Advertisement
Advertisement
Manmohan Singh Death

খেলা যখন কূটনীতির মাধ্যম, মনমোহনের পাক নীতিতে অবিচ্ছেদ্য ‘ক্রিকেট প্রীতি’

বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল দেখতে পাক প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ, দুদেশের মধ্যে জোড়া দিপাক্ষিক সিরিজ হয় মনমোহন জমানায়।

Manmohan Singh Death News: Former PM used cricket diplomacy to ease India-Pakistan relations

২০১১ সালে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ছবি: সংগৃহীত।

Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:December 27, 2024 12:56 pm
  • Updated:December 27, 2024 2:40 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পর ভারতীয় দলের ড্রেসিং রুমে। আবার টি-২০ বিশ্বজয়ের পর ভারতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা অলিম্পিকগামী দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা। ফেরার পর সফল-ব্যর্থ সব অ্যাথলিটদের সঙ্গে নৈশভোজ। আকছার করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অনেকে বলেন এটাও মোদির রাজনীতির অঙ্গ। জনপ্রিয় থাকার পদ্ধতি। মোদি যেভাবে আজকে খেলাকে রাজনীতিতে ব্যবহার করছেন, সেই কাজটা অনেক আগে শুরু করেছিলেন মনমোহন। বলা ভালো, খেলাকে আরও বৃহত্তর স্তরে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে কাজে লাগিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন সিংয়ের প্রধান এবং প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল দেশকে আর্থিকভাবে সুদৃঢ় করে আগামী দিনে উন্নত ভারতের ভিত্তি স্থাপন। দেশের আর্থিক উন্নয়নের মাঝে কোনওরকম ‘বিচ্যুতি’ বরদাস্ত করতেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। পণ্ডিত নেহেরুর মতো তিনিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রাখলে দেশের আর্থিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। ব্যতিক্রম নয় পাকিস্তানও। ওয়াঘা সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে হিংসা, সন্ত্রাসের চেষ্টা যখন সমানে চলছে তখনও তিনি ভারত-পাক সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে গিয়েছেন। আর সেই কাজে পুরোপুরি ব্যবহার করে গিয়েছেন ক্রিকেটকে।

Advertisement

মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০০৫-০৬ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ খেলে ভারতীয় দল। সেবার পারভেজ মুশারফও দিল্লিতে আসেন। তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন একসঙ্গে ক্রিকেট দেখেন। 

Manmohan Singh used cricket diplomacy to ease India-Pakistan relations
দিল্লিতে একসঙ্গে ভারত-পাক ম্যাচে মুশারফ-মনমোহন সিং। ছবি: সংগৃহীত।

অবশ্য ভারত-পাক সম্পর্কে তখনও তলানিতে ঠেকেনি।  সমস্যা শুরু হয় ২০০৮ মুম্বই হামলার পর। মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে পাক সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় ১৭৫ জনের মৃত্যুর পর তলানিতে ঠেকে দুদেশের সম্পর্ক। গোটা দেশ তখন ক্ষোভে ফুঁসছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি উঠছে। তখনও খানিক নরম মনোভাব নেন মনমোহন। যা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। আসলে মনমোহন তখনও পড়শি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার পক্ষে। আসলে সে সময় ভারতের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ছিল। চিনের প্রভাব বাড়ছিল। একদিকে চিন, অন্যদিকে পাকিস্তান দুই শত্রুকে একসঙ্গে সামাল দিতে গেলে অর্থনীতি পিছিয়ে পড়তে পারে, আশঙ্কা ছিল মনমোহনের। তাই ফের ক্রিকেটকে হাতিয়ার করেই দুদেশের সম্পর্কের ভিত মজবুত করার চেষ্টা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। যে কারণে তাঁকে বহুবার সমালোচিতও হতে হয়েছে।

২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালকে সেই কূটনীতির মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেন তিনি। মোহালিতে সেমিফাইনালে ভারত-পাক মহারণ দেখতে প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ জানান পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে। মোহালিতে পাশাপাশি বসে সেই সেমিফাইনাল দেখেন গিলানি এবং মনমোহন। যা দুই দেশেই ঐক্যের বার্তা দেয়। পরে পাক দলের সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেন মনমোহন। আসলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানতেন, ক্রিকেট এমন এক মাধ্যম যা দুই দেশকে একসূত্রে বাঁধতে পারে। ক্রিকেটের মাধ্যমে সম্পর্ক শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করলে দুই দেশের জনতারও বিশেষ আপত্তি থাকবে না। সেকারণেই সুক্ষ্মভাবে ক্রিকেটের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে তৎকালীন সরকার। পরে ফের পাকিস্তান ভারতে সিরিজ খেলতেও আসে।

পরে নরেন্দ্র মোদির সরকার অবশ্য পাকিস্তানের প্রতি মনমোহনের এই ‘নরমপন্থী’ মনোভাব পুরোপুরি খারিজ করে দেয়। মোদি সরকারের সাফ বার্তা, সন্ত্রাস আর খেলাধুলো একসঙ্গে চলতে পারে না। তবে মনমোহনপন্থীরা এখনও মনে করেন, সেসময় পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাই সময়ের প্রয়োজন ছিল। যা ক্রিকেটের মাধ্যমে পূরণ করতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement