সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরিবারবাদ নিয়ে যতই বিতর্ক থাক না কেন, রাজনীতিবিদ বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ ভারতীয় রাজনীতির অতি চেনা ছবি। কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপিও এই তালিকায় যথেষ্ট এগিয়ে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও অব্যাহত রইল সেই ছবি। দেশব্যাপী নির্বাচনে ভোটের ময়দানে নামতে দেখা গেল একাধিক তাবড় নেতাদের সন্তানদের। এই তালিকায় কেউ একেবারে নবাগত তো কেউ আবার বাবার দেখানো পথে জমি শক্ত করে নামলেন ভোটের ময়দানে। কেউ সফল হলেন, তো কেউ আবার ব্যর্থ।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক এবারের লোকসভা নির্বাচনে দাগ কাটা এক ঝাঁক তরুন নেতা-নেত্রীদের।
বাঁশুরি স্বরাজ: প্রয়াত বিজেপি নেত্রী তথা প্রাক্তন বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের (Sushma Swaraj) কন্যা বাঁশুরি স্বরাজ (Bansuri Swaraj)। নয়াদিল্লি লোকসভা (New Delhi Lok Sabha Constituency) আসন থেকে তাঁকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এই আসন থেকে দু’বারের সাংসদ ও বর্ষীয়ান নেতা মীনাক্ষী লেখিকে সরিয়ে প্রার্থী করা হয় নবাগত বাঁশুরিকে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee) থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণী (Lal Krishna Advani) এই আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেছেন বহুবার। বাড়তি চাপ ছিল বাঁশুরির উপরে। তবে নেতৃত্বকে নিরাশ করেননি তিনি। প্রথম লড়াইয়েই ৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন সুষমা কন্যা। শতাংশের হিসাব করলে ৫৩.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আম আদমি পার্টির সোমনাথ ভারতীর থেকে ৬০ হাজার ৩৭০ ভোটে জয়ী হয়েছেন বাঁশুরি। নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা গঠন করলে সেখানে তাঁর ঠাঁই হয় কিনা এখন সেটাই দেখার।
গৌরব গগৈ: অসমের জোড়হাট লোকসভা আসন (Jorhat Lok Sabha constituency) থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর পুত্র গৌরব গগৈ (Gaurav Gogoi)। তবে পিতার পরিচয় থেকে বেরিয়ে নিজের আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছেন গৈরব। এটা তাঁর প্রথম লড়াই নয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। বিদায়ী আইনসভার সদস্যও ছিলেন। লোকসভায় কংগ্রেসের উপ দলনেতা হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন। তরুণ এই নেতা ৭ লক্ষ ৫১ হাজার ৭৭১ ভোট পেয়েছেন। প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির তপন কুমার গগৈয়ের থেকে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৩৯৩ বেশি ভোট পেয়ে ফের দিল্লির সংসদ ভবনে পা রাখবেন তিনি।
অনুরাগ ঠাকুর: হিমাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেম কুমার ধুমালের পুত্র তিনি। তবে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন অনুরাগ ঠাকুর (Anurag Thakur)। দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। বিদায়ী মন্ত্রিসভার তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন। এবারও হিমাচল প্রদেশের হেমিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়ে সহজেই জয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। ৬ লক্ষ ৭৬৮ টি ভোট পেয়েছেন অনুরাগ। কংগ্রেস প্রার্থী সৎপাল সিংয়ের থেকে ১ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৫৭ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন অনুরাগ ঠাকুর।
কার্তি চিদম্বরম: প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরমের (P. Chidambaram) পুত্র কার্তি চিদম্বরম। তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা (Sivaganga Lok Sabha) লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেছেন তিনি। তবে রাজনীতিতে তাঁর পদচারণ এই প্রথম নয় ২০১৯ সালের নির্বাচনেও তিনি এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন। ৪ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৭৭ ভোট পেয়েছেন কার্তি। তাঁর জয়ের ব্যবধান দুই লক্ষেরও বেশি।
মিসা ভারতী: বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের কন্যা মিসা (Misa Bharti)। রাজনীতির ময়দানে তিনি নতুন না হলেও, এই লোকসভা নির্বাচনে পাটলিপুত্র লোকসভা (Pataliputra Lok Sabha) আসন থেকে প্রথমবার জয় পেয়েছেন। এর আগে ২০১৪ ও ১৯ সালে একই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও হারের মুখ দেখতে হয়েছিল লালু তনয়াকে। পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচন হারা বিজেপির রামকৃপাল যাদবকে হারিয়েছেন তিনি। ৮৫ হাজার ১৭৪ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন মিসা।
প্রজ্বল রেভান্না: নির্বাচনের মাঝেই যৌন নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগে দেশজুড়ে বিতর্কের মুখ হয়ে ওঠেন জেডিএস প্রার্থী প্রজ্বল রেভান্না (Prajwal Revanna)। তিনি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার নাতি (H. D. Deve Gowda)। কর্নাটকের হাসান লোকসভা থেকে ৪২ হাজার ৬৪৯ ভোটে হেরেছেন তিনি। জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের শ্রেয়স পটেল।
নকুল নাথ: মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের পুত্র নকুল। ছিন্দওয়াড়া (Chhindwara lok Sabha) আসন থেকে ২০১৯ সালে সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। তবে এইবারের নির্বাচনে অত্যন্ত খারাপভাবে হেরেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পুত্র। বিজেপির প্রার্থী বিবেক বান্টি সাহুর থেকে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৬১৮ ভোটে কম পেয়েছেন তিনি।
সৌমেন্দু অধিকারী: বর্ষীয়ান নেতা শিশির অধিকারীর পুত্র সৌমেন্দু অধিকার (Soumendu Adhikari)। তাঁর দাদা শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিরোধী দলনেতা। পশ্চিমবঙ্গের কাঁথি লোকসভা (Contai lok Sabha) আসন থেকে লড়াই করেছিলেন সৌমেন্দু। ৪৭ হাজার ৭৫৪ ভোটে তৃণমূলের উত্তম বারিককে হারিয়েছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.