ছবি প্রতীকী
মণিশংকর চৌধুরি, শিলচর: একেই বোধহয় বলে উলাটপুরাণ। যে নাগরিকপঞ্জি অসমের বেশিরভাগ মানুষের কাছে অভিশাপ হয়ে উঠেছে, তাই যেন আশীর্বাদ হয়ে উঠল সোনাইয়ের দিলবার হুসেন বড়ভুঁইঞার কাছে। এতদিন জন্মদাতা যে পিতা তাঁর পরিচয় মানতে অস্বীকার করেছিলেন, তিনিই এখন খাতায়-কলমে অবৈধ সন্তানের পিতা বলে স্বীকৃত। এক টুকরো কাগজেই বদলে গেল পরিস্থিতি। যে অধিকার এতদিন হাজার চেয়েও মেলেনি, তাই এখন নাগরিকপঞ্জি হয়ে ধরা দিয়েছে সরকারি হিসেবে। একেই বোধহয় বলে ভাগ্যের ফের।
সোনাই বিধানসভা কেন্দ্রের কচুদরম থানার বিদ্রোহীপাড়ের বাসিন্দা দিলবার। পিতৃপরিচয় ছাড়াই বড় হয়েছেন। কিন্তু আচমকা জানতে পারেন, স্থানীয় দাউরকান্দি এলাকার স্কুলশিক্ষক নজরুল ইসলাম বড়ভুঁইঞার ঔরসেই জন্ম তাঁর। নজরুলের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন দিলবারের মা ফরিজুন্নেসা। সেই সময়ই তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যার পরিণতি দিলবার। পিতৃ পরিচয় জানতে পেরেই নিজের অধিকার চেয়ে বসেন দিলবার। এদিকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নজরুলের ভরা সংসার। অবৈধ সন্তানকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ তিনি। দুই পক্ষের মধ্যে বাদ-বিবাদ চরমে পৌঁছায়।
[‘৮৩ কেড়েছে স্বজন, এনআরসি-র খোঁচায় নয়া আতঙ্কে নেলি]
এরই মধ্যে শুরু হয় নাগরিকপঞ্জির নথিপত্র জমা দেওয়ার কাজ। পিতার জায়গায় নজরুলের নাম লিখে কাগজপত্র জমা দিয়ে দেন দিলবার। খবর পেতেই জাল নথি জমা দেওয়ার অভিযোগে অবৈধ সন্তানের বিরুদ্ধে দাউরকান্দি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নজরুল। শিলচর পিআই কোর্টে মামলা ওঠে। এজলাসে দাঁড়িয়ে ফরিজুন্নেসা জানান, নজরুলই দিলবারের জন্মদাতা। জামিনে ছাড়া পেয়ে যান দিলবার। কিন্তু নজরুলের কাছে সন্তানের স্বীকৃতি তিনি পাননি। জন্মদাতা যা দিতে চাননি, তাই যে ভাগ্য তাঁর হাতে তুলে দিল। নাগরিকপঞ্জির একটি কাগজ। যাতে ছাপা অক্ষরে বড় বড় করে লেখা তাঁর পিতার নাম- নজরুল ইসলাম বড়ভুঁইঞা।
এমনতেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। রং বদলেছে ব্রহ্মপুত্রের জলের। নাম কার উঠেছে, কার ওঠেনি এই প্রশ্নেই তোলপাড় গোটা রাজ্য। রাজনৈতিক চাপানউতোরের বিরাম নেই। বাঙালি-অবাঙালি নিয়েও চলছে জোর তরজা। ইতিমধ্যেই শিলচর বিমানবন্দরে তৃণমূল সাংসদদের আটকে দেওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনায় আবার সাংসদদের বিরুদ্ধেই উধারবন্ধ নিগ্রহের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এই ইস্যুতেই আবার মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি। এতকিছুর মধ্যে প্রাপ্তিযোগ কেবল হয়েছে দাউরকান্দির দিলবারের। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে বৈধ হওয়ার প্রমাণপত্র হাতে পেলেন তিনি। সৌজন্যে, এনআরসি!
[বঙাল খেদাওয়ের নামে গণহত্যা অতীত, রক্তাক্ত নেলিতে ভবিষ্যৎ গড়ছেন এই মহিলা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.