সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাশ্মীরি পণ্ডিতদের মতোই হবে দশা! প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না করলে নিজের রাজ্যেই শরণার্থী হতে হবে তাঁদের! এমনটাই আশঙ্কা করছেন মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেতেই জনগোষ্ঠীর একাংশ।
বৃহস্পতিবার মণিপুর (Manipur) হিংসা নিয়ে দিল্লিতে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘ওয়ার্ল্ড মেতেই কাউন্সিল’। সেখানে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট নবশ্যাম হেইগ্রুজাম বলেন, “মণিপুরে যে সমস্ত হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে তা পূর্বপরিকল্পিত। আজ আমাদের দশা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের মতোই। অথছ, মেতেই এবং নাগারাই মণিপুরের ভূমিপুত্র। নিজের রাজ্যেই আমরা গণহত্যার মুখে দাঁড়িয়ে। এনিয়ে বারবার সরকারকে জানিয়েছি।” কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়ে তিনি আরও বলেন, “এই দুঃসময়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর আমাদের সঙ্গে দেখা করার সময় হল না।”
এদিন ওয়ার্ল্ড মেতেই কাউন্সিলের মুখপাত্র নবকিশোর সিং ফের মেতেইদের জন্য তফসিলি জাতির তকমা দাবি করেন। কুকি ও নাগাদের মতোই মেতেইদেরও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি জানান তিনি। এছাড়া, কুকি জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের অভিযান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ৩ মে ‘ট্রাইবাল সলিডারিটি মার্চ’ শুরু করে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’। মেতেইদের তফসিলি উপজাতির তকমা না দেওয়ার দাবিতেই ছিল এই মিছিল। ক্রমেই তা হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। মেতেই সংখ্যাগুরু ইম্ফল উপত্যকায় বেশকিছু বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর এর প্রতিক্রিয়াও হয় প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে হিংসা।
প্রসঙ্গত, জনসংখ্যার নিরিখে মণিপুর একটি অত্যন্ত ছোট রাজ্য। মেরেকেটে এই রাজ্যের বাসিন্দার সংখ্যা ৩৫ লক্ষের বেশি নয়। কিন্তু এই ৩৫ লক্ষের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩৫টি জনজাতি সম্প্রদায়। রয়েছে একাধিক ধর্মের মানুষও। হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা প্রায় সমান-সমান। সাড়ে ৮ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও রয়েছে। প্রায় ১০ শতাংশ এমন একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে, যাদেরকে হিন্দু-পূর্ববর্তী ধর্ম সম্প্রদায় বলা হয়ে থাকে।
বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ‘হকের লড়াই’ লড়ছে মেতেইরা। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি হলেও তারা ক্রমে আগ্রাসনের শিকার হয়ে আসছে। পাহাড়ে বা মূলত কুকি-ঝাওদের এলাকায় মেতেইরা জমি কিনতে পারে না। অথচ, উপত্যকায় বা মেতেইদের জায়গায় জমি কেনার অধিকার রয়েছে কুকিদের। বিগত দিনে, মায়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিয়ে পাহাড়ে নিজেদের জনসংখ্যা বাড়াতে তৎপর হয়েছে কুকি-ঝোমি ও নাগারা। উল্লেখ্য, মণিপুরে ভারত-মায়ানমার সীমান্তের দু’ পাশই কুকি-ঝোমি ও নাগাদের বসতি রয়েছে। এদের অনেকেই আবার আত্মীয়। তাছাড়া, পাহাড়ে ‘ড্রাগ কার্টেল’ বা মাদক চক্রের রমরমা বাড়ছে। এবং পাহাড় থেকে মেতেইদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কুকি সন্ত্রাসবাদীদের নিশানায় রয়েছে মূলত বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মেতেইরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.