সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সয়াবিন, তুলো, সংরক্ষণ। ১০৮ আসন। শিব সেনা (উদ্ধব), কংগ্রেস, নেপথ্যে রিংমাস্টার শরদ পওয়ার। মহারাষ্ট্র ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত বিজেপি নেতাদের এই শব্দগুলিই চিন্তায় রাখবে। আসলে মহারাষ্ট্রে এবার মূলত ৬ দলীয় লড়াই, পাঁচ-ছ’টি আলাদা আলাদা অঞ্চলে আলাদা রকমের লড়াই। তবে এই সব লড়াইয়ের মধ্যেও মারাঠা নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে যে দুটি অঞ্চল-সেগুলি হল বিদর্ভ এবং মারাঠাওয়াড়া। এই বিদর্ভ এবং মারাঠাওয়াড়াতেই রয়েছে ১০৮টি আসন। সেখানে মহাজুটির চালিকাশক্তি বিজেপি। এবং মহা বিকাশ আঘাড়ির চালিকা শক্তি কংগ্রেস।
বিদর্ভে মোট আসন সংখ্যা ৬২টি। এর মধ্যে সরাসরি কংগ্রেস বনাম বিজেপি লড়াই ৩৫ আসনে। মারাঠাওয়াড়ায় মোট আসন ৪৬। এর মধ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির সোজা লড়াই ১০ আসনে। এর বাইরে মারাঠাওয়াড়ায় বেশ কিছু আসনে সোজা লড়াই শিব সেনা উদ্ধবের সঙ্গে বিজেপির। শিণ্ডে বনাম উদ্ধব লড়াইও দেখা যাবে। তবে, বিদর্ভে মূল লড়াই কংগ্রেস এবং বিজেপির। আর মারাঠাওয়াড়ায় বেশি আসনে না লড়েও বিরোধী জোটের চালিকাশক্তি হতে পারেন শরদ পওয়ার।
প্রথমে আসা যাক বিদর্ভের কথায়। বিদর্ভ মহারাষ্ট্রের অন্যান্য এলাকার থেকে পিছিয়ে। ২০১৯ সালে এই বিদর্ভ অঞ্চলে ভালো ফল করেছিল বিজেপি। আবার ২০২৪ সালের লোকসভায় এই এলাকায় ক্লিন সুইপ করে কংগ্রেস। বস্তুত কংগ্রেস এবং বিজেপি দুই শিবিরই বিদর্ভে শক্তিশালী। দেবেন্দ্র ফড়ণবিস, নীতীন গড়করির মতো বিজেপি নেতাদের কেন্দ্র এই বিদর্ভতেই। তেমনি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি নানা পাটোলে, বিরোধী দলনেতা বিজয় ওয়াদেট্টিয়ার কেন্দ্রও বিদর্ভে। মহারাষ্ট্রের দুই জাতীয় দল কে কাকে মাত দেবে সেটা নির্ভর করবে এই এলাকাতেই। চব্বিশের লোকসভায় এই এলাকায় কংগ্রেস ADMK সমীকরণ বিজেপিকে মাত করেছিল। কি এই ADMK? আদিবাসী, দলিত, মুসলিম এবং কুর্নি। এই চার ‘সমাজকে’ একত্রিত করে সাফল্য পায় হাত শিবির। কুর্নিরা এই এলাকার প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী। সেটা অবশ্য হয়েছিল রাহুল গান্ধী ‘সংবিধান বাঁচানো’র ডাক দেওয়ার জেরে। বিধানসভায় সংবিধান অত বড় ইস্যু নয়। তবে এই এলাকায় বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ এখনও রয়েছে। ক্ষোভের মূল কারণ সয়াবিন এবং তুলোর দাম। আসলে মহারাষ্ট্রে সয়াবিন এবং তুলোর সরকার নির্ধারিত দাম কৃষকরা পাচ্ছেন না। এমএসপির অনেক কম দামে ফসল বেচতে হচ্ছে। অথচ, সার-পেট্রল-ডিজেলের দর আকাশছোঁয়া। ফলে চরম বিপাকে কৃষকসমাজ। সেটাই বিজেপির চিন্তার মূল কারণ।
এবার আসা যাক মারাঠাওয়াড়ায়। মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলে গত ১০-১৫ বছর ভালো ফল করে আসছে বিজেপি। সমস্যা দেখা যায় ২০২৪ লোকসভায়। মনোজ জারাঙ্গে পাটিলের মারাঠা সংরক্ষণ আন্দোলন শুরু হলে। আসলে মারাঠারা মহারাষ্ট্রের বেশ প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী। রাজ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ বাসিন্দা মারাঠা হলেও রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অন্যান্যদের থেকে পিছিয়ে। সম্প্রতি মারাঠা অধিকার কর্মী মনোজ জারাঙ্গে পাটিল মারাঠাদের ওবিসি সংরক্ষণ তালিকায় আনার দাবিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন করেন। শেষপর্যন্ত মারাঠারা সংরক্ষণ পায়নি। যার জন্য জারাঙ্গে দায়ী করেন বিজেপিকে। লোকসভায় এই মারাঠওয়াড়ায় সব আসনে হেরে যায় বিজেপি। আটটি আসনের মধ্যে সাতটি যায় মহা বিকাশ আঘাড়ির দখলে। বিধানসভায় ভালো করতে হলে সেই অঙ্ক বদলাতেই হবে গেরুয়া শিবিরকে। সমস্যা হল, এই জারাঙ্গে পাটিল বিধানসভায় প্রথমে প্রার্থী দেবেন বলে ঠিক করেন। সেটা হলে মারাঠা ভোট পুরোপুরি বিরোধী শিবিরে যেত না। কিছুটা কাটাকাটি হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু জারাঙ্গে শেষপর্যন্ত প্রার্থী দিচ্ছেন না। শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, সেটার নেপথ্যে নাকি রয়েছেন মারাঠা স্ট্রংম্যান শরদ পওয়ার। তিনিই নাকি জারাঙ্গেকে পরিচালনা করেন। শেষপর্যন্ত জারাঙ্গের অনুগামীরা বিরোধী শিবিরে ভোট দেন, তাহলে গেরুয়া শিবির চিন্তায় থাকবে।
তবে এত কিছুর পরও যেটা বলা জরুরি সেটা হল ভোটের এই অঙ্কগুলি বিরোধীদের পক্ষে থাকলেও সংগঠন এবং বুথ ম্যানেজমেন্ট- এই দুই ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের থেকে এগিয়ে বিজেপি। বিরোধীদের থেকে এগিয়ে শাসক। সেটাই শেষবেলায় ফ্যাক্টর হয়ে যেতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.