সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন করতে কেন এত সময় লাগছে? কবে হবে এই কেন্দ্রের উপনির্বাচন? অত্যন্ত বিরক্তির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর চাইল সুপ্রিম কোর্ট। হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য বেঁধে দেওয়া হল ২ সপ্তাহের সময়সীমাও। মৌখিক নির্দেশে বলা হল, ২ মাসের মধ্যে করতে হবে নির্বাচন।
শুক্রবার শুনানির শুরুতেই আদালতের তোপের মুখে পড়তে হয় কমিশনকে। তাদের আইনজীবী বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চকে জানায়, ৯ মে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তারা উপনির্বাচন করানোর ছাড়পত্র পেয়েছে। কমিশন দ্রুত নির্বাচন করতে চায় না, এমনটা নয়। কিন্তু তার জন্য আইন অনুযায়ী কমিশনকে ন্যূনতম সময় দেওয়া হোক। এই কথা শুনেই বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায় বেঞ্চের নেতৃত্বে থাকা বিচারপতি সূর্য কান্তকে। কমিশনের আইনজীবীকে বলতে শোনা যায়, তাহলে কেন নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে না? জবাবে আইনজীবী জানান, ইভিএম বিতরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় ঠিক করতে তাদের ন্যূনতম সময় প্রয়োজন। বারবার কলকাতা হাই কোর্টের শেষ নির্দেশের দিন, অর্থাৎ ৯ মের উল্লেখ করেন কমিশনের আইনজীবী।
ক্ষুব্ধ বিচারপতি পালটা প্রশ্ন করেন, একটিমাত্র কেন্দ্রের উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট তৈরি করতে কি গোটা কমিশনকে বৈঠকে বসার প্রয়োজন হয়? আপনারা বলছেন দ্রুত নির্বাচন করতে চান না, এমনটা নয়, কিন্তু এটা তো বলছেন না যে অবিলম্বে নির্বাচন করতে চান? এভাবে চলতে পারে না। শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কবের মধ্যে নির্বাচন করবেন, তা দু’ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানান। নাহলে এর ফল ভুগতে হবে। দু’ মাসের মধ্যে নির্বাচন করে ফেলতে হবে। এই সময় আবেদনকারীদের তরফে বলা হয়, ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে পারলে ভালো হয়।
দাবি নস্যাৎ করে কমিশনের আইনজীবীর বক্তব্য, দেশ জুড়ে সাধারণ নির্বাচন চলছে। এত কম সময়ে নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাঁর যুক্তি কমিশনের জন্য নির্বাচন আয়োজনে দেরি হয়নি। সবশেষে দু’ সপ্তাহের মধ্যে কমিশনকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ৩ জুন পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে আদালত। কমিশনের আইনজীবী এই সময় বলেন, বিষয়টি গোপনীয়, তাই তারা মুখবন্ধ খামে হলফনামা জমা দিতে চান। যা মানেনি আদালত।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাসের মধ্যেই মৃত্যু হয় মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের। ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী কোনও জনপ্রতিনিধির মৃত্যু বা ইস্তফার কারণে শূন্যতা তৈরি হলে ছ’ মাসের মধ্যে সেখানে উপনির্বাচন করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু মানিকতলার ক্ষেত্রে তা করা যায়নি। নেপথ্যে অবশ্যই বিজেপি। রাজ্যের শেষ বিধানসভা নির্বাচনে সাধন পাণ্ডের বিরুদ্ধে পদ্মশিবিরের প্রার্থী ছিলেন কল্যাণ চৌবে। নির্বাচনের পরপরই তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। শুনানি চলাকালীন বারবার মুলতুবি চাইতে থাকেন তাঁর আইনজীবী।
দীর্ঘদিন ধরে হাই কোর্টে শুনানি না হওয়ায় এবং বিধানসভা কেন্দ্র জনপ্রতিনিধিহীন থাকায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এলাকার সাধারণ মানুষকে। ফলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। কেন এভাবে শুনানি প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে? এই প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতে ভর্ৎসিত হতে হয় পরাজিত বিজেপি প্রার্থীকে। পাশাপাশি কলকাতা হাই কোর্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়, দ্রুত শুনানি শেষ করে ৩০ জুনের মধ্যে মামলার নিস্পত্তি করতে। এরই মাঝে কল্যাণ হাই কোর্টে মামলা প্রত্যাহারের আর্জি করলে আদালত তাতে সম্মতি জানায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.