সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চেষ্টা কম হয়নি। রণকৌশলও বহুরকমভাবে সাজানো হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণে বিজয় কেতন ওড়াতে আরও অপেক্ষা করতে হবে বিজেপিকে। অন্তত বিকাল পর্যন্ত যা ফলাফল তাতে বিন্ধ্য পর্বতের ওপার নিয়ে বিশেষ বুক বাজানোর জায়গায় নেই গেরুয়া শিবির। বিশেষ করে কর্নাটক, তামিলনাড়ুতে প্রধানমন্ত্রী যে পরিমাণ পরিশ্রম করলেন, সেটার ফল পেলেন কই!
দাক্ষিণাত্যের ‘দ্রাবিড় অস্মিতা ‘হিন্দি পার্টি’ বিজেপি এ পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারেনি। ফলে দক্ষিণ ভারতে এ পর্যন্ত পদ্ম ফোটানো সম্ভব হয়নি। তাই এবার বছর খানেক আগে থেকেই দাক্ষিণাত্য জয়ের ছক শুরু হয়। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের মঞ্চে তামিলনাড়ু থেকে সেঙ্গল এনে প্রতিষ্ঠা করা থেকে শুরু করে, তামিল পুরোহিতদের দিয়ে যজ্ঞ করানো। রামমন্দিরেও একইভাবে দক্ষিণ ভারতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রামলালার যে মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটাও দক্ষিণী আদলে তৈরি। ধর্মীয় আবেগ শুধু নয়, প্রচারেও দক্ষিণে বাড়তি নজর দিয়েছিলেন মোদি। বাংলার পর সবচেয়ে বেশি সভা করেছিলেন তামিলনাড়ুতে। কেরল, তেলেঙ্গানাতেও বিরাট বিরাট সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রচুর টাকাপয়সা খরচ করা হয়। অন্যান্য রাজ্যে সফল নেতাদের ডেকে দক্ষিণে প্রচারে পাঠানো হয়।
কিন্তু ফলাফল বলছে, তামিলনাড়ুর কোনও আসনে জিততে পারেনি বিজেপি (BJP)। ভোট শতাংশ খানিক বেড়েছে বটে, তবে সেটাও প্রত্যাশিত নয়। এতদিন তামিলনাড়ুতে বিজেপি লড়ত ৫-৬টি আসনে। এবার তাঁরা লড়ছে অর্ধেকের বেশি আসনে। সুতরাং ভোট শতাংশ বাড়াটাই স্বাভাবিক ছিল। সেই হারে বেড়েছে। হয়তো সামান্য বেড়েছে, সেটাও অবশ্য ডিএমকে-কংগ্রেস (Congress) জোটের ভোট কেটে নয়। বিজেপিরই প্রাক্তন জোটসঙ্গী এআইএডিমকের ভোট কেটে। বিজেপির আরও একটি যে রাজ্যে আশা ছিল, সেটা কেরল। সেখানেও আশানুরূপ ফল হল না বিজেপির। ভোটের আগে গেরুয়া শিবির দাবি করেছিল, অন্তত ২০ শতাংশ ভোট এবং ৩-৪টি আসন তারা জিতবে। কিন্তু বাস্তব বলছে, কেরলে বিজেপির ঝুলিতে এসেছে ১টি আসন। কিঞ্চিত ভোটের হার বেড়ে ১৬ শতাংশ হয়েছে। আপাতত সেটাতেই সান্ত্বনা খুঁজছে গেরুয়া শিবির।
তুলনায় দক্ষিণের আরও দুই রাজ্যে ভালো ফল করেছে বিজেপি। অন্ধ্রে ভোটের আগে টিডিপির হাত ধরেছিল গেরুয়া শিবির। নিজেদের বিশেষ শক্তি না থাকলেও টিডিপির ঘাড় ধরে ভোট বৈতরণী পার করার ছক কষেছিলেন অমিত শাহ (Amit Shah)। সেই ছক সুফল দিয়েছে। অন্ধ্রে ২৫ আসনের মধ্যে এনডিএ শিবিরে ২১। এর মধ্যে টিডিপির ১৬, বিজেপির ৩, এবং জনসেনার ২। সার্বিকভাবে এনডিএ যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল, সেটার নেপথ্যে বড় অবদান এই অন্ধ্রের কৌশলী জোটের। দক্ষিণের আরেক রাজ্যে ভালো ফল করেছে বিজেপি। সেটা তেলেঙ্গানা। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে এবার সমানে সমানে লড়েছে গেরুয়া শিবির। দুদলেরই আসনসংখ্যা ৮। রাজ্য রাজনীতি থেকে কার্যত উধাও ভারত রাষ্ট্র সমিতি।
বস্তুত, দক্ষিণের ফলে কোথাও কোথাও সামান্য স্বস্তি পেলেও বিজেপির প্রত্যাশা কোনওভাবেই পূরণ হয়নি। অন্তত যতটা মরিয়া হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) চেষ্টা করেছিলেন, ততটা ভালো ফল হল না বিজেপির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.