সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি জাতির জনক৷ অহিংসার অভূতপূর্ব ভাবনায় ব্রিটিশ প্রভুদের বিরুদ্ধে গোটা ভারতকে একত্রিত করেছিলেন৷ সেই তিনিও কিনা মহিলাদের পোশাক নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না! সম্প্রতি সামনে এল এমন তথ্যই৷
বেঙ্গালুরুর গণ শ্লীলতাহানি কাণ্ডের পর সপা নেতা আবু আজমি জানিয়েছিলেন, নগ্নতাই এখন মহিলাদের ফ্যাশন৷ নেতার এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ঝড় ওঠে জাতীয় রাজনীতিতে৷ একদিকে এ দেশে পিঙ্ক-এর মতো ছবি সুপারহিট হয়৷ সভ্য দেশে নারীর ‘না’ বলার অর্থ যেখানে জোর করে দেখিয়ে দেওয়া হয়৷ অন্যদিকে সেই দেশেই গণ শ্লীলতাহানির শিকার হলে নেতারা দোষ দেন মহিলাদেরই৷ প্রশ্ন ওঠে তাঁদের পোশাক নিয়ে৷ তা নিয়ে চলতে থাকে রাজনৈতিক চাপানউতোর৷ এই দ্বৈততাই যখন সময়ের সমস্যা, তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এনেছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ৷ সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে তিনি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন৷
‘হরিজন’ পত্রিকায় এক মহিলা কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন গান্ধীজির কাছে৷ জানতে চেয়েছিলেন, নির্যাতনের মুখে কি অহিংসা অনুশীলন করে মহিলাদের প্রতিরক্ষা সম্ভব? তাঁর আরও জিজ্ঞাসা ছিল, কী করে এই সামাজিক কর্কট রোগের থেকে মুক্তি মিলবে? পাঞ্জাবি এক কলেজছাত্রীর এই প্রশ্নের উত্তর ওই পত্রিকার পাতাতেই দেন মহাত্মা৷ নারী নিগ্রহ রুখতে তাঁর নিজস্ব ভাবনা-মতামত ব্যক্ত করেন৷ তাঁর মত ছিল, সকল অভিযুক্তের নাম খবরের কাগজে ছাপা হোক৷ এ ধরনের প্রত্যেকটি ঘটনা যেন সামনে আসে৷ কেননা জনমত দ্বারা কোনও একটি সামাজিক বিষয়কে প্রভাবিত করার বিকল্প কিছু নেই৷ কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি আরও একটি মন্তব্য করেন৷ তাঁর আশঙ্কা ছিল, আধুনিক মেয়েরা রোদ-জল থেকে বাঁচতে পোশাক পরেন না৷ বরং জুলিয়েট হয়ে রোমিওদের আকর্ষণ করাতেই তাঁরা বেশি আগ্রহী বলে তাঁর মনে হয়েছিল তাঁর৷ অর্থাৎ নিগ্রহের পিছনে পরোক্ষে মহিলাদের পোশাকের প্রসঙ্গটি উসকে দিয়েছিলেন স্বয়ং গান্ধীজিও৷
(‘বউমা শর্টস পরলেও কি তবে গণ শ্লীলতাহানি কাম্য?’)
কিন্তু এখানেই শেষ নয়৷ হতে পারেন তিনি গান্ধীজি, কিন্তু তাঁর এ মন্তব্য মোটেও সাধুবাদ পায়নি৷ এগিয়ে এসেছিলেন কলকাতার ১১ জন মহিলা৷ মহাত্মার এই মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক বলে তাঁরা চিঠি দিয়েছিলেন স্বয়ং গান্ধীজিকে৷ প্রত্যেকে সইও করেছিলেন সেখানে৷ সাফ জানিয়েছিলেন, মহাত্মার এই মন্তব্যে মহিলাদের অসম্মানই হয়েছে৷ যেভাবে মহিলারা প্রতিবাদ করেছিলেন গান্ধীজির, তা হয়তো গোখেল বা চিত্তরঞ্জন দাশও করতে পারতেন না৷ পরে গান্ধীজি তাঁর এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা করেন৷ সামাজিক কোনও ব্যধির উপশম নির্ণয় করতে গিয়ে আনুষঙ্গিক সমস্ত লক্ষণই তিনি খতিয়ে দেখেছিলেন বলে জানান৷ তবে যে কোনও মূল্যে এই নিগ্রহকারীদের শাস্তির বিধান দেন তিনি৷
(বেঙ্গালুরুর রাস্তায় শ্লীলতাহানি তরুণীর, সিসিটিভি ফুটেজে চাঞ্চল্য)
সম্প্রতি যখন আবার এই ইস্যু মাথাচাড়া দিয়েছে, তখন প্রাসঙ্গিকভাবেই এই ঘটনা তুলে এনেছেন ইতিহাসবিদ-প্রাবন্ধিক৷ ঘটনার ভিতর থেকে যে বার্তাটি উঠে আসে, তা যে এই সময়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
সূত্র-স্ক্রল ডট ইন
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.