সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কপ্টার কেলেঙ্কারিতে নয়া মোড়। ভোটের আগে তীব্র অস্বস্তিতে পড়ল কংগ্রেস। অত্যাধুনিক অগস্টা ওয়েস্টল্যান্ড কপ্টারের বরাত পেতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উপর যথেষ্ট চাপ তৈরি করা হয়েছিল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে দিয়ে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত একটি চিঠি লিখেছিলেন অগস্টা কপ্টার চুক্তির মূল মধ্যস্থতাকারী ব্রিটিশ নাগরিক ক্রিশ্চিয়ান মিশেল। তিনি চিঠিটি লিখেছিলেন অগস্টা ওয়েস্টল্যান্ডের ব্রিটিশ অংশীদারি সংস্থা ফিনমেকানিকার প্রধান গিউসেপি ওরসিকে।
ফিনমেকানিকা সংস্থার বর্তমান নাম লিওনার্ডো। ফিনমেকানিকা অগস্টা কপ্টারের মার্কেটিং বা বিপণনের ব্যাপারটা দেখাশোনা করত। গুরুত্বপূর্ণ খদ্দের পেতে তারাই মধ্যস্থতাকারীদের উপর ভরসা রাখত। সেই সুযোগটাই নিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ান মিশেল। ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট চিঠিটি মিশেল লিখেছিলেন ওরসিকে। সেই চিঠি ফাঁস করেছে ইন্ডিয়া টুডে টিভি। কয়েক পাতার চিঠিটির পুরো বয়ানটিই সম্প্রচার করেছে তারা। এই ঘটনা জানাজানি হতেই উত্তাপ বেড়েছে রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে।
চিঠিতে মিশেল ওরসিকে স্পষ্ট বলেছেন, অগস্টার কপ্টার কেনার জন্য পিএমও (প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অফিস)-র মনোভাব, সিদ্ধান্ত সবই জানাতে পেরেছি। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আমলারা কী প্রস্তাব রাখতে চলেছেন তাও জানি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মন্ত্রী ও আমলারা কী বলেছেন তার সব তথ্যই মোটামুটি আমার হাতে রয়েছে।
মিশেল লিখেছেন, ১৯ থেকে ২৩ জুলাই হিলারি ক্লিনটন ভারত সফরে এসেছিলেন। তিনি মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছিলেন। সেখানে হিলারি বার বার বলেন, “কেন ১০১ মডেল (অগস্টা কপ্টার) কিনছে ভারত? তার চেয়ে আপনারা আমেরিকা থেকে কপ্টার বা অন্য চপার কিনুন। ১০১ নিয়ে যা বলা হচ্ছে তাতে তত সুবিধা নেই। অথচ দাম বাজার দরের তুলনায় বেশি। এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক বেশি।” জবাবে মনমোহন তাঁকে বলেন, অবশ্যই তিনি এই ব্যাপারটা খতিয়ে দেখবেন। এরপর মনমোহন হিলারির একান্ত অনুরোধে প্রায় বেঁকে বসেছিলেন এবং অগস্টা তথা ১০১ মডেলের কপ্টার ডিল বাতিল করার কথা ভাবছিলেন।
মিশেলের চিঠিতে লেখা ছিল, “এই ঘটনার কয়েক দিন পরেই ৩০ জুলাই ছিল ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির (সিসিএস) বৈঠক। মনমোহনের অফিস (পিএমও) অগস্টার বরাত নিয়ে বেঁকে বসতে পারে। এই আশঙ্কায় আমি ও আমার এজেন্টরা চাপ বাড়াই সিসিএসের উপর। আমরা আমলাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলি। কথা হয় ভারতের বায়ুসেনা প্রধান ত্যাগীর সঙ্গেও। এরপর সিসিএসের বৈঠকে অগস্টার কপ্টার কেনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।” এরপর চিঠিতে মিশেল লিখেছেন, ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব বলেছেন, চিন্তা নেই। কাজ হয়ে যাবে। এর কয়েক দিন পরেই অগস্টা নিয়ে চূড়ান্ত সবুজ সঙ্কেত দেয় ভারত সরকার।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আমলা, মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচিত হওয়া কথাবার্তা, সংলাপ এথ বহহু একজন বাইরের লোক জানতে পারছে কি করে? মিশেলের মতো লোকরা অস্ত্রের ক্ষমতাশালী দালাল। তার চিঠির বয়ানই বলছে, ভারতের আমলা ও মন্ত্রীদের টাকা বা কাটমানির লোভ দেখিয়ে সব তথ্য হাসিল করা যায়। দেশের নিরাপত্তা এদের হাতে কতটা ঠুনকো তার প্রমাণ মিশেলের ফাঁস হওয়া চিঠি। মিশেলর চিঠিতে বলা হয়েছে, হিলারির অনুরোধ ফেলে দিয়ে অন্য সংস্থার কাছে কপ্টার কেনার ব্যাপারে ভারত সরকার রাজি হয় বিশেষ এক প্রভাবশালীর নির্দেশে। এক্ষেত্রে বিপুল কাটমানিই বড় ফ্যাক্টর হয়েছে। সেজন্যই উপরমহল থেকে বড় নির্দেশ এসেছিল। উল্লেখ্য, কপ্টার কেলেঙ্কারিতে মধ্যস্থতাকারী মিশেল ছাড়াও আরও দুই দালাল গুইদো হাশকে এবং কারলো জেরোসার ভূমিকা তদন্ত করছে সিবিআই ও ইডি।
[অগস্টা দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার ‘মিডল ম্যান’, কেলেঙ্কারি ফাঁসের ভয়ে উদ্বিগ্ন কংগ্রেস নেতারা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.