Advertisement
Advertisement
Look Back 2023

ফিরে দেখা ২০২৩: কুস্তিগিরদের বিক্ষোভ থেকে আদানি কাণ্ড, বছরভর বিতর্কে থাকল যে ঘটনাগুলি

রইল বছরের ১১টি বাছাই করা বিতর্কিত ঘটনার তালিকা।

Look Back 2023: Controversial figures of India throughout the year | Sangbad Pratidin

গ্রাফিক্স- অর্ঘ্য চৌধুরী।

Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:December 22, 2023 5:25 pm
  • Updated:December 25, 2023 2:30 pm

বছর আসে বছর যায়। প্রতিবছরই আমাদের সমাজে হাজারও পটপরিবর্তন ঘটে। এর কোনওটি তলিয়ে যায় কালের গর্ভে, আবার কোনও কোনও পরিবর্তন জনমানসে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলে যায়। তার সঙ্গে অবধারিতভাবেই চলে আসে বিতর্ক। বছর শেষে এমনই কিছু পটপরিবর্তনে আলোকপাত করছে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। যেগুলি গোটা বছর ছিল বিতর্কে।

১। সাংসদ পদ বাতিল: ২০২৩-এ বছরভর বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল দুই বিরোধী হেভিওয়েটের সাংসদ পদ বাতিল। প্রথম জন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। দ্বিতীয় জন তৃণমূলের লড়াকু নেত্রী মহুয়া মৈত্র (Mohua Moitra)। মার্চে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল হয় ‘মোদি পদবি’ মামলায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় কর্নাটকের এক সভায় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন,”নীরব মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি, সব চোরের পদবিই মোদি কেন?” সেই মন্তব্য গোটা ‘মোদি সমাজের অপমান’ বলে দাবি করে সুরাটের স্থানীয় আদালতে মামলা করেন বিজেপি বিধায়ক সুরেশ মোদি। দুবছরের সাজা হয় রাহুলের। সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয় সাংসদ পদও। কংগ্রেস নেতাকে ছাড়তে হয় সরকারি বাংলোও। রাহুলের সাংসদ পদ বাতিল নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। রাস্তায় নেমে পড়ে কংগ্রেস। যদিও বিস্তর বিতর্কের পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সাংসদ পদ ফিরে পান রাহুল। আপাতত তিনি সাংসদ হিসাবেই কাজ করছেন। রাহুলের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলেও মহুয়ার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। বছর শেষে এসে ‘টাকার বদলে প্রশ্ন’ মামলায় সাংসদ পদ খুইয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে আদানিদের বিরুদ্ধে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন। মহুয়ার সাংসদ পদ বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেও সেই মামলা এখনও বিচারাধীন।

Advertisement
Look Back 2023: Controversial figures of India throughout the year
রাহুল গান্ধী। ফাইল ছবি।

২। কুস্তিগিরদের বিক্ষোভ: দুই প্রভাবশালী সাংসদের পদ বাতিল যদি দেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় বিতর্ক হয়ে থাকে, তাহলে ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে বড় বিতর্ক কুস্তিগিরদের বিক্ষোভ। ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের শীর্ষপদে থাকা ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে হেনস্তা এবং শ্লীলতাহানির বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন দেশের প্রথম সারির কুস্তিগিররা। দাবি ছিল, ব্রিজভূষণের অপসারণ এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ। দীর্ঘদিন কুস্তিগিরদের সেই দাবিতে আমলই দেয়নি সরকার। শেষে বাধ্য হয়ে ধরনার রাস্তায় হাঁটেন সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাট, বজরং পুনিয়ারা। ১৫ আগস্ট দেশ যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে ব্যস্ত, সেদিন দিল্লির রাজপথে ফেলে নৃশংসভাবে বিক্ষোভরত কুস্তিগিরদের মারধর করে দিল্লি পুলিশ (Delhi Police)। গোটা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল সেই ছবি। পরে একপ্রকার বাধ্য হয়ে ব্রিজভূষণ ফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ চলছে। তবে বিজেপির ওই প্রভাবশালী নেতা সাংসদ পদ ছাড়েননি। এমনকী, কুস্তি ফেডারেশনের নির্বাচনে শেষপর্যন্ত জয়ী হয়েছেন ব্রিজভূষণেরই ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং। বাধ্য হয়ে চোখের জলে কুস্তি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হল সাক্ষী মালিককে। 

Look Back 2023: Controversial figures of India throughout the year
দিল্লিতে কুস্তিগিরদের উপর লাঠিচার্জ পুলিশের। ছবি: সোশাল মিডিয়া।

৩। আদানি-হিন্ডেনবার্গ: বছরের শুরুতেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আদানি গোষ্ঠীর উপর ধেয়ে আসে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট। মার্কিন শর্টসেলার সংস্থা দাবি করে, নিজেদের ফায়দার জন্য নানাভাবে ভারতের বাজার প্রভাবিত করছে আদানিরা। মোদি জমানায় আদানি গোষ্ঠীর উত্থানে বড়সড় দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয় ওই সংস্থা। ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই হু হু করতে পড়তে থাকে আদানিদের শেয়ারের দাম। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টেই বলা ছিল, এর জেরে আদানি গোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। শেষ পর্যন্ত সেই পূর্বাভাস মিলেও যায়। আদানি গোষ্ঠীর (Adani Group) নথিভুক্ত সাতটি কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বড় সংস্থা আদানি টোটাল গ্যাস লিমিটেডের ৮৫ শতাংশ সম্পদ রাতারাতি উবে যায় বাজার থেকে। এই নিয়ে শুরু হয় রাজনীতিও। মোদি-আদানি আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে বিরোধীরা। এই বিতর্ক আগামী লোকসভাতেও বড় ইস্যু হতে চলেছে।

NFRA asks for audit files from Adani Group firm auditors
ফাইল ছবি

৪। সংসদে হানা: চলতি বছরই পুরনো সংসদ ভবন থেকে নতুন সংসদ ভবনে শুরু হয় অধিবেশন। শীতকালীন অধিবেশনেই নতুন সংসদে প্রথমবার পুরোদস্তুর কাজ শুরু হয়। সেই প্রথম অধিবেশনেই সংসদে স্মোক ক্যান নিয়ে ঢুকে পড়ে দুই অনুপ্রবেশকারী। হুবহু মিলে যায় তার দিনতারিখ। ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সংসদে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ২২ বছর পরে সেই একই দিনে সংসদের ভিতরে ঢুকে রঙিন গ্যাস ছেড়ে দিল দুই যুবক। ভরা অধিবেশনে সেই অতর্কিত হামলায় হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে সাংসদদের মধ্যেই। যদিও সাংসদরাই হামলাকারীদের পাকড়াও করেন। দেশের গণতন্ত্রের পীঠস্থানে এই হামলা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। শুরু হয় তদন্ত। এদিকে সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিবৃতি দাবি করে সংসদের বাইরে এবং ভিতরে বিক্ষোভ শুরু করেন বিরোধীরা। অনড় থাকে কেন্দ্র। মোদি-শাহ এ নিয়ে বিবৃতি দেননি। উলটে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য মোট ১৪৭ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। যা ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিরোধীদের দাবি, বিরুদ্ধ-স্বর রোধে সবরকম চেষ্টা করছে সরকার। 

Parliament security breach: Plotters had backup plan for demo outside House
সংসদে গ্যাস হামলা। ছবি পিটিআই

৫। ভারত-ইন্ডিয়া: দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’র বদলে ‘ভারত’ করার পক্ষে ময়দানে নেমেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোদি সরকারের যুক্তি এক ভাষায় ভারত, এক ভাষায় ইন্ডিয়া নয়, সব ভাষাতেই দেশের নাম হোক ‘ইন্ডিয়া’। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয় দেশের মাটিতে আয়োজিত জি-২৪ বৈঠক থেকে। ওই বৈঠকেই দেশের নাম হিসাবে ইন্ডিয়ার (India) জায়গায় ভারত লেখা শুরু হয়। ক্রমে সেই প্রবণতা দেখা যায় অন্য জায়গাতেও। এমনকী পাঠ্যবইতেও ‘ইন্ডিয়া’র বদলে ‘ভারত’ ব্যবহার শুরু হয়। যদিও সরকারিভাবে সংসদে কোনও প্রস্তাব বা বিল আনা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে বিতর্ক বেঁধে যায়। বিরোধীদের দাবি, তাঁরা মোদির বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইন্ডিয়া নামের জোট গঠন করার পরই দেশের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। নানা মহল থেকে এর বিরোধিতা শুরু হয়। সমালোচকরা বলা শুরু করেন, “ইন্ডিয়া নামের সঙ্গে ঔপনিবেশিক শাসনকে হারিয়ে দেশ স্বাধীন করার ইতিহাস জড়িয়ে।”

Look Back 2023: Controversial figures of India throughout the year
ছবি- সংগৃহীত

৬। বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্ক: ইউনেস্কোর তরফে হেরিটেজ তকমা পাওয়ার পর বিশ্বভারতীর ভিতরে যে ফলক বসানো হয়েছিল, তাতে প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) এবং তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম লেখা হয়। খোদ কবিগুরু সেই ফলকে ব্রাত্য থেকে যান। তাঁর নামটিও লেখা হয়নি কোথাও। ২০ অক্টোবর বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য়বাহী উপাসনা গৃহ, রবীন্দ্র ভবন ও গৌরপ্রাঙ্গনে পাথরের ফলক বসানো হয়। বিশ্বভারতীর স্বীকৃতির ফলক। অথচ তাতে খোদ কবিগুরুর নাম লেখা হল না! স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে সুশীল সমাজ। ফলকে কবিগুরুর নাম ব্রাত্য় থাকা নিয়ে সরব হন বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, আশ্রমিক, প্রাক্তনী থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতনবাসী। আসরে নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মমতার নির্দেশে বিশ্বভারতীর সামনে তৈরি হয় ধরনা মঞ্চও। তাতেও ফলক সরাতে অস্বীকার করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ঘটনাচক্রে এরই মধ্যে বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কার্যকাল শেষ হয়ে যায়। বিতর্কিত ওই উপাচার্যের মেয়াদ আর বাড়ায়নি কেন্দ্র। তাঁর বদলে অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নেন সঞ্জয় মল্লিক। তিনি রাতারাতি ওই বিতর্কিত ফলক বদলে দেন। তাতে রবি ঠাকুরের নাম লেখার পাশাপাশি বিশ্বভারতীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা হয়। বছরের একটা দীর্ঘসময় রাজ্য রাজনীতিতে শিরোনামে ছিল এই বিতর্ক।

Look Back 2023: Controversial figures of India throughout the year
বিশ্বভারতীর সেই ফলক। নিজস্ব চিত্র।

৭। মোদি ডকুমেন্টারি-বিবিসি আয়কর হানা: বছরের একেবারে শুরুতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামের একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে। সেই তথ্যচিত্রে একাধিক আপত্তিকর দৃশ্য রয়েছে বলে দাবি করে ভারত সরকার। গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় ওই ডকুমেন্টারিতে। সেই দাঙ্গায় সংখ্যালঘু বহু মানুষ মারা গিয়েছিলেন। সঙ্গে গৃহহীন হতে হয়েছিল প্রচুর মানুষকে। সেই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কেন্দ্র ওই ডকুমেন্টারিটি ভারতে নিষিদ্ধ করে দেয়। শুরু হয় বিতর্ক। অভিব্যক্তির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, সেন্সরশিপ চলছে, আওয়াজ তুলে সরব হয় বিরোধীরা। এমনকী সংসদেও পড়ে এর আঁচ। এরই মধ্যে আবার ভারতে বিবিসির দপ্তরে (BBC) শুরু হয় আয়কর হানা। একাধিক দফায় বিবিসির দিল্লি এবং মুম্বইয়ের দপ্তরে হানা দেয় আয়কর বিভাগ (IT Dept)। টানা তল্লাশি চালানো হয়, কর্মীদের ঘরবন্দি রাখা হয়। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে বিতর্ক। বিরোধী শিবির সরব হয় প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলে। যদিও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে গিয়েছে। ভারতে বিবিসির ওই ডকুমেন্টারি এখনও নিষিদ্ধ। তবে সেই বিতর্কের জল গড়িয়েছে বহুদূর।

Look Back 2023: Controversial figures of India throughout the year
ফাইল ছবি

৮। ২০০০ টাকার নোট বাতিল: ২০১৬ সালে নোট বাতিলের (Note Ban) সময় ঘটা করে মোদি সরকার চালু করেছিল ২ হাজার টাকার নোট। সরকারের দাবি ছিল, বড় নোট চালু হলে কম সময়ে মানুষের কাছে বেশি টাকা পৌঁছে দেওয়া যাবে। এর ফলে দুর্নীতি কমবে, নতুন নোট চালু হলে জাল করার প্রবণতাও কমবে। কিন্তু বছর ছয়েক বাদে চলতি বছরই ২০০০ টাকার নোটে মোহভঙ্গ হয় কেন্দ্রের। ধীরে ধীরে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয় বৃহত্তম নোট। শেষে সরকারিভাবে ২ হাজারের নোট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও ঘোষণা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে ২০০০ টাকার নোটে আর কোনওরকম লেনদেন করা যাবে না। তবে এখনও ওই নোট থাকলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (Reserve Bank) শাখায় জমা করা যাবে। বিরোধীদের প্রশ্ন, ঘটা করে যখন ২০০০ টাকার নোট চালু করা হল, তাহলে বাতিল করতে হল কেন? বাতিলই যদি করা হবে, তাহলে চালু হয়েছিল কেন?

97.26 per cent of Rs 2000 notes returned, denomination continues to be legal tender, says RBI
ছবি: প্রতীকী

৯। আদিপুরুষ: চলতি বছরের ‘ফ্লপ’ ছবির তালিকায় প্রথম সারিতে নাম রয়েছে দক্ষিণী অভিনেতা প্রভাসের ‘আদিপুরুষ’-এর নাম। ৭০০ কোটি টাকা বাজেটে তৈরি এই ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়়ে। দক্ষিণী ছবির ইতিহাসে চলতি বছরের সবচেয়ে ব্যর্থ ছবি আদিপুরুষ (Adipurush)। তবে সেকারণে এই তালিকায় আদিপুরুষের নাম রাখা হচ্ছে না। আদিপুরুষের নাম থাকছে এই ছবিটিকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তার জন্য। ওম রাউতের পরিচালনায় এই ছবি হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। ছবিমুক্তির আগে দুর্বল সিজিআই-এর ব্যবহার, পৌরাণিক চরিত্রের বেশভূষা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তবে ছবি মুক্তির পর যেন তা চরম আকার ধারণ করে। অভিযোগ, হনুমান-সহ রামায়ণের পৌরাণিক চরিত্রের মুখে যে সংলাপ বসানো হয়েছে তা নাকি অত্যন্ত নিম্নমানের এবং কুরুচিপূর্ণ। রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। পরে ক্ষমা চান ছবিটির সংলাপের লেখক মনোজ মুন্তাসির। আদিপুরুষের সঙ্গে বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল আরও একটি ছবি-‘দ্য কেরালা স্টোরি’। এই ছবিটির ব্যবসা সফল। কিন্তু এতে যেভাবে হিংসা এবং সাম্প্রদায়িকতা দেখানো হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহলে। এই দুই ছবিই এ বছর ছিল খবরের শিরোনামে।

Look Back 2023: Controversial figures of India throughout the year
আদিপুরুষ পোস্টার। ছবি- সোশাল মিডিয়া।

১০। কারার ওই লৌহকপাট: বিনোদন জগতে বছরটা যে বিতর্ক দিয়ে শেষ হল সেটা সম্ভবত এড়ানো যেত। নজরুলের ‘কারার ওই লৌহ কপাটে’র সুর বিকৃত করে শিরোনামে চলে এলেন এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা সুরকার এ আর রহমান। শৈল্পিক স্বাধীনতার নামে ওই গানটিতে এমন সুর দেওয়া হয়েছে, যাতে গানটির মূল ভাবই যেন প্রস্ফুটিত হচ্ছে না। ‘পিপ্পা’ নামের এক ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে নজরুলের (Nazrul Islam) গানটি। ওমন মিনমিনে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ মানতে পারেনি বাঙালি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রহমান গোটা দেশের মতো বাংলাতেও প্রবল জনপ্রিয়। সেই ‘রোজা’ থেকেই তাঁর সুরের জাদু বঙ্গদেশেও একই রকম ভাবে ছড়িয়ে গিয়েছে। সেই মানুষটিই এমন ভাবে নজরুলের গানকে বিকৃত করায় অসন্তুষ্টি, ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাঙালি সমাজে। যে রহমান (A R Rahman) ‘বন্দে মাতরম’ কিংবা ‘জয় হো’ সৃষ্টি করেছেন, রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্ত যথা ভয় শূন্য’ কবিতায় সুর দিয়েছেন, তিনি কেন নজরুলের গানটির স্পিরিট বুঝতে পারলেন না প্রশ্ন উঠছে।

AR Rahman trolled anchor who addressed the film's hero Ehan Bhat in Hindi in Chennai
এ আর রহমান। ছবি- সংগৃহীত।

১১। এলন মাস্ক: এলন মাস্কের (Elon Musk) টুইটার অধিগ্রহণ। চলতি বছর তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে বড় বিতর্ক। বছরভর টানাপোড়েনের পর অক্টোবরের ২৭ তারিখে টুইটার অধিগ্রহণ করেছেন মাস্ক। তার আগে থেকেই অবশ্য এ নিয়ে মাসের পর মাস টুইটার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে তাঁর। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি টুইটার অধিগ্রহণের পরিকল্পনায় প্রথম পা ফেলেছিলেন মাস্ক। সেই মাস থেকে টুইটারের শেয়ার কেনা শুরু করেন। মার্চের মধ্যে মাস্কের হাতে আসে ‘মাইক্রোব্লগিং সাইট’টির ৫ শতাংশ শেয়ার। তার পর এপ্রিলে মাস্ক ঘোষণা করেন, ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার খরচ করে টুইটার কিনতে চান তিনি। টুইটারের তৎকালীন সিইও পরাগ আগরওয়াল বহু চেষ্টা করেও টুইটার অধিগ্রহণ রুখতে পারেননি। মাস্ক টুইটার কিনেই পরাগকে বরখাস্ত করেন। শুরু হয় বিতর্ক। যা বাড়তে থাকে মাস্কের একের পর এক পদক্ষেপে। টুইটার থেকে সেলিব্রিটিদের ‘ব্লু টিক’ তুলে দেওয়া, টাকার বদলে ‘ব্লু টিক’ চালু করা, টুইট সংখ্যা বেঁধে দেওয়া, টাকার বদলে ফলোয়ার বাড়ানো, টুইটারের লোগো বদল এবং সবশেষে টুইটারের নাম বদলে এক্স করে দেওয়া, একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে গিয়েছেন। যা বছরভর শিরোনামে থেকেছে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement