শুভঙ্কর বসু: লকডাউন চলাকালীন মদ বিক্রি নিয়ে বিস্তর জল্পনা ছড়িয়েছে। দিন কয়েক আগেই মদের হোম ডেলিভারির খবরে প্রায় ঘুম ছুটেছিল পান পিপাসুদের। এমনকী মদ না পেয়ে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে দুজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে রাজ্যে। রাজ্যজুড়ে এ নিয়ে কালোবাজারি থেকে বোমাবাজিও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সুরা পিপাসুদের জন্য আরও খারাপ খবর। লকডাউনের দ্বিতীয় পর্বে এবার গোটা দেশে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করল কেন্দ্র। বুধবার এই মর্মে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। যেখানে সমস্ত রাজ্যকে মদ বিক্রির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবারই ৩ মে পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বের লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই পর্বে কী করণীয় আর কী নয় সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নির্দেশিকাও জারি করেছে। সেখানে এনেক্সার-১-এ বলা হয়েছে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের (২০০৫) ১০(২) নম্বর ধারা অনুযায়ী কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্ট ডাইরেক্টিভ হিসাবে সমস্ত রাজ্যকে মদ বিক্রির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বলা হচ্ছে।
কিন্তু দ্বিতীয়পর্বে হঠাৎ করে কেন এমন পদক্ষেপ?
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) ডাইরেক্টিভ অনুযায়ী, করোনা আবহে অ্যালকোহলের ন্যূনতম ব্যবহারও শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে নষ্ট করতে পারে। পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে মদ্যপান করলে আতঙ্ক, নৈরাশ্য, উদ্বেগ, হতাশা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যথেষ্ট ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া ঘরে বসে মদ্যপান করলে ঘরোয়া হিংসার সংখ্যা বাড়ার প্রবণতা বাড়বে বলেই মনে করছে কেন্দ্র সরকার। সে কারণেই রাজ্যগুলোকে মদ বিক্রির উপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রের এই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের চিকিৎসক মহলও। চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “এই পরিস্থিতিতে এটা একটি যথাযথ পদক্ষেপ। কারণ মদ্যপান করলে আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকে না। সেক্ষেত্রে ঘরোয়া হিংসার ঘটনা বৃদ্ধির সম্ভাবনার পাশাপাশি আইন ভাঙা ও নির্দেশিকা অমান্য করার প্রবণতাও বাড়তে পারে। তবে যাদের রোজ মদ্যপানের অভ্যাস রয়েছে তাদের উইথড্রয়াল সিম্পটম দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যজুড়ে অনলাইনে মদের হোম ডেলিভারি নিয়ে যেটুকু আশার সঞ্চার হয়েছিল বুধবারের এই নির্দেশিকার পর তাও বিশ বাঁও জলে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মদের হোম ডেলিভারি নিয়ে রাজ্য আবগারি আইনে এমনিতে কোনও সংস্থান নেই। ফলে এ নিয়ে আবগারি দপ্তরের তরফে কোনও নির্দেশিকা জারি করে তা চালু করাও সম্ভব নয়। তবে অফ শপ, অন শপ কিংবা বার মালিকদের যদি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে অনুমতি দেয় তবেই মদের হোম ডেলিভারি সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাসের কথায়, “ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এফএসএসএআই আইন ২০০৬ অনুযায়ী খাদ্যকে জরুরি সামগ্রী হিসাবে বলা হয়েছে। এবং বেশ কয়েক বছর আগে অ্যালকোহলকেও খাদ্য সামগ্রী হিসেবে ওই আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে আবগারি আইনে এর কোনও সংস্থান না থাকলেও প্রশাসন চাইলে এটা হতে পারে। তবে এদিনের নির্দেশিকার পর তা সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.