Advertisement
Advertisement

Breaking News

Lok Sabha 2024

কেরলে রাম-বাম সেটিং! বাড়বে বিজেপি? ভোট কাটাকাটির অঙ্কে সুবিধা কার?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘন ঘন যাচ্ছেন মালাবার উপকূলে। কম করেও তিনটি থেকে পাঁচটি আসন নাকি টার্গেট গেরুয়া ব্রিগেডের।

Lok Sabha 2024: The mood of Kerala this Lok Sabha election
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 24, 2024 9:09 pm
  • Updated:April 24, 2024 9:09 pm  

শংকর ভট্টাচার্য: সেটিং তত্ত্ব। এই বাংলায় আমরা কথাটা শুনে শুনে অভ‌্যস্ত হয়ে গিয়েছি। অন্তত গত কয়েক বছরে। কিন্তু প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে সূদূর কেরলেও এই কথা শুনে অবাক হতে হয়। আমাদের রাজ‌্য সিপিএম বলে তৃণমূলের সঙ্গে নাকি বিজেপির সেটিং। আবার কেরলের রাজনৈতিক আকাশে-বাতাসে ঘুরছে অন‌্য সেটিং। দক্ষিণী সেটিং হয়েছে বিজেপির সঙ্গে সিপিএমের, বলছে কংগ্রেস। এই কথা প্রতিটি প্রচার সভায় বলছেন ওয়ানাড়ের কংগ্রেস প্রার্থী রাহুল গান্ধী স্বয়ং। ব‌্যাখ‌্যাও দিচ্ছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা। সরল অঙ্ক। বিজেপি কংগ্রেসের ভোট কাটবে। ফলে লাভ হবে সিপিএম-সহ বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বা এলডিএফের (LDF)। আর তাই নাকি একের পর এক দুর্নীতি মামলায় বেঁচে যাচ্ছেন সিপিএমের (CPIM) কেষ্ট-বিষ্টু নেতারা। সোনা পাচার কেলেঙ্কারিতে নাম উঠেছিল মুখ‌্যমন্ত্রী বিজয়নের। তাঁর মেয়ে বীণা আবার ফেঁসেছেন তথ‌্য-প্রযুক্তি সংস্থার দুর্নীতিতে। এমন করে সমবায় ব‌্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি বা অন‌্যান‌্য বহু কাণ্ডে কেরলের সিপিএম নেতাদের ধরা হচ্ছে না। কিন্তু দেশের দুই বিরোধী মুখ‌্যমন্ত্রী জেলে। এই আবহেই কিন্তু এবারের প্রচার জমে উঠেছে কেরলে।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ একতরফা জিতে গিয়েছিল। মোট ২০টির মধ্যে ১৯টিতে হাতের জয়। এবার কি সেই ধারা বজায় থাকবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত বারে কংগ্রেস চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছিল। তা একবারই হয়। পাঁচ বছর আগে মূল ফ‌্যক্টর ছিল সবরীমালা কাণ্ড আর রাহুলের প্রথম বার ওয়ানাড়ে প্রার্থী হওয়া। মনে করা হয়েছিল রাহুল জয়ী হয়ে হবেন প্রধানমন্ত্রী। এবার কিন্তু সারা ভারতে কংগ্রেসের সেই হাওয়া নেই। রাহুলের ঝড়ও উঠছে না কেরলে। আবার সবরীমালার মতো হাতে গরম ইস্যু নেই হাতের কাছে। ফলে কংগ্রেসের আসন কমার সম্ভাবনাই বেশি।কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই আসন কোন দিকে যাবে। এবার কি বিজেপি খাতা খুলতে পারবে দক্ষিণী এই রাজ্যে?

Advertisement

[আরও পড়ুন: ইভিএম-ভিভিপ্যাট ১০০ শতাংশ মিলিয়ে দেখার দাবি, কমিশনের থেকে ব্যাখ্যা চাইল সুপ্রিম কোর্ট]

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ঘন ঘন যাচ্ছেন মালাবার উপকূলে। কম করেও তিনটি থেকে পাঁচটি আসন নাকি টার্গেট গেরুয়া ব্রিগেডের। কিন্তু কোথায়? এবার তিরুঅনন্তপুরম, ত্রিচূড়, আলাপ্পুঝায় নাকি গেরুয়া শিবির জেতার মতো জায়গায়। ভডক্কারা বা কান্নুরেও নাকি লড়াইয়ে আছেন মোদি ব্রিগেড। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই আসনের বেশিরভাগই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। আর বিজেপি ভোট কাটতে শুরু করলে লাভের গুর খেয়ে যাবে বামেরা। যেমন তিরুঅনন্তপুরম। রাজ্যের রাজধানীর এই আসনে পর পর জিতে আসছেন শশী থারুর। তাঁর বিরুদ্ধে এবার বিজেপির রাজীব চন্দ্রশেখর শক্ত প্রার্থী। আছেন সিপিআইয়ের বর্ষীয়ান নেতা পন্নিয়ান রবীন্দ্রন। প্রচারে ধারে ভারে কিন্তু পিছিয়ে নেই মিডিয়া মোগল রাজীব। আলাপ্পুঝায় কংগ্রেসের কে সি বেনুগোপাল প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির হেভিওয়েট নেতা শোভা সুরেন্দ্রন। তিনি প্রচুর ভোট কাটবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এই কাটাকাটির জেরে শেষ হাসি যদি বিদায়ী সাংসদ এ এম আরিফ হাসেন, আবাক হওয়ার কিছু নেই। উত্তর কেরলের ভডাক্কারা আসনটি নিয়মিত খুন খারাবির জন‌্য শিরোনামে আসে। রাজনৈতিক হত‌্যাকাণ্ড। ২০১২ সালে তরুণ বাম নেতা সিপিএম ত‌্যাগী টিপি চন্দ্রশেখরন খুন হয়েছিলেন। তাঁর দল সিপিআরএম এখন ইউডিএফে। এখানে সিপিএমের প্রার্থী কে কে শৈলজা। তিনি শৈলজা টিচার নামে বেশি পরিচিত। করোনার সময়ে স্বাস্থ‌্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর কাজ বিশ্বব‌্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু মুখ‌্যমন্ত্রী বিজয়নকে ছাপিয়ে তাঁর নাম সামনে আসায় গোঁসা হয় মুখ‌্যমন্ত্রীর। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি আর টিকিট পাননি। নয়া স্বাস্থ‌্যমন্ত্রী আসে কেরলে। তাঁকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে ভডাক্কারায়। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিধায়ক সফি পারাম্বিল প্রার্থী। ত্রিচূড়ে বিজেপির প্রার্থী বিখ‌্যাত মালায়লী অভিনেতা সুরেশ গোপী। তিনি এবার ভালো ভোট পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই অবস্থায় আনন্দে লাফাচ্ছেন বামেরা।

আসলে কেরলে (Kerala) চিরকালই মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ ভোটের হেরফেরে জয় পরাজয়ের নিস্পত্তি হয়। কিন্তু গত নির্বাচনে বিজেপি প্রায় ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেই ধারা বজায় থাকলে লাল কেরল আবার লালে লাল হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এখানে কিন্তু ধর্ম আর জাতপাতের অঙ্ক খুব জটিল। ভারতে সব থেকে বেশি আরএসএসের শাখা কোন রাজ্যে? এই কেরলেই। পাঁচ হাজার শাখা। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী সেই ভোট যায় কোথায়? সহজ উত্তর। বামের ঘরে। অর্থাৎ এখানে সিপিএম রামের ভোট পায়। আর তাই কেরলে বহু ক্ষেত্রেই দেখেছি তুলসি মঞ্চে গোঁজা আছে লালঝান্ডা। সিপিএমের যুব শাখা শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী, রাম নবমী বা স্বামীজির জয়ন্তী পালন করে।

[আরও পড়ুন: ভোটের মাঝে ৫ কোটি টাকা চেয়ে উদয়ন গুহকে চিঠি KLO’র, তুমুল চাঞ্চল্য]

মোট জনসংখ‌্যার মধ্যে মুসলিম ২৬ শতাংশ, ক্রিস্টান ১৮ শতাংশ। এই দুই ধর্মের ভোটের বেশি যায় কংগ্রেসের ঘরে। আবার বাকি হিন্দুদের মধ্যে আবার ১৪ শতাংশ নায়ার ভোট কংগ্রেসের বাধা। হিন্দু এজাভাদের ২৩ শতাংশ ভোটে অধিকাংশ আবার সিপিএমের ঘরে যায়। সব মিলিয়ে এই অঙ্ক এবার কোন দিকে যায়, সেটাই দেখার।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement