সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনার জেরে এবার হেনস্থার শিকার স্বয়ং চিকিৎসকরাই। দেশবাসীর নীতি পুলিশের চাপে পড়ে জেরবার অবস্থা চিকিৎসক-সহ সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মী, সাফাই কর্মীদের। করোনা দমনে সমাজের মূলস্রোতে থেকে তারাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দিন-রাত। তবে চিকিৎসকদের থেকেও ছড়াতে পারে সংক্রমণ, এই ভয়ে চিকিৎসকদের ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছেন বাড়ির মালিকরা। চিন্তার ভাঁজ চিকিৎসকদের কপালে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আতঙ্কিত দেশবাসী। এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে যারা ‘ভগবান’ হয়ে এগিয়ে এসেছেন সমাদের কাজে, আজ তাঁরাই হেনস্থার শিকার। দেশে ‘লকডাউন’ ঘোষণার পর হওয়ার পর জরুরি পরিষেবা দিতে দিনরাত এক করে নাওয়া-খাওয়া ভুলে হাসপাতালগুলিই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের একমাত্র আশ্রয় স্থল হয়ে উঠেছে। অনেক ভিনরাজ্যের চিকিৎসকরা এই দুর্দিনে শুধুমাত্র চিকিৎসার কাজে ব্রতী হয়ে ফিরতে পারেননি নিজেদের বাড়িতে। রয়ে গিয়েছেন হাসপাতাল সংলগ্ন মেস বা ভাড়া বাড়িতে। কিন্তু, তাঁদের নিজেদের বাড়িতে থাকতে দিতে রাজি নন বাড়ির মালিকেরা। কারণ করোনা সংক্রমণের ভয়। এই সমস্যা দেখা দেয় দিল্লি-সহ অন্যান্য রাজ্যগুলিতে। সেখানের মেস ও ভাড়া বাড়িগুলি থেকে রীতিমতো নোটিস জারি করে ঘর খালি করার কথা বলা হয়েছে চিকিৎসক-সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের।
এর জেরে ক্ষুব্ধ চিকিৎসক সংগঠন। তারা প্রধানমন্ত্রী-সহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এই সমস্যার সমাধান চেয়ে আবেদন জানান। বিভিন্ন রাজ্যের চিকিৎসকরা চিঠিতে তাদের সঙ্গে চলা বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে জানান, “বাড়ির মালিকরা তাদের বের করে দিলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে রাতটুকু পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা নেই।” এমনকী এইমসের করোনা রোগীদের শুশ্রূয়ায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের বিরোধিতা করছেন কিছু চিকিৎসকও। তাঁরাই অপপ্রচার চালাচ্ছেন করোনা মোকাবিলায় লড়ে চলা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। ফলে গুজবের জেরে মাথার ছাদ হারানোর উপক্রম স্বাস্থ্যকর্মীদের। অভিযোগ শুনে নড়চড়ে বসেছেন অমিত শাহ। কথা বলেন দিল্লি পুলিশের সঙ্গে। অবিলম্বে এইমস সংলগ্ন বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
শুধুমাত্র দিল্লি নয়, কলকাতাতেও দেখা গেল একই চিত্র। আমরি হাসপাতালে প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর পর আমরি সংলগ্ন মেস বা ভাড়াবাড়িগুলি থেকে একই কথা শোনা যাচ্ছে। দিল্লির চিকিৎসকদের মত কলকাতার চিকিৎসকরাও একই সমস্যার মুখে। অস্পৃশ্যের মত আচরণ করা হচ্ছে তাদের সঙ্গে। কেউ কেউ আবার ডাক্তারের উপর ডাক্তারিতে ব্যস্ত। তাদের সংস্পর্ষ এড়িয়ে চলতে চাইছেন অনেকে।
ইতিমধ্যেই কলকাতার এক সাফাইকর্মীর শরীরে জ্বর সঙ্গে হাঁচি, কাশি দেখা দিলেও তাঁকে ঘিরে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন অনেকে। বাকি সাফাই কর্মীরাও কাজ ছেড়ে দেন সেই সময়ে। তবে চিকিৎসকদের কথায় সাফাই কর্মীদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা গেলেও তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের কাছে থেকে এই ধরনের আচরণ প্রত্যাশ্যারও অতীত। পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অর্জুন দাশগুপ্ত এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ও অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপের দাবি জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.