সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জাতি হিংসায় জ্বলছে গোটা মহারাষ্ট্র। মঙ্গলবার থেকেই পুণে-মহারাষ্ট্র কার্যত অবরুদ্ধ। বুধবারও একই পরিস্থিতি। কোনও কোনও অঞ্চলে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। তার আঁচ গিয়ে পড়ল সংসদেও। এদিনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতাকে কটাক্ষ করে মৌনী বাবা বলে অভিহিত করলেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে।
[ ভীমা কোরেগাঁও সংঘর্ষের জেরে রণক্ষেত্র মহারাষ্ট্র, বনধের ডাক দলিতদের ]
জাতি হিংসার এই তত্ত্ব অবশ্য নতুন নয়। সেই ব্রিটিশ আমলেই এর বীজ বোনা হয়েছিল। ভারতে জাতপাতের বিভেদ যে আছে তা ভালই বুঝেছিলেন চতুর ব্রিটিশরা। তখনকার সেনাতে দলিতদের ব্যাপকহারে নেওয়া হয়েছিল। সেসময় পেশোয়াদের শোষণে অতিষ্ঠ ছিলেন দলিতরা। ব্রিটিশ আধিপত্য প্রসারে কাজে লাগানো হয়েছিল এই ক্ষোভকেই। মারাঠাদের বিরুদ্ধেই লড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল দলিতদেরই। ১৮১৮ সালে ভীমা নদীর ধারে কোরেগাঁও গ্রামের সেই যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজয় হয়। ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু মূল ক্ষোভটি ছিল পেশোয়াদের বিরুদ্ধে দলিতদের। অর্থাৎ কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল ব্রিটিশরা। আজও যার জের অব্যাহত। ফলে স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও দুই জাতির মধ্যে দ্বন্দ্বের আবহ রয়েই গিয়েছে। পরবর্তীকালে দলিত নেতারা এই ইস্যুটিকে কাজে লাগান। দলিতদের অধিকার ছিনিয়ে আনতেই, এই যুদ্ধে হত দলিতদের তালিকাকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগান তাঁরা। ফলে দীর্ঘকাল ধরে বৈরিতার এক মিথ তৈরি হয়েই আছে। তারই বহিঃপ্রকাশ এই দাঙ্গায়।
Maharashtra: Protests being carried out in the state; visuals from Nagpur’s Shatabdi Square #BhimaKoregaonViolence pic.twitter.com/CRxHim7qOl
— ANI (@ANI) January 3, 2018
ভীমা-কোরেগাঁও যুদ্ধের ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তুষের আগুনে ঘৃতাহুতি হয়। বুধবার সংসদেও ছড়াল এই আগুন। জাতি হিংসার জন্য সরাসরি বিজেপি ও আরএসএস-এর দিকেই আঙুল তুলল কংগ্রেস। এদিন মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, “দেশে জাতিদাঙ্গার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। আরএসএস ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি ক্রমাগত হিংসা ছড়াচ্ছে, বিদ্বেষে ইন্ধন দিচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে আশ্চর্যরকম নিশ্চুপ। তাঁর তো উচিত সংসদে দাঁড়িয়ে এ নিয়ে বিবৃতি দেওয়া। মোদিকে এদিন মৌনী বাবা বলেই কটাক্ষ করলেন সংসদের বিরোধী দলনেতা খাড়গে।
Mumbai: Protesters continue to block Eastern Express Highway #BhimaKoregaonViolence pic.twitter.com/Usg1jHxV4Y
— ANI (@ANI) January 3, 2018
বুধবারও গোটা মহারাষ্ট্র জুড়ে কার্যত জারি অচলাবস্থা। গোরেগাঁও থেকে থানে-ট্রেন চলাচল বন্ধ বিভিন্ন জায়গায়। স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ১৪৪ ধারা জারি করে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিকে দিকে এদিন আগুনের শিখা চোখে পড়ে। জানা যাচ্ছে, ঘটনার প্রায় সপ্তাহখানেক আগে থেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলে। যেখানে ভারতীয়দেরই পরাজয় হয়েছিল, সেরকম যুদ্ধবিজয়ের স্মতি পালন করা উচিত কিনা তা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে ভারচুয়াল প্ল্যাটফর্ম। হিংসার আবহ মোটামুটি সেখানেই তৈরি হয়। নির্ধারিত দিনে ঘটে ক্ষোভের বিস্ফোরণ. পুরো ঘটনার তদন্ত চেয়েছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের দিয়ে ঘটনা খতিয়ে দেখা হোক। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো দ্বন্দ্ব যেভাবে বর্তমান সময়েও আগুন জ্বালিয়েছে তা গোটা ভারতের সামনেই অশনিসংকেত।
#Maharashtra: Large number of protesters have occupied the railway tracks at Nallasopara Station, disrupting rail traffic. Administration & security forces are making all efforts to normalize the train operations-Western Railway #BhimaKoregaonViolence pic.twitter.com/xTBjKnP8xU
— ANI (@ANI) January 3, 2018
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.