শুভময় মণ্ডল: সবে বছর পেরিয়েছে। তার মধ্যেই মধুচন্দ্রিমা পর্ব শেষ। তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাতে চলেছেন ত্রিপুরার ৬ বিধায়ক। বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায়বর্মন-সহ পুরো তৃণমূল নেতৃত্বই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। ৭ আগস্ট আগরতলায় আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মচিহ্ন হাতে নেবেন সুদীপ রায়বর্মনরা। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সাংগঠনিক) রামমাধব, কেন্দ্রীয় পেট্রলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং অসমের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার উপস্থিতিতে দলীয় পতাকা ধরবেন তাঁরা। এই দলবদলে কার্যত ত্রিপুরায় ভেঙে গেল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রধান বিরোধী দলের তকমাও হারাতে চলেছে ঘাসফুল শিবির। ত্রিপুরা বামফ্রন্টের পোয়াবারো বলছে রাজনৈতিক মহল।
গতবছর জুন মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে দলবল নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সুদীপ রায়বর্মন। সঙ্গে ছিলেন আশিস কুমার সাহা, দিলীপ সরকার, প্রাণজিৎ সিংহরায়, বিশ্ববন্ধু সেন এবং দিবাচন্দ্র রাঙ্খল। এই ছয় বিধায়কের সঙ্গে প্রচুর নিচুতলার কর্মীও তৃণমূল ছাড়ছেন বলে খবর। কংগ্রেসের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে ঘাসফুল শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন সুদীপবাবু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ অনুসরণ করে ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম জমানার অবসান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ডিজিটালকে একান্ত সাক্ষাৎকারে সুদীপবাবু জানান, ‘বামেদের উৎখাত করা তো দূরের কথা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই সরে এসেছে তৃণমূল। বামেদের সরাতে গিয়ে বিজেপি বিরোধিতা করা হচ্ছে। কিন্তু বামেদের প্রধান শত্রু বিজেপিই।’ একবছরের মধ্যে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন সুদীপ-সহ ছয় বিধায়ক। আন্দোলনের রূপরেখার গত একবছরে আমূল পরিবর্তন হয়েছে বলে জানান সুদীপবাবু। যে কারণের জন্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছিলেন, কোথাও যেন সেই উদ্দেশ্য দিশা হারিয়েছে বলে মত তাঁর। তাই ত্রিপুরা থেকে বামেদের সমূলে উৎখাত করতে বিজেপিই একমাত্র পথ বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর অভিযোগ, একসময় বামেদের তাড়াতে কংগ্রেস, তারপর বিজেপির হাত ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে যতদিন গিয়েছে আশাহত হয়েছেন সুদীপবাবুরা। তাই ঠিক করেছেন, আর নয়। সদলবলে তৃণমূল ছেড়ে তাই গেরুয়া শিবিরে যাত্রা।
তাহলে ত্রিপুরায় তৃণমূলের ভবিষ্যৎ কী, সেই নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি শীর্ষ নেতৃত্ব। ত্রিপুরায় সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন মুকুল রায়। কিন্তু তিনি এখন খবরের শিরোনামে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন কি না সেই ইস্যুতে। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, সুদীপদের বিজেপি যাত্রায় একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে। যাঁর যবনিকা পড়বে কিছুদিন পর। কিন্তু অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিজেপিতে যাচ্ছেন তাঁরা। প্রথমে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল, তারপর সেখান থেকে বিজেপিতে যাওয়ার নেপথ্যে অন্য অভিসন্ধী দেখছে রাজনৈতিক মহল। সূত্রের খবর, অনেক আগেই তলে তলে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন সুদীপ রায়বর্মনরা। তৃণমূল ছাড়তেনই, তাই কলকে পাওয়ার জন্য বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.