সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বর্ণলতা যেভাবে জীবনরস শুষে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় আশ্রয়দাতা উদ্ভিদকে। ২০২৪-এর নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পর গেরুয়া স্পর্শে অনেকটা তেমনই অবস্থা দেশের একাধিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের। কেউ বিজেপির সঙ্গে জোটে থেকে গেরুয়ালতার ‘বিষ’ স্নেহে কার্যত নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পথে, তো কেউ মৃত্যু আসন্ন বুঝে গেরুয়া সঙ্গ ত্যাগ করেও এড়াতে পারল না ‘পদ্মনাগ’-এর ছোবল। জাতীয় রাজনীতি তো দূরের কথা নিজের চেনা মাটিতেই কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ল একাধিক আঞ্চলিক দল। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, ফলাফল প্রকাশের পর জাতীয় রাজনীতি থেকে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ল যারা।
বিজেডি (বিজু জনতা দল)
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের পর যদি সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ কোনও দলের হয়ে থাকে তবে তারা হল বিজেডি। ওড়িশা নির্ভর এই রাজনৈতিক দল দীর্ঘকাল ধরে জগন্নাথভূমের শাসক। এককালে বিজেপির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা বিজেডি এবার গেরুয়া সঙ্গ ত্যাগ করলেও ‘পদ্মনাগ’-এর ছোবল থেকে রেহাই পেল না। ২১ আসনের ওড়িশায় একদা শরিক বিজেপি দখল নিয়েছে ২০টি আসন, কংগ্রেস একটি। বিজেডির এমন বেহাল দশা দেখে রাজনৈতিক মহলের দাবি, ওড়িশার মাটিতে খাল কেটে কুমির (বিজেপি) আনিয়েছিলেন নবীন পট্টনায়ক নিজেই। বিজেডির সান্নিধ্যে ফুলেফেঁপে উঠে এবার তাকেই খেল মোদি-শাহরা।
বিএসপি (বহুজন সমাজ পার্টি)
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর উত্তরপ্রদেশ রাজনীতিতে এবার কার্যত অপ্রাসঙ্গিক বলা যেতেই পারে মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টিকে। দীর্ঘ বছর বিজেপির সঙ্গে জোটে ছিলেন মায়াবতী। জোট ছেড়েওছেন অনেকদিন হল। তবে জোট ছাড়লেও শোনা যায়, রাজ্যে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়ার খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। উত্তরপ্রদেশে এবার প্রার্থীও দিয়েছিলেন সব আসনে। তাতে অবশ্য লাভ কিছু হয়নি। একটি আসনও জোটেনি। বিএসপির দলিত যাদব ভোটে আগেই থাবা বসিয়েছিল বিজেপি। বিজেপির সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জেরে বিএসপির ভোট কমতে কমতে একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিআরএস (ভারত রাষ্ট্র সমিতি)
এককালের তেলেঙ্গানার শাসকদল বিআরএস। বিজেপির সঙ্গে সরাসরি জোট না থাকলেও শোনা যায় ক্ষমতায় থাকাকালীন দক্ষিণের এই রাজ্যে রীতিমতো আঁতাত ছিল কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে লজ্জার হারের মুখে পড়ে ক্ষমতাচ্যুত হয় বিআরএস। এবার লোকসভা নির্বাচনে নিজের রাজ্যে কার্যত সাফ তারা। অন্যদিকে, একদা আঁতাতের তেলেঙ্গানায় এবার বিজেপি পেয়েছে ৮টি আসন।
এআইডিএমকে
জয়ললিতার দল ডিএমকে ভেঙে তৈরি হয়েছিল এআইডিএমকে। দক্ষিণের রাজনীতির অন্যতম নীতি নির্ধারক ছিলেন দলের প্রধান পালানিস্বামী। সরকারেও ছিলেন তারা। এই এআইডিএমকের হাত ধরে দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতে সংগঠন বাড়াতে শুরু করে বিজেপি। যার ফল, ধীরে ধীরে নিজেদের ভোটব্যাঙ্কই হারাতে শুরু করে এআইডিএমকে। যার বেশিরভাগটাই চলে যায় বিজেপিতে। ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এবার তাদের ফল শূন্য।
জেজেপি (জননায়ক জনতা পার্টি)
গত মাসেই হরিয়ানার রাজনীতিতে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছিল বিজেপির শরিক জেজেপি। হরিয়ানায় সরকার ফেলতে কংগ্রেসকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানায় তারা। হরিয়ানায় বিজেপি ও জেজেপি সংঘাতের মাঝেই শেষ হয়েছে লোকসভা নির্বাচন। ফলপ্রকাশ্যে আসার পর দেখা গিয়েছে, বিজেপি ও কংগ্রেস ৫টি করে আসন পেলেও একটিও আসন পায়নি জেজেপি।
শিরোমণি আকালি দল
এককালে এনডিএ’র পাকাপোক্ত শরিক হিসেবে পরিচিত পাঞ্জাবের শিরোমণি আকালি দল। মাঝে কৃষক আন্দোলন চলাকালীন বিজেপির উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন সুখবীর সিং বাদল। এককালে পাঞ্জাবের সরকার গঠনের নীতি নির্ধারক শিরোমণি আকালি দলের হাল খারাপ চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে। কোনওমতে পাঞ্জাবে একটি আসন পেয়ে অস্তিত্ব জানান দিতে পেরেছে তারা।
অসম গণপরিষদ
ছাত্র আন্দোলন, বাঙালি তাড়াও আন্দোলনে মধ্য দিয়ে অসমের মাটিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভাব ঘটে অসম গণপরিষদের। এর পর অসমে দাপটের সঙ্গে অস্তিত্ব জানান দেয় তারা। ভোট রাজনীতিতে পা রেখেও সরকার গঠনে নির্ণায়ক ভূমিকা নিত এই দল। এবার বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়ে মাত্র একটি আসনেই আটকে পড়েছে তারা। অন্যদিকে, এই লোকসভা নির্বাচনের পর অসমে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে আর একটি রাজনৈতিক দল এআইইউডিএফ।
আইএনএলডি (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল)
হরিয়ানায় একটা সময়ে বিজেপি ঘনিষ্ঠ রাজনীতি করলেও বিজেপির সঙ্গে আইএনএলডির সম্পর্ক চুকেছে আগেই। কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে সমদুরত্ব নীতি নিয়ে এবারও হরিয়ানা থেকে লোকসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল আইএনএলডি। তবে এবার তাদের ফল অত্যন্ত শোচনীয়। বিজেপি ও কংগ্রেসের দাপটে একটি আসনও পায়নি তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.