সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের মতো একাধিক রাজ্যে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর জোটে শতাব্দী প্রাচীন দলটির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উলটোদিকে বিধানসভা, লোকসভা এমনকী, বাংলায় ছয় উপনির্বাচনেও সবুজ ঝড়ের পর জোটের মুখ হিসেবে নতুন করে তৃণমূল নেত্রীর নামই উঠে আসছে। শুক্রবার ‘নিউজ ১৮ বাংলা’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মমতা নিজেই জানিয়েছেন, কলকাতায় বসেই ইন্ডিয়া জোট চালাতে প্রস্তুত তিনি। এ বিষয়ে জোট শরিকদের মধ্যে সপা, শিব সেনার উদ্ধব শিবিরের গলায় সমর্থনের সুর। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জায়গা ছাড়তে নারাজ কংগ্রেস।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে বরাবরই সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবের সম্পর্ক ভালো। অনেক সময় কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই সংসদে দুই দলকে একসঙ্গে একাধিক সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গিয়েছে। ইন্ডিয়া জোটের মাথায় তৃণমূল সুপ্রিমো এলে তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত অখিলেশের দল। ১০০ শতাংশ সমর্থন করতে রাজি তারা। এ প্রসঙ্গে সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র উদয়বীর সিং বলেন, “যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটকে নেতৃত্ব দিতে চান, তাহলে বাকিদেরও বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। ওঁকে সমর্থন করা উচিত। এতে জোটের হাত শক্ত হবে।” তাঁর সংযোজন, “পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে রুখে উনি দেখিয়ে দিয়েছেন। অনেক আগে থেকেই ওঁর সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক।” তৃণমূল নেত্রীকে সমর্থন করবে কি না, তা খোলসা না করলেও বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন শিব সেনার উদ্ধব শিবিরের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত জানি। আমরা সকলে একজোট। মতভেদ থাকলেও তা সামান্য।” রাউত কলকাতায় এসে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন।
ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তাদের মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেন, “ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম রূপকার লালুপ্রসাদ যাদব। তাঁর উদ্যোগেই বৈঠক হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপির বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ডে আমরা জয় পেয়েছি। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মজবুত সরকার বানিয়েছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ।” তবে কংগ্রেস মোটেই নিজেদের জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। তাদের তরফে নেত্রী বর্ষা গায়কোয়াড় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন মনে করতে পারেন, কিন্তু আমরা তেমন ভাবছি না। ওঁর কথায় ওঁর দল চলতে পারে। আমরা কংগ্রেসের কথায় চলি।” ফলে স্পষ্ট হচ্ছে যে ইন্ডিয়া জোটেই ক্রমশ একঘরে হচ্ছে কংগ্রেস। উলটো দিকে বিজেপি বিরোধিতায় প্রধান মুখ হিসেবে উঠে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, ইন্ডিয়ার মুখ মমতা হলে জাতীয় স্তরে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়বে কংগ্রেস। আর সেই কারণেই বাকি শরিকদের সঙ্গে একমত নয় হাত শিবির।
প্রসঙ্গত, লোকসভায় বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পথে হাঁটেননি মমতা। তাদের ছাড়াই পদ্মশিবিরকে দুরমুশ করেছে তৃণমূল। আবার সম্প্রতি উপনির্বাচনে ৬টির মধ্যে ৬টিতেই জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে সদ্য মহারাষ্ট্রে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কংগ্রেস। ১০২টি আসনে লড়ে হাত শিবির জয় পেয়েছে মাত্র ১৬টিতে। বিজেপির সঙ্গে সম্মুখ সমরে যেভাবে কংগ্রেস বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছে, সেখানে ঘাসফুল শিবির ধাক্কা দিতে সমর্থ হয়েছে পদ্মশিবিরকে। ফলে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, মোদির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধান বিরোধী নেত্রী হিসাবে ক্রমেই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন। এই পরিস্থিতিতে মমতা পরিষ্কার জানালেন, বাংলার মাটি থেকে প্রয়োজনে বিজেপি-বিরোধী ইন্ডিয়া জোটকে তিনি নেতৃত্ব দিতেই পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.