সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বি নেহি।’ এ যেন আনন্দ ছবির রাজেশ খান্না। জন্মদিনের ঠিক ছদিন আগেই তারার দেশে চলে গেলেন কপিল। বাইশেই থেমে গেল জীবন রথ। সেনা জওয়ান ক্যাপ্টেন কপিল কুণ্ডু। রবিবার উপত্যকার রাজৌরিতে পাক সেনার মিসাইলে শহিদ হয়েছেন তিনি। জন্মদিনের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন কপিল। তাই বাড়ি ফেরার ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু ফেরা হল না। মা ও ছোটবোনের সঙ্গে জন্মদিনের উদযাপন অধরাই থেকে গেল।
সেনা জওয়ানের মৃত্যুর পরে পরেই তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলটি নজরে এসেছে। জীবন নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মেনে চলতেন কপিল। মৃত্যু, রক্ত, গোলাবারুদের মাঝে থেকেও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। নিজেও জানতেন, যে কোনও দিন দেশ মাতৃকার সেবায় তাঁকে শহিদ হতে হবে। তাবলে হতাশায় ভুগতেন না। দার্শনিকের মতোই হিন্দি ছবি আনন্দের ডায়লগকে জীবনলিপি বানিয়েছিলেন। তাই তো তাঁর ফেসবুক পোস্টে জ্বলজ্বল করছে, “জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বি নেহি।” নিজেও কী শেষের সেদিনের আঁচ পেয়েছিলেন? প্রশ্নটা প্রশ্নই থেকে যাবে। কেননা উত্তর দেওয়ার মানুষটি চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছেন। অন্যায়ভাবে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে শত্রুদেশের সেনা। পরবর্তী পোস্ট শেয়ার করার আগেই নিভে গেল জীবনদীপ। নিজের করা পোস্টের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার শহিদ জওয়ানের জীবনদর্শন।
জীবন নিয়ে দুঃখের অন্ত ছিল না কপিলের। ১৮ বছরের জন্মদিনেই বাবাকে হারিয়েছিলেন তিনি। হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছিল বাবার। দুর্ঘটনাটি এতটাই আচমকা ঘটেছিল যে, কিছুই করে উঠতে পারেননি সেদিনের ছাত্র কপিল। বাবার মৃত্যু সংবাদ বুকে নিয়েই বোর্ডের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সসম্মানে উতরেও যান। তারপরই নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। একটু একটু করে মা, ছোটবোনকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিনারে দাঁড়িয়েও যে আশা ছাড়েন না, তা তাঁর প্রোফাইল দেখলেই বোঝা যায়। নিজেই পছন্দের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, “দৌড়ন, না পারলে হাঁটুন। তাও যদি না পারেন তবে হামাগুড়ি দিয়ে চলুন। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগে থামবেন না।”
বুলেটে, বারুদের গন্ধ, শত্রুসেনার পদধ্বনি ছাপিয়েও সৃজনী আসত কপিলের কলমে। সাদা পাতা ভরে উঠত কবিতায়। জীবনের যন্ত্রণাদীর্ণ মুহূর্ত কপিলের লেখনীশৈলীতে নতুন রূপ পেত। এমনটাই জানিয়েছেন প্রিয় বন্ধু রামাইয়া থোলিয়া। একই সঙ্গেই পড়াশোনা করেছেন দুজনে। বন্ধুর সঙ্গে দেখা হত আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই দেখা হল, তবে বুকে জড়িয়ে নয়। সেনার কাঁধে চেপে কফিনবন্দি কপিল এলেন হরিয়ানার পতৌদিতে। একজন সেনা ও তাঁর পরিবারই জানে যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য।
Photographs of Captain Kapil Kundu, Rifleman Ramavatar & Havaldar Roshan Lal who lost their lives in ceasefire violation by Pakistan in BG sector of Rajouri district yesterday. #JammuAndKashmir pic.twitter.com/dc6FQffk9W
— ANI (@ANI) February 5, 2018
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.