সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : মণিপুরের মাটিতে মধ্যপ্রদেশের ঝাঁসির রানির জন্মজয়ন্তী পালনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে বলেছিলেন – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতের পুতুল। আর এর জেরেই ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মণিপুরের একটি কেবল টিভি নেটওয়ার্কের সাংবাদিক ইম্ফলের বাসিন্দা কিশোরচন্দ্র ওয়াংখেমকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৮ সালের আগস্টেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সাম্প্রদায়িক ও আপত্তিকর পোস্টের জেরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কিশোরচন্দ্র। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কিশোরচন্দ্রের মতো মানুষ বিপজ্জনক বলে অভিযোগ উঠেছিল।
[৩-৪ দিনে হতে পারে পুলওয়ামার পুনরাবৃত্তি, গোয়েন্দা রিপোর্টে তুঙ্গে চাঞ্চল্য]
তার পরের ১০০ দিনে আমূল বদলে গেছে তাঁর স্ত্রী রঞ্জিতা এলাংবাম ও দুই শিশুকন্যার জীবন। ব্যক্তিগত জীবনের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশ ও বিশ্বের চারিদিকে কী ঘটে চলেছে, তা দেখতে শিখেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “শেষ ১০০টা দিন আমাকে বদলে দিয়েছে। এখন আমি সমাজে কী ঘটছে তার বিষয়ে আগের থেকে অনেক বেশি জানি। আগে শুধুমাত্র নিজের পরিবার ও সন্তানদের দিকে লক্ষ্য রাখতাম। কিন্তু, এখন মানুষের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে নজর রাখি। সেগুলো নিয়ে আইনজীবী ও সমাজকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করি।” তিনি যে সত্যি কথাই বলছেন সে প্রমাণ পাওয়া যাবে তাঁর ফেসবুক পেজটি দেখলেই। যেখানকার বেশিরভাগ পোস্টে তাঁর স্বামী যাতে ন্যায্য বিচার পান, তার দাবি জানানোর পাশাপাশি রাজ্যে ঘটে যাওয়া ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদের মতো বিষয়গুলো রয়েছে।
তিনমাসের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি বাবাকে তাঁর এক বছর ও পাঁচ বছরের দুই মেয়ে খুব মিস করছে বলেও জানান রঞ্জিতা। আক্ষেপের সুরে বলেন, “ছোটটা কোনও কিছু বোঝাতে পারে না। কিন্তু, বড় মেয়ে কেরা প্রায়ই বলে, কতদিন হয়ে গেছে, বাবা এখনও কেন ফিরছে না?”
[নীরব মোদির অট্টালিকা ডিনামাইট দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল মহারাষ্ট্র সরকার]
তবে যত বাধাবিপত্তিই আসুক স্বামীর মুক্তির জন্য তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ কোনও মন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতার শরণাপন্ন হননি বলেই জানান রঞ্জিতা। বলেন, “আমরা আইনি পথেই লড়াই করতে চাই। পিছনের দরজা দিয়ে কিছু করতে চাই না। এর আগে গত বছরের আগস্টে যখন ওঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তখন চিকিৎসার কারণে জামিন পেয়েছিল। পরে আমাদের ভুল বোঝানো হয়েছিল বলে আমরা আর মামলা করিনি। আর তার ফলেই তাঁর উপর ফের একই অপরাধ করার দায় চাপানো হচ্ছে।”
মণিপুরের ওই সাংবাদিক গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই জানুয়ারি মাসের দু তারিখ তাঁর পরিবারকে একটি চিঠি লেখেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধী। তাতে লেখা ছিল, “এই ঘটনা রাজ্যের মদতে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশে বাধা দেওয়ার ফের একটি চেষ্টা। গত কয়েক মাস ধরেই আমরা লক্ষ্য করছি মণিপুরের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে বিজেপি সরকার। এটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে ক্ষমতাশালীরা অন্যদের সঙ্গে ক্রমাগত অন্যায় করে চলেছে। কিন্তু, যখনই এবিষয়ে সরকারকে কেউ প্রশ্ন করছেন তখনই তাঁদের জেলে যেতে হচ্ছে।”
[অযোধ্যা মামলায় মধ্যস্থতার পক্ষে রায় সুপ্রিম কোর্টের]
এপ্রসঙ্গে গতকাল ওয়াংখেমের আইনজীবী চংথাম ভিক্টর জানান, “কিশোরচন্দ্রকে গ্রেপ্তারের ঘটনা বেআইনি বলে আদালতে আবেদন করেছিলাম। এমাসের চার তারিখে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এখনও রায় দিল না আদালত। আমি সপ্তাহ দুয়েক আগে কিশোরচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করেছি। উনি ঠিক আছেন। আমাদের সবার বিচার ব্যবস্থার উপরে সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।” এপ্রসঙ্গে মণিপুরের মুখ্য সচিব ডঃ জে সুরেশ বাবু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্টে মামলা চলছে। তাই কিছু বলব না। আইন নিজের পথেই চলবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.