Advertisement
Advertisement
Manmohan Singh Memorial Conflict

মনমোহনের শেষযাত্রা আজ, শেষকৃত্য রাজঘাট থেকে নিগমবোধ ঘাটে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক

তাঁর মৃত্যুতে দেশজুড়ে জারি হয়েছে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক।

Manmohan Singh Memorial Conflict: Ex PM's last rites amid Congress vs BJP debate
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:December 28, 2024 9:01 am
  • Updated:December 28, 2024 5:58 pm  

নন্দিতা রায় ও সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। সঙ্গে মুষলধারায় বৃষ্টি। দেশমাতৃকার কাছেও হয়তো পৌঁছে গিয়েছিল খবর, তাঁকে ত্যাগ করে অসীমের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন তাঁর অন্যতম কৃতী পুত্র। বিশ্বায়নের অর্থনীতির মুখ, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে একটা নাগাদ এইমস থেকে ৩, মোতিলাল নেহরু রোডের বাসভবনে শেষবারের মতো আসেন ড. সিং। এবার অবশ্য নিজের পায়ে হেঁটে নয়। আসে তাঁর পার্থিব শরীর। তাঁর মৃত্যুতে দেশজুড়ে জারি হয়েছে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। রাষ্ট্রপতি ভবন-সহ দেশের সব সরকারি ভবন, দপ্তরে অর্ধনমিত থাকবে জাতীয় পতাকা।

Advertisement

সেই সঙ্গেই শুক্রবার বাতিল করা হয়েছে সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠান। আজ শনিবার পৌনে বারোটায় নিগমবোধ ঘাটে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর। এদিকে মনমোহন সিংয়ের স্মৃতিসৌধর জমি নিয়ে দিনভর চলে টানাপোড়েন (Manmohan Singh Memorial Conflict)। শুক্রবার মধ্যরাতের পর পিআইবি থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করে মনমোহনের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জমি দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শুক্রবার সকালেই খাড়গে চিঠি দিয়ে শেষকৃত্যর স্থলেই স্মৃতিসৌধর জমি চান। একই আবেদন যায় মনমোহনের পরিবারের তরফে। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজেপির প্রাক্তন বন্ধু দল শিরোমনি আকালি দলের নেতা সুখবীর সিং বাদল সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানান, সৌধর জমির জন্য মনমোহনের পরিবারের অনুরোধ কেন্দ্রের প্রত্যাখ্যান করা খুবই নিন্দনীয়। বস্তুত, ২০১৫ সালেই মোদি সরকার আইন করে জানিয়ে দেয় রাজঘাটে কাউকে আলাদা করে স্মৃতিসৌধর জমি দেওয়া হবে না। বাদলের পোস্টের পরই কংগ্রেসের একাধিক সাংসদ ও নেতা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে লেখেন, মনমোহন হলেন প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী। তঁার শেষকৃত্যের স্থানে সৌধ নির্মাণের অনুমতি না দিলে অপমান করা হবে শিখ সমাজকেই। রাত ন’টার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানায়, নিগমবোধ ঘাটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মনমোহনের শেষকৃত্য হবে। কেন রাজঘাট থেকে শেষকৃত্য নিগমবোধ ঘাটে গেল তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মধ্যরাতে স্পষ্ট হয় জমির জন্যই সরেছে শেষকৃত্যের স্থান।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই প্রায় পুরো সময় প্রিয়াঙ্কা মনমোহনের স্ত্রী গুরশরন কৌরের পাশে। মা সোনিয়া ও দাদা রাহুলের সঙ্গে সকাল সকাল ফের চলে আসেন সেখানে। কর্নাাটকের বর্ধিত কর্মসমিতির কর্মসূচি বাতিল করে মাঝরাতেই দিল্লি চলে এসেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা। শুক্রবার সকাল সকাল সবাই চলে আসেন মনমোহনের বাসভবনে। প্রবল বারিপাত উপেক্ষা করে একে একে এসে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা-সহ অন্যান্যরা। আসেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট‌্যালিন, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অাতিশী, দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব, সিপিএম পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ছিলেন কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও।

মনমোহনকে শ্রদ্ধা জানিয়েই সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে ২ মিনিট নীরবতা পালনের পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মোদি বলেন, “মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণ গোটা দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। যেভাবে কঠিন সময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ছিলেন, অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন যেভাবে দেশকে উদ্ধার করেছেন, সেটা আগামী প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয়। ড. মনমোহন সিংয়ের জীবন তাঁর সততা ও স্বচ্ছতার প্রতিবিম্ব ছিল।” মনমোহনের সরকারের দুর্নীতির প্রচার করেই ক্ষমতার মসনদে বসেছিলেন মোদি। আজ তাঁর মুখেই মনমোহনের সততা ও স্বচ্ছতার প্রশংসা তাৎপর্যপূর্ণ। মন্ত্রিসভার বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সাতদিন রাষ্ট্রীয় শোক থাকবে দেশজুড়ে। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যা পালিত হবে সারা দেশে। সমস্ত জায়গায় অর্ধনমিত থাকবে জাতীয় পতাকা। এদিন পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সেই মতো বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। মনমোহনের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই সমাজমাধ্যমে শোকবার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তঁার স্মৃতিচারণ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে মন্ত্রিসভায় একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝেছিলেন মনমোহনের পাণ্ডিত্য ও জ্ঞান প্রশ্নাতীত। মনমোহনের স্নেহ থেকেও তিনি বঞ্চিত হবেন বলে জানিয়েছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্যের দিন বিদেশের সমস্ত ভারতীয় দূতাবাসগুলিতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

এদিন বিকেলেই বসেছিল কংগ্রেস কর্মসমিতির বিশেষ বৈঠক। সেখানে প্রয়াত নেতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক প্রস্তাব পাস হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কড়া নজর ছিল সেদিকে। আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাওয়ের মরদেহ নিয়ে যা ঘটেছিল, সেই ইতিহাস থেকে কী শিক্ষা নেয় কংগ্রেস, সেদিকেই নজর ছিল সকলের। ঠিক দু’দশক আগে অ-গান্ধী এক কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীর দেহ সদর দপ্তরে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে ছাড়ে না বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধী দল। এবার আর তা হওয়ার সম্ভাবনাই নেই। আজ, শনিবার সকাল সাড়ে ন’টায় কংগ্রেস দপ্তর থেকে মনমোহনের শেষযাত্রা শুরু হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement