মণিশঙ্কর চৌধুরি: প্রায় চারদিন পার হয়ে গেলেও মেলেনি কোনও ক্লু| আজও অধরা তিনসুকিয়া গণহত্যার চক্রীরা| তদন্তের ভার এনআইএ-র হাতে| এদিকে তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য| আগেই নাকি হামলার সতর্কতা পৌঁছে গিয়েছিল পুলিশের হাতে| তবে রুটিন বার্তা মনে করেই তা উপেক্ষা করা হয়, যার মাশুল দিতে হয় পাঁচ নিরীহ বাঙালি যুবককে|
জানা গিয়েছে, ফের অসমকে অশান্ত করার চেষ্টা হতে পারে| রাজ্যের বাঙালি সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালাতে পারে উগ্রপন্থীরা| তিনসুকিয়া গণহত্যার ৭২ ঘণ্টা আগেই এমন সতর্কবার্তা জারি করেছিলেন গোয়েন্দারা| সূত্রের খবর, অসমের ডিজি (স্পেশ্যাল) পল্লব ভট্টাচার্যের দপ্তরে পৌঁছেছিল গোপন ফাইলও| তারপরই সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল তিনসুকিয়া ও ধোলা থানায়| তবে চূড়ান্ত গাফিলতির পরিচয় দেয় সংশ্লিষ্ট থানাগুলি| রুটিন হুঁশিয়ারি ভেবেই নেওয়া হয়নি কোনও ব্যবস্থা| স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের ২০০ মিটারের মধ্যেই ধোলা থানা| অদ্ভুতভাবে, ঘটনার দিন থানায় মজুত ছিল না পর্যাপ্ত ফোর্স| এমনকী, খবর দেওয়ার পরও দেরিতে এসে পৌঁছায় বাহিনী| সব মিলিয়ে পুলিশের দিকেই আঙুল তুলছেন স্থানীয়রা| এবিষয়ে বারবার ফোন করা হলেও উত্তর মেলেনি ডিজি পল্লব ভট্টাচার্যের তরফে| এদিকে অসমের বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের দাবি, ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে জেহাদিরা| উগ্রপন্থী সংগঠন উলফাকে আর্থিক মদত দেয় পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই| ট্রেনিং চলে বাংলাদেশে| তাই স্থানীয় হিন্দু বাঙালিদের নিশানা করছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি| পুলিশের মধ্যেও চর থাকতে পারে| সেটা তদন্ত করে দেখা উচিত| এদিকে বাঙালি হত্যার দায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অস্বীকার করলেও এর পিছনে উলফার হাত রয়েছে বলেই দাবি করেছেন অসম পুলিশের ডিজি কুলধর শইকিয়া।
প্রায় চারদিন পার হয়ে গেলেও, গণহত্যার ঘটনায় আজও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ| আপাতত সমস্ত ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)| সোমবার হামলার একমাত্র সাক্ষী সহদেব নমঃশূদ্রের বয়ান নেন তদন্তকারীরা| ঘটনার হাড়হিম করা বিবরণ তুলে ধরেন তিনি| তদন্তকারীদের সহদেব জানান, স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন তাঁরা| এমন সময় সেখানে সেনার পোশাকে উপস্থিত হয় কয়েকজন| তাঁদের ছ’জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়| কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোনও| তারপরই খেরবাড়ির চরে নিয়ে তাঁদের হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করে জঙ্গিরা| একের পর এক হত্যা করা হয় তাঁর সঙ্গীদের| কপালগুণে তাঁর গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায় গুলি| ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি| তাঁকে মৃত ভেবে পালিয়ে যায় জঙ্গিরা| এদিকে ঘটনার পর নিরাপত্তা কড়া করা হয়েছে তিনসুকিয়ায়|
উল্লেখ্য, ধৃত উলফা নেতা জিতেন দত্ত, মৃণাল হাজারিকার মুক্তির দাবিতে ডিব্রুগড় সদর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীরা৷ পাশাপাশি বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের নেতা সুজিত সরকারের বিরুদ্ধে তিনসুকিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে আলোচনাপন্থী উলফা নেতা প্রবাল নেওগ৷ পাশাপাশি দাবি জানানো হয়, বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেবকে গ্রেপ্তার করতে হবে| সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে অসমের পরিস্থিতি থমথমে|
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.