সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: “আমি প্রতিবাদী। দেশকে সাম্প্রদায়িকদের হাতে ছেড়ে দেব না। তাই সংগ্রাম চালিয়ে যাই, যাব। এই কারণে বেছে বেছে আমায় টার্গেট করছে। কবে খুন না করে দেয় আমায়।” একটু আগেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটিয়ে এসেছেন। কিন্তু নর্থ অ্যাভিনিউর বাড়িতে বসে যখন কথাগুলি বলছিলেন, তখন তাঁর চোখে ছিল ক্ষোভের আগুন। দিন তিনেক আগে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তাঁর আচরণ জায়গা করে নিয়েছে দেশের প্রায় প্রতিটি সংবাদমাধ্যমে। বেশিরভাগই তাঁকে ভিলেন হিসাবে উল্লেখ করেছে।
সংবিধান ও সংসদীয় রীতিনীতি মেনে সেদিন কী হয়েছিল, এখনই তা বলতে চাইলেন না। তবে স্পষ্ট করে দিলেন, কেন তাঁকে বিজেপি সংসদের ভিতরে ও বাইরে এভাবে আক্রমণ করছে। তিনি আর কেউ নন। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাঁকে হত্যার ছকের কথা প্রকাশ করেই অবশ্য থামেননি তিনি। সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দিকে। তাঁকে বিচারব্যবস্থার কুলাঙ্গার উল্লেখ করে অভিযোগ করলেন, “কলেজিয়ামে বন্ধু থাকার সুবিধা নিয়ে বিচারপতির আসনে বসেছে। কত বিদ্যা আছে, সব জানি। দম থাকলে সুপ্রিম কোর্টে এসে মামলা লড়ে দেখাক।”
গত মঙ্গলবার বসেছিল ওয়াকফ সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকে চরমে ওঠে উত্তেজনা। রক্তাক্ত অবস্থায় বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় তৃণমূল সাংসদকে। আঙুলে পাঁচটি সেলাই করতে হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর হয় যে, কমিটির টেবিলে বোতল ভেঙে তাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন কল্যাণ। সেই সময়ই হাত কেটে যায়। কমিটির চেয়ারম্যান আবার দাবি করেন তাঁর দিকে বোতল ছুঁড়ে মেরেছেন কল্যাণ। এতেই ওঠে প্রশ্ন, তাহলে কল্যাণের হাত কাটল কীভাবে? সেদিন কী হয়েছিল, জানতে চেয়ে বারবার প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। যদিও নিয়মকে সম্মান করে এদিনও তা নিয়ে কিছু বললেন না। শুধু বললেন, “আমি প্রতিবাদি লোক। সাম্প্রদায়িক লোকের হাতে দেশ ছেড়ে দেব না। যারা অসাম্প্রদায়িক, তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাব। শরীরে রক্ত ঝড়েছে, দরকার হলে আরও রক্ত দেব।”
বৈঠকে অসংসদীয় আচরণ করায় তাঁর সাংসদপদ খারিজের দাবি তুলেছে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে কল্যাণ জানান, “কমিটিতে কী হয়েছে, সেই কথা কেউ বাইরে বলতে পারে না, যেই হোক। দেশের মানুষ সব দেখছে। আমি কোনওদিন কাউকে অপমান করিনি। তবে যাদের মানের জ্ঞানই নেই, তাদের আবার মান-অপমান কী?” সঙ্গে জুড়লেন, “আমি সংসদে পাঁচ মাসের বাচ্চা ছেলে নই। জানি কী করলে কী হতে পারে। ওরা কী করতে পারে করুক, দেখি না। আমার কণ্ঠরোধ করতে পারবে না। হিম্মত থাকলে প্রতিবাদের ভাষা বন্ধ করে দেখাক। আমায় বেছে বেছে টার্গেট করছে ওরা। কবে খুন না করে দেয় আমায়। ওদের একটা চক্রান্ত তো চলছেই।”
কথা প্রসঙ্গ ওঠে কমিটির অন্যতম সদস্য অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা। যাঁর ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, তাঁকে সেদিন কুকথা বলেছিলেন কল্যাণ। যদিও বৈঠকে উপস্থিত বিরোধী সাংসদদের দাবি আবার উলটো। প্রাক্তন বিচারপতি সম্পর্কে শ্রীরামপুর সাংসদের বক্তব্য, “ও কোনও উকিল নাকি? আইন জানে? দুই বন্ধু কলেজিয়ামে ছিল বলে বিচারপতি হয়েছে। আইনের জ্ঞান থাকলে সুপ্রিম কোর্টে এসে ভাল মামলায় ২০-২৫ মিনিট সওয়াল করুক। আইনের কতটা জ্ঞান দেখা যাবে। কবে আবে, আসুক। অনেক কথা মুখে বলা যায় না, কীভাবে বিচারপতি হয়েছে, আমরা সবাই জানি। সাংবিধানিক পয়েন্টে যে কোনও বিষয়ে আলোচনা করে দেখাক। সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করতে তো কোনও বাধা নেই। বেকার বসে না থেকে আদালতে এসে মামলা করে দেখাক। বিচারব্যবস্থার কুলাঙ্গার ছিল।”
সংসদীয় রীতিনীতি মেনে কল্যাণ বৈঠকে ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও সেদিন সংবাদমাধ্যমকে গোটা ঘটনা জানিয়েছিলেন চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল। তিনি বা বিজেপির কোনও সাংসদই এখনও পর্যন্ত কল্যাণের চোট সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার সৌজন্য দেখায়নি বলে অভিযোগ করলেন কল্যাণ। বললেন, “ওরা সৌজন্যের কথা বলে না? আমা আঙুলে পাঁচটা সেলাই পড়েছে। সেদিন কমিটি মিটিং রুম থেকে মেডিক্যাল রুম যেখানে গেছি, মেঝেতে রক্ত ছড়িয়েছিল। সেই রক্ত দেখে দেখেই শতাব্দী, অন্য বিরোধী সাংসদরা দেখা করতে এসেছিল। কমিটির চেয়ারম্যান বা বিজেপির কেউ আসেনি। অথচ তার ঠিক আগেরদিন সৌজন্য দেখিয়ে আমি চেয়ারম্যানের জন্মদিন পালন করেছি। ৭৫ বছর বয়স হয়ে গেল, এই তো সৌজন্য।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.