Advertisement
Advertisement

আজ জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা, বহু ভক্তের সমাগম পুরীতে

কী তাৎপর্য এই অনুষ্ঠানের?

Lord Jagannatha Snan Yatra festival in Puri
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 28, 2018 12:22 pm
  • Updated:June 28, 2018 12:22 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভক্ত তাঁকে দর্শন করতে হয়তো সবসময় মন্দির পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। তবে তিনি ভক্তদের না দর্শন দিয়ে থাকেন কী করে! আর তাই মন্দিরের প্রাকার পেরিয়ে আজ জনসমক্ষে হাজির জগন্নাথদেব। রীতি মেনেই চলছে স্নানযাত্রা উৎসব। জগন্নাথ দর্শনে গতকাল থেকেই বহু ভক্তের সমাগম শ্রীক্ষেত্রে।

[  পুরীর মন্দিরে ‘চমৎকার’, সিল করা খামে মিলল রত্নভাণ্ডারের হারানো চাবি ]

Advertisement

জৈষ্ঠ পূর্ণিমাতে এই স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। বিগ্রহকে মন্দিরের বাইরে স্নানবেদীতে নিয়ে আসা হয়। তারপর বিশেষ কুয়োর ১০৮ কলসি জলে স্নান করানো হয়। দুধ-গঙ্গাজলে জগন্নাথদেবের এই স্নানই স্নানযাত্রা উৎসব। মন্দিরের বাইরে প্রভুকে দেখার জন্য কাতারে কাতারে ভিড় জমান ভক্তরা। লোককথা অনুযায়ী, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন নাকি মাথার যন্ত্রণায় কাহিল হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব। তীব্র গরমে প্রভু রীতিমতো নাজেহাল। তাঁর উপশমের জন্য সে সময় কপালে পুরু চন্দনের প্রলেপ দেওয়া হয়। সেই চন্দন ধুতেই ঘটা করে এই স্নানের আয়োজন। শোনা যায় এত স্নানের পর এবার নাকি জগন্নাথদেবের জ্বর হয়। তাই আগামী পনেরোদিন তিনি আর কাউকে দর্শন দেন  না। স্নানযাত্রার ঠিক দু’সপ্তাহের মাথাতেই রথযাত্রা পালন করা হয়। আজও ভক্তরা এই কথাতেই বিশ্বাস করেন। সামনে থেকে জগন্নাথ দর্শনের জন্য ভিড় জমান পুরীতে। প্রতি বছরের মতো এবারও তার ব্যতিক্রম নেই।

স্নানযাত্রার পুরো পর্ব বেশ বর্ণাঢ্য। আগের সন্ধেয় ঘটা করে জগন্নাথ-বলরাম ও সুভদ্রাকে স্নানবেদীতে এনে রাখা হয়। এই শোভাযাত্রার সময়ই বহু ভক্ত জগন্নাথ দর্শনের বিরল সুযোগ পান। এরপর স্নানযাত্রার দিন স্নান করিয়ে তাঁদের বিশেষ বেশভূষায় সজ্জিত করা হয়। গণেশের রূপ দেওয়ার জন্য হস্তিমুখ-বিশিষ্ট মস্তকাবরণী পরানো হয়। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নই এই প্রথার প্রচলন করেছিলেন। স্নানের পর দেবতার অসুস্থ হয়ে পড়া। এই পর্বটির নাম অনসর। এ সময় জগন্নাথের চিকিৎসা চলে। তবে ভিন্নমত বলে, এই সময় ভক্তরা অমরনাথ যাত্রা করেন। প্রভু জগন্নাথ তাই অমরনাথ রূপে অধিষ্ঠান করেন। আর পুরীতে জগন্নাথের পটচিত্র রাখা থাকে। তবে তার আগে বিগ্রহ দেখে চক্ষু সার্থক করেন ভক্তরা।

লোককথা যাই থাক, এর এক সামাজিক তাৎপর্যও আছে বটে। যে ভক্তরা মন্দিরে পৌঁছতে পারেন না, তাঁর জন্য স্বয়ং জগন্নাথ বাইরে বেরিয়ে আসেন। এর সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তাটি স্পষ্ট। মন্দিরকে নিয়ে যে ক্ষমতার বাতাবরণ, তা ভেঙে স্বয়ং বিগ্রহের বাইরে বেরিয়ে আসা লোকতন্ত্রের একটি বিশেষ লক্ষণকেই চিহ্নিত করে। কেন্দ্রীকরণ নয়, জনগণতান্ত্রিকতার ঘোষণা হয়ে থাকে এই কাজ।  তেমনই এই রূপকে অধ্যাত্মিক তত্ত্বটিও পরিচিত। উপনিষদে ব্যক্তির কাছে দেবতার আসার কথা বারবারই উচ্চারিত। একাধিক রবীন্দ্রসঙ্গীতেও পূজা-প্রেমের সে কথা উঠে এসেছে। আমার দিকে তোমার দিকে যেমন যাত্রা আছে, তেমনই তোমার থেকে আমার দিকেও আছে যাত্রা।  একদিন তাই দুযার ভেঙে যায়।  দেখা যায়, সব হারানো শূন্যতার উপর তিনিই অধিষ্ঠিত।  জগন্নাথের বাইরে আসা যেন সেই ‘আমার দিকে তাঁর’ যাত্রা হিসেবেই সূচিত।

পুরীর অনুকরণে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় স্নানযাত্রার আয়োজন হয়। নদিয়ার মায়াপুরের রাজাপুরে ইসকন মন্দিরেও চলছে স্নানযাত্রা উৎসব।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement