স্থানীয় আবেগকে। মেঘালয়ে রাজ্য সরকারের নিচে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলও রয়েছে। তাঁদের মধ্যেই ৭ জনকে বিধানসভা ভোটে টিকিট দেওয়া হয়েছে। বিধানসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা মুকুল সাংমা তার মধ্যে তাঁর বর্তমান কেন্দ্র সংসাকের পাশাপাশি তিকরিকিল্লা কেন্দ্র থেকেও লড়বেন। মহিলা প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন।
গোয়ার পাশাপাশি উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে পাখির চোখ করে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে লড়াইয়ে পরপর এগিয়েছে তৃণমূল। প্রতিটি রাজ্যে নিজে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলংয়ে সভা করেছেন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে গোয়া, ত্রিপুরা ও মেঘালয় পরপর এই তিন রাজ্যে সংগঠন বিস্তারের কাজ শুরু করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়ায় তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করা থেকে, ত্রিপুরায় পরপর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে গিয়েছে তৃণমূল। অসমেও সংগঠন বিস্তারের কাজ করছে। তার মধ্যেই মেঘালয়ের মতো রাজ্যে সরাসরি বিরোধী দলের ভূমিকায়। ফলে জাতীয় ক্ষেত্রে একে একে উত্থান।
এর মধ্যেই ভোট ঘোষণার আগে মেঘালয়ে প্রার্থী ঘোষণা। যা নিয়ে সে রাজ্যের ইনচার্জ বাংলার মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, ‘‘আমরা ভোটের জন্য প্রস্তুত। আমরা নিশ্চিত যে, কারা জয়ী হতে পারে। তাই ভোট ঘোষণার আগে প্রার্থী ঘোষণা। মেঘালয়ে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে মানুষ। নেত্রী নিজে গোটা প্রক্রিয়াটা দেখছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাতকলমে সব করছেন। আমরা আশাবাদী যে, মেঘালয়ের মানুষের আশির্বাদ আমরা পাব। তৃণমূল সেখানে সরকার গড়ে দলকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করবে।’’ ১৫ জানুয়ারি মেঘালয় যাবে মানস।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের আবার বক্তব্য, ভোটের পর জয়ী বিরোধী বিধায়কদের ভাঙানোর খেলায় নামতে পারে বিজেপি। তার মোকাবিলা করতেই তৃণমূল আগেই প্রার্থী ঘোষণা করে নেমে পড়ল বড়ল বল মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সে রাজ্যে ২ লক্ষ সদস্যপদ হয়েছে তৃণমূলের। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ধাঁচে ‘উই’ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাতে আবেদন মিলেছে ১ লক্ষ। মানসবাবুর কথায়, ‘‘বিজেপি কী করতে পারে, সেসব নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমাদের মূল ভাবনার জায়গা মানুষ। মানুষ আমাদের সঙ্গে আসতে চাইছেন। বিশেষ করে মহিলারা আস্থা রাখছেন। তার জন্যই আমরাও মাঠে নেমে পড়েছি।’’ বিরোধী দলনেতা মুকুল সাংমার কথায়, ‘‘দুর্নীতি আর বেকারত্বের জ্বালা কী, মেঘালয়ের মানুষ জানেন। আমরা তাঁদের পাশে থেকে লড়াই করছি। রাজ্যের সরকার এই সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ।’’ আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে মেঘালয়ের সঙ্গে অসম সরকারকেও বিঁধেছেন তিনি। ত্রিপুরাতেও ভোট রয়েছে এ বছর। সেখানকার ভোট নিয়েও চলছে প্রস্তুতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.