ছবি: প্রতীকী
সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়: সূচকে আমরা ঐতিহাসিক উচ্চতা পেলাম গত বৃহস্পতিবার। এরপর মৃদু মুনাফা তোলার পালা এবং বাজার বন্ধ হল কিছুটা নিচে। তাতে কিছু যায় আসে না। এরকম চলতেই থাকে। নতুন উচ্ছ্বাস, তারপর একটু ঠান্ডা হওয়া। সূচকের নতুন যাত্রায় খুব অল্প সংখ্যক শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সবই বড় বড় কোম্পানি। সাধারণ মানুষ যেসব জায়গায় লগ্নি করে বসে আছেন, সেগুলোর দাম সেই একই জায়গায়। মনে হয় ভোটের পর এইসব শেয়ারের দামে একটা গতি আসবে। অপেক্ষা করতে হবে ততক্ষণ। আবার এটাও ঠিক কথা যে এই মুহূর্তে শেয়ার বাজার বেশ একটা সংশোধনের মুখে পড়তে পারে। টেকনিক্যালি সেরকম মনে হচ্ছে। গত দু’তিন সপ্তাহ ধরেই মনে হচ্ছে। কিন্তু বাজারে সেরকম সংশোধন চোখে পড়ছে না। এই ভাবে সেদিন সত্যি পালে বাঘ পড়বে, সেদিন হয়তো ওঠার সময় দেবে না। সেই জন্য সাবধানতা অবলম্বন করাই হয়তো বুদ্ধিমানের কাজ। যাঁরা অপেক্ষা করবেন, হয়তো পছন্দের শেয়ার সস্তায় পেয়ে যাবেন আগামিদিনে। তখন লগ্নি করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
[তৃতীয় দফার আগে ফের পুলিশে রদবদল, থানা থেকে ৭ অফিসারকে বদলি কমিশনের]
এখন বাজার প্রধানত পরিচালিত হচ্ছে বিদেশি লগ্নিকারীদের টাকায়। তারা সাধারণভাবে বড় কোম্পানির শেয়ারেই লগ্নি করে থাকে। তাদের লগ্নির প্রেক্ষিতেই সূচকে এই উচ্ছ্বাস। সুতরাং আপনাদের যদি এই বাজারে টাকা করতে হয়, তাহলে বিদেশি লগ্নিকারীদের পছন্দের শেয়ারেই লগ্নি করতে হবে। যেমন আইসিআইসিআই ব্যাংক। দাম উঁচু বলে যদি লগ্নি না করেন, তাহলে দেখবেন দাম আরও উঁচু হয়ে যাচ্ছে। আবার যদি বাজার সংশোধনের মুখে পড়ে, তাহলে এই শেয়ারই কিছুটা সস্তায় পেয়ে যাবেন। তখন লগ্নি করা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন দামে? এর উত্তর নেই। উত্তর একটাই। এই শেয়ারে লগ্নি করতে হবে কারণ বিদেশি লগ্নি এখানে আছে।
নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠছে, তাদের লগ্নি কি ভুল হতে পারে না? কে বলছে সে ভুল হতে পারে না? হতেই পারে। কিন্তু কাউকে ভরসা করে তো লগ্নি করতে হবে। বিদেশিরা টাকা লাগাচ্ছে। কিছু বুঝেই তো লাগাচ্ছে। সুতরাং চিন্তার কী আছে! নেই বলেই অনুসরণ করাটাই কাম্য। এবার দামের দিকটা দেখুন। এই শেয়ারে বিদেশি লগ্নিকারীরা গত ফেব্রুয়ারি থেকে লগ্নি শুরু করে। ফেব্রুয়ারিতে শেয়ারের দাম ছিল ৩৪০। এখন দাম ৪০৫-৪১০। সুতরাং দাম তিন মাসে ৬০-৭০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে সংশোধন হলে ৩৮০-৩৮৫ অবধি বারে বারে আসছে। সুতরাং কেনার জনে্য খারাপ হবে না যদি দাম আবার ওখানে আসে। ভোটের বাজারে যদি আতঙ্ক তৈরি হয়, তাহলে এরকম একটা দাম নিশ্চয়ই আসবে। কিন্তু ভোটের ফলে আতঙ্ক তো আপনার মনে বেশি চেপে বসবে। কিন্তু সেসব করতে গেলে হয়তো লগ্নি ফসকে যেতে পারে। সুতরাং সাহস দরকার বইকি। এ ছাড়াও হাতে টাকা রাখতে হবে। আর এক কিস্তি যদি ৩৩০-৩৪০ দাম আসে তাহলে কিনতে হবে।
অনেকেই সূচক নিয়ে উৎসাহী। তাই নিফটি সূচকে একটু নজর দেওয়া যাক। নিফটি যতক্ষণ ১১৭৭০-এর নিচে বন্ধ হচ্ছে, ততক্ষণ সংশোধনের সুযোগ আছে। তাতে ১১৫৫০ অবধি প্রথম পর্যায়ে চলে আসতে পারে। মানে ২০০ পয়েন্ট সংশোধন। তার পরেও যদি সংশোধন হয়, তাহলে ১১৩৩০ পর্যন্ত আসতে পারে। তার মানে আরও ২০০ পয়েন্ট। তার নিচের জায়গা হল ১০৯০০-১১০০০। এরকম সতি্যই কি হতে পারে? হতেই পারে। তবে যা হবে সব ঝটিকা সফর। নিচের দিকে সূচক টিকবে না। তড়িঘড়ি উপর দিকে চলে যাবে। এরকম হওয়ার কী কারণ হতে পারে? কেন্দ্রে ত্রিশঙ্কু সরকার হলে হতে পারে। আবার যদি কোনও একটি দল সরকার গঠন করে তাহলে এসব ঝামেলা থাকবে না। তখন বাজার চলবে বাজারের গতিতে। এসবের জন্য তৈরি থাকবেন।
ভোটের ফল এক মাস পরেই। সুতরাং বেশি সময় নেই। জেট এয়ারওয়েজ কোম্পানির অবস্থা বেহাল। উড়ান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শেয়ারের দাম এক দিনেই ২৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা হয়ে গিয়েছে। নতুন মালিক খেঁাজা হচ্ছে যারা কোম্পানিটা চালাতে পারবে। টাটারা একসময় ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল। তারপর নানা কারণে হয়নি। এখন নতুন ক্রেতা কে হতে পারে তা নিয়ে বাজার ভাবনা-চিন্তা করছে। অনেকের কাছেই এই শেয়ার কেনা আছে। তাঁরা কী করবেন? কিংফিশারের মতো হয়ে যাবে কি? উত্তর নেই। বিপদটা হল, অনেক লগ্নিকারীর মতো স্টেট ব্যাংকও এখন এদের শেয়ার নিয়ে বসে আছে। ব্যাংকের কী হবে? এই ব্যবসায় যে বিপদ আছে, সেটা সত্যি। সারা পৃথিবীতে এই ব্যবসায় বিপদ আছে। তেলের দাম বাড়লে এদের অবস্থা খারাপ হয়। আর তেলের দাম তো যখন তখন বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ভাড়া বাড়ালে সরকার হস্তক্ষেপ করে। এইভাবেই লোকসানে চলেছে এয়ার ইন্ডিয়া। ইন্ডিগো শুরু থেকে খরচে রাশ টেনেছিল বলে বেঁচে আছে ঠিকভাবে। শেয়ারের দাম তুঙ্গে। তবে তাতেও মনে করি না লগ্নিযোগ্য শেয়ার। এখন জেটের যদি কোনও নতুন মালিক পাওয়া যায়, তাহলে শেয়ারের দাম ১৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেতে পারে। আর যদি না পাওয়া যায়? কোনও আশার বাণী নেই কিন্তু।
[শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ৬ ভারতীয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করল দূতাবাস]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.