তরুণকান্তি দাস, ভোপাল: দেখ কেমন লাগে! বাঙালির আড্ডায় অতি চালু বাক্যটার কোনও লাগসই হিন্দি মিলছে না। তাই সংসদীয় নির্বাচন ঘিরে রাজার শহর গোয়ালিয়রের কাণ্ডটাকে বাংলার বাক্যবন্ধ দিয়ে বোঝানো ছাড়া উপায় নেই। কেন না এক প্রাক্তন ব্যাংককর্মী নির্বাচন কমিশনের কর্মীদের পাক্কা দুই ঘণ্টা ধরে গুনতি করালেন এক টাকার কয়েন। তারপর ভোটে দাঁড়াবেন বলে মনোনয়নপত্র নিলেন। কালেক্টর অফিস ছাড়ার সময় বললেন, তাঁর বয়েই গিয়েছে ভোটে দাঁড়াতে। যাচ্চলে। তবে তিনি কী চান?
[নির্বাচনে শামিল মানসিক রোগীরাও, দেশে প্রথম হাসপাতালেই ভোটকেন্দ্র]
বুঝিয়ে বললেন, গোয়ালিয়রের কালেক্টর অনুরাগ চৌধুরি। কয়েকবার মেসেজ করার পর বাংলার সাংবাদিকের মোবাইলে ফোন করে বিষয়টা বলতে গিয়ে হাসি চেপে রাখতে পারছিলেন না তিনি। এদিন দুপুরে জেলা নির্বাচনী অফিসে আসেন ভদ্রলোক। নাম কেশব রাও। বয়স ৬৫। ব্যাংকে চাকরি করতেন। এই শহরের বাসিন্দা। তিনি ভোটে দাঁড়াতে চান। সে তো ভাল কথা। হইচই বাধল। তারপর যখন তিনি ফর্ম চাওয়ায় কালেক্টর অফিস তাঁকে টাকা জমা দিতে বলল, তিনি তিনটে বড় ঝোলা সটান রাখলেন আধিকারিকের টেবিলে। এর মধ্যে আছেটা কী? এখন ভোটের সময় বাড়তি নিরাপত্তা সর্বত্র। ছুটে এলেন জওয়ানরা। আধিকারিকদের হইচই দেখে হাতের ধাতব যন্ত্র তাক করে ফেলেছেন কেউ কেউ। ঝোলা ব্যাগের মালিক মিটমিট করে হাসছেন।
কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। তিনি তো নির্দল। দলহীন অথবা দলছুট যাই বলা যাক, এসেছেন একা। বললেন, “এই তিনটে ঝোলায় ২৫ হাজার টাকা রয়েছে। গুনে নিন। ফর্ম দিন। আমি ভোটে দাঁড়াব।”
এ আবার কেমন রসিকতা? মধ্যপ্রদেশের কালেক্টর দপ্তরে তখন হাসির রোল। ক্ষুব্ধ আধিকারিকরা। পাঁচ-দশ টাকার কয়েন নয়। সব কুচো নতুন এক টাকার মুদ্রা! গুনতে জান জেরবার হবে। কিন্তু সরকারি খাতায় জমা হবে যে টাকা তা তো না দেখে-বুঝে নেওয়া যায় না। কেশব রাওকে বলা হল নোট আনতে। অনুরোধেও চিড়ে ভিজল না। তিনি নাছোড়, “টাকা দিলাম। ফর্ম দিন।” অগত্যা জনা চারেক সরকারি কর্মীকে লাগানো হল। কালেক্টর বলেন, “ঘণ্টা দুয়েক লেগেছে সব টাকা গুনতে। কিছু করার নেই।” কিন্তু কেন এমন কারবার তাঁর। বহু কষ্টে কালেক্টর অফিস থেকে ফোন নম্বর জোগাড় করে সন্ধ্যায় যখন ধরা গেল কেশব রাওকে তখন তিনি পালটা দিলেন, “ভোট? কৌন সা ইলেকশন ভাই? মুঝে কোই চুনাও নেহি লড়না হ্যায়।” এ আবার কী? আপনি তো মনোনয়নপত্র তুলেছেন লোকসভায় লড়বেন বলে। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা রাজা মাধবরাও সিন্ধিয়ার শহরে লড়তে চান, ভাল কথা। কিন্তু এমন খুচরো কাণ্ড কেন?
এবার ঝেড়ে কাশেন কেশব রাও। যাঁর ব্যাখ্যায় ‘কেশব কেশব’ বলে মাথায় হাত ঠেকাতে ইচ্ছে করছে। তিনি বলেন, “এত খুচরো জমে গিয়েছে বাড়িতে। আমার ছোট ভাইয়ের বাড়িতেও। অথচ দোকানদার নেবে না। আমি নিজে ব্যাংককর্মী। অথচ ব্যাংকে গেলে ফিরিয়ে দিচ্ছে বলার চেয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে বলা ভাল। শুধু আমার নয়, সবার এই অবস্থা। মন্দিরে একটাকা দিলে পূজারি তাকিয়ে থাকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত পাতে যারা তারাও নিচ্ছে না। জ্বালা মেটাতে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে দিলাম। ওজন করেছি। ৩০ কেজি ছিল।” ভোটে দাঁড়াবেন না? “আরে না-না। মনোনয়নপত্র এনেছি। ভোট-টোটে নেই।” তবে যদি এক টাকার কয়েন চিহ্ন দেয়? প্রতীক শুনে ফোনের ও প্রান্তে হাসেন কেশব। প্রতিবাদের নয়া মূর্তিমান ৬৫-র ‘যুবক’।
[লিভারের ৬৫ শতাংশ বাবাকে দান, তরুণীর সাহসকে কুর্নিশ নেটদুনিয়ার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.