নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: মোদির সঙ্গে আলোচনায় প্রসঙ্গই ওঠেনি। আজ অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকের মূল বিষয়ই হয়ে উঠল সেটি। মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফরকালীন বহু প্রতীক্ষীত এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কথা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যার অপেক্ষায় ছিল রাজনৈতিক মহল। অসমের নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ যাওয়া ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১২ লক্ষই হিন্দু। সূত্রের খবর, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ঠিক এই বিষয়টিকেই বড় সমস্যা বলে তুলে ধরেছেন অমিত শাহর কাছে।
রাজ্যের পাওনা টাকা চাইতে প্রধানমন্ত্রীর দরবারে যাচ্ছেন বলে মঙ্গলবার দিল্লি রওনা হওয়ার আগে দমদম বিমানবন্দরে জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এও বলেছিলেন, সুযোগ পেলে এনআরসি নিয়ে জটিলতা, ব্যাংক, রেল-সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মক্ষেত্রের সমস্যা নিয়েও কথা বলবেন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। সেই থেকেই সকলের নজর ছিল, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে রাজ্যের অন্দরে বড়সড় আন্দোলন গড়ে তোলা তৃণমূল সুপ্রিমো বিষয়টি কীভাবে দিল্লির দরবারে উপস্থাপিত করেন। সেখানেও কি সুর এতটাই উচ্চগ্রামে বাঁধা থাকবে? এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল।
বুধবার বিকেলে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে কিছুটা হতাশই হয়েছিলেন কেউ কেউ। কারণ, মোদির সঙ্গে প্রায় আধঘণ্টার বৈঠকে এনআরসি নিয়ে কোনও কথাই হয়নি। তা বৈঠকের পর নিজেই জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তবে বুধবারের অনুল্লেখিত প্রসঙ্গের সবটাই বৃহ্স্পতিবার খোলামেলা আলোচনায় নিয়ে এলেন মমতা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আবেদন মেনে আজ দুপুরেই নর্থ ব্লকে মমতাকে দেখা করার জন্য ডেকে নেন অমিত শাহ। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে এতটুকুও ছাড়লেন না তৃণমূল সুপ্রিমো। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তিনি সরাসরি সমস্যার কথা প্রকাশ করে বলেন, অসমে এনআরসি-তে বাদ যাওয়া ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু। এটা ঠিক প্রত্যাশিত নয়। এই বিষয়টি যাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক গুরুত্ব দিয়ে দেখেন, সেই আবেদন জানিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অসমের পর বাংলাতেও এনআরসি হবে, বিজেপি নেতৃত্বের মুখে বারবার একথা শোনার পর থেকেই জল্পনা বাড়ছিল, এই সফরে কি বাংলায় এনআরসি নিয়ে প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী? বাস্তবে দেখা গেল এক্ষেত্রে মমতা বেশ কৌশলী। বৈঠকের পর তিনি বেরিয়ে জানিয়েছেন যে অসমের এনআরসি নিয়ে কথা হয়েছে, বাংলার বিষয়টি আলোচনাতেই আসেনি। তবে রাজ্যের নাম বদল নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও আলোচনা হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। সবমিলিয়ে, রাজনীতির ময়দানে সবচেয়ে বেশি সুর চড়ানো দুই প্রতিপক্ষের প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক যে ভালই হয়েছে, তা বুঝতে বাকি নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.