সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ‘ইন্ডিয়া’ জোটের স্বার্থে অসমে তৃণমূল কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে কোনও সমস্যা নেই কংগ্রেসের। প্রাথমিকভাবে এমন ইঙ্গিতই মিলল দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলের সদর দপ্তর থেকে।
সম্প্রতি কলকাতা গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করেছেন দলের অসম রাজ্য সভাপতি রিপুন বোরা। সেখানেই কার্যত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে যে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election) অসমে প্রার্থী দেবে তৃণমূল কংগ্রেস। জানা গিয়েছে, দুই থেকে পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিতে চাইছে তারা। অসম থেকে সে খবর এসে পৌঁছেছে দিল্লিতেও। প্রাথমিকভাবে কংগ্রেসের এই বিষয়ে কোনও আপত্তি নেই। তারা শুধু দেখতে চাইছে তৃণমূল (TMC) কটি আসন চাইছে।
মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলই দ্রুত আসন সমঝোতার দাবি তুলেছিল। যাদের মধ্যে সব থেকে বেশি সোচ্চার ছিল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), আম আদমি পার্টি (Aam Aadmy Party), শিব সেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র মতো দলগুলি। তাদের বক্তব্য, আসন সমঝোতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলে এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়া যাবে নির্বাচনী বৈতরণিতে। যদিও কংগ্রেস ‘ধীরে চলো’ নীতি নিতে চাইছে। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য, বছর শেষে হতে চলা পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে ভাল ফল করতে পারলে আসন সমঝোতার বৈঠকে বেশি করে দর কষাকষি করতে পারবে তারা।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার অভিষেক-রিপুন বৈঠককে বেশ গুরুত্ব দিয়েই দেখছে রাজনৈতিক মহল। নিজেদের রাজ্যের বাইরে গিয়ে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাওয়াকে কংগ্রেস কীভাবে নেবে, তা যে ‘ইন্ডিয়া’-র ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে বড় ভূমিকা নেবে, তেমনটাই বিশ্বাস বিশেষজ্ঞদের। প্রাথমিকভাবে অসম থেকে কংগ্রেসের এক সর্বভারতীয় নেতা এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, তৃণমূল যদি অসমে প্রার্থী দিতে চায়, তবে তাতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর, কোনওরকম শর্ত ছাড়াই গত বার কংগ্রেসের না জেতা দুই বা সর্বোচ্চ তিনটি আসন ছেড়ে দিতে মল্লিকার্জুন খাড়গে-রাহুল গান্ধীদের (Rahul Gandhi) কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু তৃণমূল যদি পাঁচটি আসন দাবি করে বসে, তখনই শুরু হবে দর কষাকষির পালা। কংগ্রেস মনে করছে, সন্তোষমোহন দেব-সুস্মিতা দেবদের শিলচর এবং অসম রাজ্য সভাপতির এলাকা তেজপুর আসন দাবি করতে পারে তৃণমূল।
১৯৯১ সালের আগে পর্যন্ত শিলচর ছিল কংগ্রেসের দখলে। ২০১৯ সালের আগে পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে তিনবার জিতেছেন সন্তোষমোহন দেব, তিনবার বিজেপির কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। ২০১৪ সালে শিলচর থেকে জেতেন সুস্মিতা দেব। যিনি বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসে। ‘প্রথা’ মেনে শেষ নির্বাচনে সাংসদ হন বিজেপির ডা. রাজদীপ রায়। কংগ্রেসের ধারণা, এই আসনটিই প্রথমে দাবি করতে পারে তৃণমূল। আসন পুনর্বিন্যাসের পর এই কেন্দ্রটি অবশ্য তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। আবার অসমের তৃণমূল প্রদেশ সভাপতি রিপুন বোরার এলাকা তেজপুরে ১৯৭৭ সালে জেতে জনতা পার্টি। ২০১৪ থেকে এই এলাকার রং গেরুয়া। তার আগে প্রতিবার এখান থেকে জিতেছেন কংগ্রেস প্রার্থী। নিজের এলাকায় দলের প্রার্থী দিতে চাইবেন রিপুন বোরা (Ripun Borah), এমনটাই মনে করছে কংগ্রেস। তাই যদি শিলচর ও তেজপুর, এই দুই কেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ থাকে তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে আপত্তি থাকবে না ২২, আকবর রোডের। যদিও অসম সূত্রের খবর, দারাং, লখিমপুর ও কোকরাঝাড় কেন্দ্রও দাবি করতে চলেছে তৃণমূল। সে ক্ষেত্রে অসমে তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের জোট কোন পথে এগোবে, সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.