শ্রমণ দে, গুয়াহাটি: ‘নর্থইস্ট ইজ সেন্ট্রেলি ইনক্লাইনড।’ রাজনীতির কারবারিরা মনে করেন দিল্লি যার দেশের উত্তরপূর্বও তারই! একথা সময় পরীক্ষিতও বটে। তবে এবারের লোকসভা ভোটে যেন ফুটে উঠল অন্য এক ছবি। ট্রেন্ড বলছে, মোদিতে মুখ ফিরিয়েছে মণিপুর। অসম মান রাখলেও উত্তরপূর্বে ধাক্কা খেয়েছে হিমন্ত মডেল।
প্রায় দেড় মাস ধরে চলা নির্বাচনের পর ফলপ্রকাশ হয়েছে আজ মঙ্গলবার। ট্রেন্ড বলছে, জাতি সংঘাতে দীর্ণ মণিপুরের দুটি আসনেই শেষ হাসি হাসতে চলেছে কংগ্রেস। মেঘালয়ের দুটি সিটের মধ্যে তুরা আসনে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী সালেং এ সাংমা। পরাজিত এনপিপি দলের প্রার্থী তথা রাজ্যের শাসকদলের বিদায়ী সাংসদ আগাথা সাংমা। নাগাল্যান্ডের একমাত্র আসনেও জয়ী কংগ্রেস। সেখানে জয় পেয়েছেন হাত শিবিরের প্রার্থী সুপংমেরেং জামির। মিজোরামের একমাত্র সিট দখল করতে চলেছে সদ্য ভূমিষ্ঠ আঞ্চলিক দল ‘জোরাম পিপল’স মুভমেন্ট’। তবে অরুণাচল প্রদেশে দুটি আসনেই জয়ী বিজেপি। ত্রিপুরাতেও তাই। অসমের ১৪টির মধ্যে ৮ আসনে এগিয়ে পদ্মশিবির। ৩টিতে পাল্লা ভারী কংগ্রেসের। জোরহাট আসনে অবস্থান মজবুত গৌরব গগৈয়ের। ধুবরিতে এগিয়ে রুকিবুল হোসেন। নগাঁওয়ে জয়ের পথে প্রদ্যোৎ বরদলৈ। অন্যদিকে, একটি করে আসনে এগিয়ে এনডিএ শরিক ইউপিপিএল ও অসম গণ পরিষদ। সবমিলিয়ে, উত্তর-পূর্ব ভারতের ২৪টি আসনের মধ্যে অভাবনীয় ভাবে কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ৭টিতে। এই ট্রেন্ড বজায় থাকলে হাত শিবিরের হৃত মনোবল যে অনেকটাই ফিরবে তা বলাই বাহুল্য।
এখানেই উঠছে প্রশ্ন। উত্তর-পূর্বের ২৪টি আসনের মধ্যে ২২টিতেই গেরুয়া ঝড়ের দাবি করেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ‘সেভেন সিস্টারে’ বিজেপির চাণক্য হিসেবে যাঁর খ্যাতি তুঙ্গে। অনেকেই বলেন একাহাতে অসম-সহ সংলগ্ন রাজ্যগুলো থেকে কংগ্রেসকে নাকি মুছে দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে ‘নেডা’ বা নর্থইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স গড়ে জনজাতি অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে গেরুয়া ছাপ ফেলেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস। তাহলে এমন কী হল যে এবারে ধাক্কা খেল সেই ‘হিমন্ত মডেল’?
ভোট বিশ্লেষকদের মতে, মেতেই-কুকি সংঘাতে মণিপুরে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। রাজ্যের শাসকদলের প্রতি বিরূপ হয়েছে মেতেই জনগোষ্ঠী। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগে বারবার সরব হয়েছে তারা। তাৎপর্যপুর্ণ ভাবে, মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই মেতেইরাই। এতদিন এরাই ছিল পদ্ম ব্রিগেডের মূল ভোটব্যাঙ্ক। আর পাহাড়ের কুকি-জো’রা ঢেলে ভোট দিয়েছে কংগ্রেসকে। অসমে মুসলিম ভোট এককাট্টা হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেসের যার সবথেকে বড় প্রমাণ হচ্ছে ধুবরী আসনে দাপুটে এআইইউডিএফ প্রধান তথা বিদায়ী সাংসদ বদরুদ্দিন আজমলের পিছিয়ে পড়া। জোরহাট আসনেও মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর। সেখানে সংখ্যাগুরুদের মধ্যেও কংগ্রেসের প্রভাব লক্ষণীয়। নগাঁও আসনেও মুসলিম ভোট বড় ফ্যাক্টর। তাই নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের মন পেতে সচেষ্ট হতে দেখা যায় হিমন্তকে। অর্থাৎ, বিজেপির ধর্মের তাসে ফায়দা তুলেছে কংগ্রেসই। সবমিলিয়ে, এবার উত্তরপূর্বের গলায় যেন মিথ ভাঙার সুর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.