সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পেশা কী? এই প্রশ্নের সাধারণ এবং সহজ উত্তর, অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে কাজ করে অর্থ উপার্জনই পেশা। সে অর্থে যিনি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তিনি যদি সাহিত্য জগতে কাজ করেন, তাহলে সেটাই হবে তাঁর জন্য সঠিক পেশা। যেমন যিনি নাচ বা গানের চর্চা করেছেন, তাঁর ক্ষেত্রে নৃত্যশিল্পী বা সঙ্গীতশিল্পী হয়ে অর্থ উপার্জন করাই কাম্য। কিন্তু গবেষণা বলছে অন্য কথা। বেলজিয়ান বংশোদ্ভুত অর্থনীতিবিদের দীর্ঘ সমীক্ষার ফল, বহু ভারতীয়ই নাকি ভুল পেশায় নিযুক্ত।
হ্যাঁ, এমনই চমকপ্রদ তথ্য দিচ্ছেন বেলজিয়ান বংশোদ্ভুত ভারতীয় অর্থনীতিক জঁ দ্রেজ। অর্থনীতির জগতে যিনি ‘সাধারণের অর্থনীতিবিদ’ বলে সুবিদিত। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের একসময়কার সতীর্থ, দিল্লির ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষক ভারতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে রাঁচির সমাজকর্মী বেলা ভাটিয়াকে বিয়ে করে ২০০২ সাল থেকে রাঁচিরই বাসিন্দা হয়েছেন। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে জঁ দ্রেজের বক্তব্য, ‘ আদর্শ কর্মসংস্থানের পরিবেশ মানে যে কোনও মানুষের চাকরি সন্তোষজনক, সম্মানজনক, যথাযোগ্য বেতন কাঠামো এবং সামাজিক কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ তৈরি করা। আমি দেখি, ভারতের বহু মানুষ চাকরিহীন। তার চেয়েও বেশি মানুষ ভুল পদে, ভুল জায়গায় চাকরি করছেন। ফলে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা থেকে এখনও বহু যোজন দূরে।’ অর্থাৎ যে উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদন শুরু করেছিলাম, দ্রেজের কথায় সেটাই স্পষ্ট। তাঁর মতে, যাঁর যে কাজ করার কথা, অর্থ উপার্জনের প্রয়োজনে অনেক সময়েই সেকাজ তিনি করার সুযোগ পাচ্ছেন না। উপরন্তু, কাজের পারিশ্রমিক, বৃহত্তর জনজীবনে সেই কাজের প্রয়োগ,এসবও বহু ক্ষেত্রে অনিশ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে পড়ে কেউ কেউ নিজের পেশার প্রতি শ্রদ্ধা হারাচ্ছেন, যা কাম্য নয়। তবে ভারতের মতো দেশে প্রতিটি মানুষের আগ্রহ, মেধা বুঝে সেইমতো কর্মক্ষেত্র তৈরি করাও যে দুষ্কর, তাও মেনে নিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।
নেতাজি রহস্যের সমাধান অসম্ভব, বললেন আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য
সাক্ষাৎকার পর্বে এই পরিস্থিতির জন্য মোদি সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকেও দায়ী করেছেন অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ। নোটবাতিল নিয়ে তাঁর রীতিমত চাঁচাছোলা বক্তব্য, ‘আমার সঙ্গে এনিয়ে বহু অর্থনীতিবিদের মতবিরোধ আছে। আমি মনে করি, নোটবাতিল একটা ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত। এমনকি এনিয়ে বিতর্ক করাও এখন অর্থহীন। দেশের মানুষ কার্যত তা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। যে অর্থনীতিবিদরা একে সমর্থন করেন, তাঁরা আসলে মোদি সরকারের সমর্থক।তাই এনিয়ে সমালোচনা করতেও চান না।’ দ্রেজের এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ্যে আসার পর সমালোচনাও শুরু হয়েছে। অনেকেরই কটাক্ষ, দীর্ঘসময় প্রথম বিশ্বের একটি দেশে কাটানো অর্থনীতিবিদ ভারতীয় অর্থনীতিকে কতটা গোড়া থেকে বুঝেছেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সমালোচনা যাই থাক, এদেশের কর্মসংস্থান, সংস্কৃতি যে খুব একটা ভাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে না– এই খাঁটি সত্যি অস্বীকারের উপায় নেই মোটেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.