সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস এবং বামদলগুলির (Left front) আসন সমঝোতা চূড়ান্ত। কংগ্রেস নিজেদের দাবি মতো ৯ আসন পেয়েছে। ৫ আসনে লড়বে বাম দলগুলিও। লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি লড়বে ২৬ আসনে। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে এই জোটকে মসৃণ মনে হচ্ছে। তবে বাস্তবে এর অন্দরে বহু যদি, কিন্তু থেকে গিয়েছে। কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য, নিজের ছেলে তেজস্বী যাদবের সম্ভাব্য ‘পথের কাঁটা’দের সরিয়ে দিতে চাইছেন লালু। আর সেটা করতে গিয়ে বিহারে ইন্ডিয়া জোটের স্বার্থ উপেক্ষা করেছেন তিনি।
বিহারে এই মুহূর্তে বিজেপি বা এনডিএ বিরোধী সবচেয়ে বড় মুখ তেজস্বী যাদব (Tejaswi Yadav)। এতে কোনও সংশয় নয়। কিন্তু বিজেপি বিরোধী রাজনীতির এই পরিসরে আগামী দিনে ভাগ বসানোর মতো যদি কোনও নেতা বিহারে থেকে থাকেন, তাঁরা হলেন পাপ্পু যাদব (Pappu Yadav) এবং কানহাইয়া কুমার। পাপ্পু যাদব বিহারের সীমাঞ্চলের নেতা। ওই এলাকায় ভালো প্রভাব রয়েছে তাঁর। তেজস্বীর তুলনায় বয়সে অনেকটাই বড় পাপ্পুর প্রভাব রয়েছে মুসলমান ও যাদব ভোটারদের মধ্যে। আগামী দিনে কংগ্রেসে থেকে পাপ্পুর মধ্যে তেজস্বীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার কানহাইয়া কুমার বিহার তথা গোটা দেশের উদীয়মান তরুণ নেতা। গোটা বিহারে তেজস্বীর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন তিনিও। লালু আসন রফার মাধ্যমে এই দুই নেতারই ডানা ছেঁটে ফেললেন।
পাপ্পু যাদব যেমন বিহারের পূর্ণিয়া আসন থেকে লড়তে চেয়েছিলেন। এর আগে ওই কেন্দ্রে সাংসদ ছিলেন তিনি। ওই এলাকায় বেশ প্রভাব রয়েছে তাঁর। কিন্তু বহু দরাদরির পরও কংগ্রেসকে ওই আসনটি ছাড়েনি আরজেডি। বদলে ওই আসনে আরজেডির (RJD) টিকিটে লড়বেন বিমা ভারতী। রাজনৈতিক মহলের মত, জেডিইউ থেকে আরজেডিতে যোগ দেওয়া ওই নেত্রীর তুলনায় পাপ্পু যাদব প্রার্থী হিসাবে অনেক বেশি ওজনদার। এবং তিনি দাঁড়ালে জয়ের সম্ভাবনাও বাড়ত। কিন্তু কোনও যুক্তিই শোনেননি লালু। যদিও পাপ্পু দমার পাত্র নন। তিনিও ঘোষণা করে দিয়েছেন, পুর্নিয়া থেকেই লড়বেন এবং কংগ্রেসের টিকিটে লড়বেন। সেক্ষেত্রে ওই আসনটিতে ইন্ডিয়া (INDIA) জোটের দুই প্রার্থীর মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াই হতে পারে। তাতে ক্ষতি হবে দুই শিবিরেরই।
আবার কানহাইয়া কুমারের (Kanhaiya Kumar) ক্ষেত্রে লালু আরও কড়া মনোভাব নিয়েছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা পর্ব শুরু করার আগেই কানহাইয়া আগের বার যে আসনে লড়েছিলেন সেই বেগুসরাই আসনটি সিপিআই-কে দিয়ে দেন তিনি। কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের বহু অনুরোধ সত্ত্বেও ওই আসন কংগ্রেসকে ছাড়া হয়নি। ২০১৯ সালে বেগুসরাই কেন্দ্রে সিপিআইয়ের টিকিটে লড়ে কানহাইয়া দ্বিতীয় হয়েছিলেন। হেরেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের কাছে। সেবার ওই কেন্দ্রে আরজেডির প্রার্থী ছিলেন। তিনি তৃতীয় হন। এবার আরজেডি-কংগ্রেস এবং বামদলগুলির জোট প্রার্থী হিসাবে লড়লে ওই কেন্দ্রে ভালো সম্ভাবনা তৈরি হতে পারতে কানহাইয়ার। লালু সেটাও হতে দিলেন না। যদিও কানহাইয়া দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ওই কেন্দ্রটিতে লড়াই করার কথা ঘোষণা করেননি।
এখানেই শেষ নয়, বিহারে ইন্ডিয়া জোটের ছোট শরিক শক্তি বাড়িয়ে আগামী দিনে যাতে তেজস্বী যাদবের সঙ্গে দরাদরির জায়গায় না পৌঁছাতে পারে সেটাও নিশ্চিত করতে চাইছেন লালু। কারণ বিহারে কংগ্রেসকে তাদের পছন্দের অধিকাংশ আসনই দেওয়া হয়নি। বরং সেই সব আসন দেওয়া হয়েছে, তার অনেকগুলিতেই কংগ্রেসের সেভাবে প্রভাব নেই। বলা ভালো কংগ্রেসের শিবিরের আসনগুলিতে এনডিএ জোট অনেকটাই শক্তিশালী। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, কংগ্রেস আরজেডির কাছে চাইছিল পুর্ণিয়া, বেগুসরাই, মাধোপুর, ওরঙ্গাবাদ। এই আসনগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস লড়ছে এবং বহুবার জিতেওছে। বদলে কংগ্রেসকে দেওয়া হয়েছে সমস্তিপুর, পাটনা সাহিব, মহারাজগঞ্জের মতো আসন। যা কিনা এনডিএ-র শক্ত ঘাঁটি। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের সম্মানজনক আসন পাওয়ার সম্ভাবনাও সমূলে বিনাশ হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে লোকসভার আসনরফার ক্ষেত্রে লালু লোকসভার থেকে বেশি নজর দিয়েছেন বিধানসভা নির্বাচনের দিকে। তার চেয়েও বেশি নজর দিয়েছেন ছেলের ভবিষ্যতের দিকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.