সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের ঐতিহ্য ধর্মনিরপেক্ষতা। তা সত্ত্বেও ইদানীং বারবার শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভেদের কিছু ঘটনা। তবে সেই হিংসা, হানাহানিকে পিছনে ফেলে হিন্দু তরুণীর কন্যাদান করলেন মুসলমান দম্পতি। মানবতা যে ধর্মের ঊর্ধ্বে, তা প্রমাণ করলেন লুধিয়ানার ওই দম্পতি।
করোনা পরিস্থিতির বহু আগে পূজার সঙ্গে সুদেশ কুমারের বিয়ে ঠিক হয়। স্থির ছিল ২ জুন দু’জনের চার হাত এক হবে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিল দুই পরিবার। কনের বাবা-মার উত্তরপ্রদেশ মোরাদাবাদে পৈত্রিক বাড়ি। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে সেখানেই গিয়েছিলেন তাঁরা। শুধু কনে অর্থাৎ ওই দম্পতির কন্যাসন্তান থেকে গিয়েছিলেন লুধিয়ানায়। প্রতিবেশী মামা-মামীর দেখভালেই দিন কাটছিল তাঁর। আচমকা লকডাউন। তার ফলে সমস্যায় পড়লেন সাতপাকে বাঁধা পড়তে চলা তরুণীর বাবা-মা। তাঁরা আটকে পড়েন মোরাদাবাদে। কিছুতেই লুধিয়ানায় আসতে পারছিলেন না তাঁরা। এদিকে মেয়ের বিয়ের দিনও এগিয়ে আসছে।
কীভাবে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। প্রতিবেশী মামা-মামী দাঁড়িয়ে থেকে মেয়ের বিয়ে দিতে পারেন বলেই আশাপ্রকাশ করেছিলেন পূজার বাবা-মা। কিন্তু মুসলিম প্রতিবেশীর তত্ত্বাবধানে হিন্দু মেয়ের বিয়ে মেনে নেবেন তো যুবকের পরিবার, সেই চিন্তাও তাঁদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কনের পরিবারের তরফে পাত্র সুদেশের বাবাকে সেই প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজিও হয়ে যান তিনি। সেই অনুযায়ী মুসলিম প্রতিবেশীর তত্ত্বাবধানে হিন্দু রীতি মেনে পূজা এবং সুদেশের চারহাত এক হয়। নবদম্পতিকে নানা উপহারও দেন ওই প্রতিবেশী দম্পতি। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র সাতজন।
কনের প্রতিবেশী আবদুল সাজিদ এবং তাঁর স্ত্রী বলেন, “আমরা প্রায় ৫ বছর ধরে পূজার পরিবারকে চিনি। পূজারা আমাদের মামা-মামী বলেই ডাকে। পূজা আমাদের মেয়ের মতো। আমরা পূজার কন্যাদান করি। তাই দাঁড়িয়ে থেকে ওর বিয়ে দিতে পেরে খুব ভাল লাগছে। কোনও উপহারই চাননি সুদেশের পরিবার। তবু আমরা খাট, আলমারি এবং সামান্য কিছু বাসনপত্র দিয়েছি।” ছোট্ট করে বিয়ে হওয়ায় কিছুটা খারাপ লাগছে সুদেশের। তবে মুসলিম মামা-মামীর তত্ত্বাবধানে সম্প্রীতির বিয়ে মন কেড়েছে তাঁর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.