সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৯-এর দুঃস্বপ্ন কাটল ২০২৪-এ। কংগ্রেসের চিরকালের দুর্গ হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশে আমেঠি কেন্দ্রে ৫ বছর আগের ক্ষত কাটিয়ে উঠল কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই কেন্দ্রে ৪ লক্ষের বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস প্রার্থী কিশোরীলাল শর্মা। অন্যদিকে, প্রায় ২ লক্ষ ৯৪ হাজার ভোট পেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি। যা বিজেপির কাছে বিরাট ধাক্কা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে আমেঠি ও রায়বরেলি এই দুই কেন্দ্র গান্ধী পরিবারের গড় হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে রাহুলের কাছে ১ লক্ষের বেশি ভোটে পরাজিত হন স্মৃতি ইরানি। তবে গোটা দেশকে অবাক করে ২০১৯ সালে রাজীবপুত্রকে এখানে ধরাশায়ী করেন খোদ মোদির আশীর্বাদধন্য প্রার্থী স্মৃতি ইরানি। এই সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। তবে ৫ বছরেই পালাবদলের আভাস মিলল এই কেন্দ্রে। শেষ পাওয়া খবরে, এই কেন্দ্রে প্রায় ১ লক্ষ ২১ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন কিশোরীলাল শর্মা। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৪৫০। অন্যদিকে, এখনও পর্যন্ত স্মৃতি পেয়েছেন ২ লক্ষ ৯৪ হাজার ৫৮১ ভোট।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই কেন্দ্র বিজেপির হাত থেকে পুনরুদ্ধার করতে এবার চেষ্টার কোনও কসুর করেনি কংগ্রেস। যার প্রথম পদক্ষেপ হল এখানে কে এল শর্মাকে প্রার্থী করা। কারণ, সেই রাজীব গান্ধীর আমল থেকে এই কেন্দ্রকে হাতের তালুর মতো চেনেন কিশোরীলাল। শুধু তাই নয়, লাগাতার এখানে প্রচার চালিয়েছেন গান্ধী পরিবারের আর এক সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। একদিকে, সংবিধান রক্ষার বার্তার পাশাপাশি বারবার প্রচারে এসে তাঁরা তুলে ধরেছেন সেই ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকে আমেঠির অতীত ইতিহাস। রাজনৈতিক মহলের দাবি, একদিকে আমেঠির সহানুভুতির অঙ্ক। অন্যদিকে, দক্ষ ভোটকুশলী কিশোরীলালকে প্রার্থী করা। এই দুই চালেই বিজেপির দখল মুক্তির পথে আমেঠি কেন্দ্র।
অন্যদিকে স্মৃতির হারের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক মহলের অনুমান, সাংসদ হওয়ার পর আমেঠিতে প্রতিশ্রুতি পুরণে ব্যর্থ হন স্মৃতি ইরানি। জিতলে ৫০০ টাকার সিলিন্ডার, ১৩ টাকার চিনি-সহ আরও একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা তো পূরণ করেননি উলটে ভোটের আগে উগ্র হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করে মাঠে নামে গেরুয়া বাহিনী যা ভালোভাবে নেয়নি আমেঠির জনতা। পাশাপাশি আমেঠিতে কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তনের পিছনে উঠে আসছে আরও একটি কারণ। রাজনৈতিক মহলের দাবি, তা হল ‘মায়ার খেলা’। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল বিএসপি। যার জেরে দলিত ভোট ভাগ হয় এখানে। যার জেরে ৫০ হাজারের কিছু বেশি ভোটে হারতে হয়েছিল রাহুলকে। তবে ২০২৪ সালে এখানে বিএসপি প্রার্থী দিলেও। বিজেপির সংবিধান বদলের ‘আতঙ্ক’ দলিত ভোটকে নিজেদের হাতে রাখতে পারেনি মায়াবতী। ফলস্বরূপ একচেটিয়াভাবে এখানে কংগ্রেসের ঝুলিতে পড়ে দলিত ভোট। যার পরিণতি ‘গান্ধী গড়’ আমেঠিতে ‘স্মৃতি’ হলেন ইরানি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.