নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করে সংসদের ‘মর্যাদাহানি’ করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। তাঁর এহেন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন স্পিকার ওম বিড়লা। তবে আইন মেনে এই ইস্যুতে বিরোধী সাংসদদের আলোচনার সময়ও বেঁধে দিলেন তিনি। জানিয়ে দেন, আধঘণ্টা এনিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারবেন সাংসদরা। তারপরই এনিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিন দুপুর ১২টায় তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট পেশ করেন লোকসভার এথিক্স কমিটির প্রধান তথা বিজেপি (BJP) সাংসদ বিজয় সোনকার। জল্পনা মতোই ওই রিপোর্টে মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদিও রিপোর্টটি পেশের পরই চূড়ান্ত হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। যার জেরে অধিবেশন দুপুর দুটো পর্যন্ত মূলতুবি করে দিতে হয়।
অধিবেশন মূলতুবি হওয়ার পর জোড়া দাবিতে স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লেখে তৃণমূল। এরাজ্যের শাসকদলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (Sudip Banerjee) আবেদন করেছিলেন, ওই রিপোর্টের কপি সব সাংসদদের হাতে যাওয়ার পর সেটা নিয়ে আলোচনার জন্য অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। তারপর সেটা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করতে হবে। এবং মহুয়াকেও বলতে দিতে হবে। কিন্তু এদিন বেলা ২টোয় ফের অধিবেশন শুরু হলে মহুয়া ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্পিকার বলে দেন, সংসদের মর্যাদাহানি হোক, এমন কোনও বিষয়ই মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
একইসঙ্গে এনিয়ে আলোচনার জন্য আধঘণ্টা সময় বেঁধে দেন ওম বিড়লা। সঙ্গে সঙ্গে সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায় আরও সময় দেওয়ার আর্জি জানান। তৃণমূল সাংসদ কল্যণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই আবেদন করেন। যদিও তা কানে তোলেননি। আলোচনার শুরুতেই মহুয়ার হয়ে সওয়াল করেন কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাঁর কথায়, “মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। তাহলে মহুয়াকে কেন বলার সময় দেওয়া হবে না?” তারপরই সংসদে ঝড় তোলেন কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি। মহুয়ার মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। বলে দেন, “মনে হচ্ছে, এটা সংসদ নয়, আদালত। এথিক্স কমিটি সুপারিশ করতে পারে, সাজা দিতে পারে না।”
পালটা যুক্তি দিয়ে বিজেপি সাংসদ হীনা বিজয়কুমার দাবিত বলেন, এমনটা প্রথম নয়। এর আগেও সংসদ থেকে সাংসদদের বিতাড়িত করা হয়েছে। “আজ পর্যন্ত মহুয়া ৬০টি প্রশ্ন করেছেন। যার মধ্যে ৫০টিই ছিল হীরানন্দানিদের সঙ্গে যুক্ত। মহুয়া মৈত্র নিজেও স্বীকার করেছেন যে তিনি হীরানন্দানিকে সংসদের ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। দুবাই থেকে সেই অ্যাকাউন্ট সামলানো হয়েছে। আমরা সাংসদ হিসেবে যে নিয়মাবলির ফর্ম পাই, তাতে স্পষ্ট লেখা থাকে যে আইডি, পাসওয়ার্ড কাউকে দেওয়া যাবে না। তাহলে মৌলিক অধিকার খর্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? মহুয়ার এমন আচরণে সমস্ত সাংসদেরই মাথা নত করে দিয়েছে।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী বলে দেন, ২০০৫সালে যখন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় স্পিকার ছিলেন, কংগ্রেসের সরকার ছিল। সেই সময়ও একইদিনে ১০ জন সাংসদকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তিনিও সময় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.